জুড়ীতে মণিপুরী ঐতিহ্যে লালিত লোকনৃত্য থাবল চুম্বা অনুষ্ঠিত

April 2, 2024,

জুড়ী প্রতিনিধি॥ থাবাল চোংবা হল ভারতের মণিপুর রাজ্যের একটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। থাবল চুম্বা শব্দবন্ধের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “চাঁদের আলোতে নৃত্য। অংশগ্রহণকারী পুরুষ ও মহিলা সকলেই একসাথে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে পরস্পরের হাত ধরে এই নৃত্য করে। এটি একটি জনপ্রিয় মণিপুরী লোকনৃত্য যা ভারতের ইয়াওসাং উৎসবের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বসন্ত ঋতুতে পাঁচদিন যাবৎ থাবাল চোংবা নৃত্যের আয়োজন করা হয়। মেইতেই বর্ষপঞ্জির ‘লামদা’ মাসের পূর্ণিমার দিন থেকে আরম্ভ করে ইয়াওসাং উৎসবের সমান্তরালে থাবল চুম্বা অনুষ্ঠিত হয়।
‘থাবাল চোংবা’ উৎসব মণিপুরিদের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। তবে প্রথা রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবের মাধ্যমে নিজেদের জীবনসঙ্গী বেছে নেয় মণিপুরি তরুণ-তরুণীরা। সন্ধ্যা নামার পরপরই উন্মুক্ত একটি মাঠে জড়ো হতে থাকেন তারা। এরপর বাদ্যযন্ত্রে সুর তোলেন কয়েকজন তরুণ। আর সেই সুরের তালে মণিপুরিদের নিজস্ব পোশাক পরে হাতে হাত রেখে বিশেষ যুগল নৃত্য পরিবেশন করেন তরুণ-তরুণীরা। জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের ছোট ধামাই গ্রামে রবিবার ৩১ মার্চ রাতে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উৎসবটির আয়োজকরা জানান, এ উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা বিশেষ ধর্মীয় গানের নৃত্যের তালে তালে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে পরস্পরের হাত ধরে এই নৃত্য করে। সুনিপুণ নৃত্য নানা বয়সী মানুষকে মুগ্ধ করে তোলে। সন্ধ্যার শুরুতে ধর্মীয় গানের সুর শোনে মনের টানে মাঠে ছুটে আসেন মণিপুরি তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সের মানুষ। সবাই জড়ো হলেই শুরু হয় মূল আর্কষণ থাবাল চোংবা উৎসবের নৃত্য।
থাবাল চোংবা উৎসবের নৃত্যে অংশ নিয়ে জুড়ী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রনজিতা শর্মা বলেন, আমাদের ছোট ধামাই এলাকায় যুগ যুগ ধরেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও থাবাল চোংবার আয়োজন করা হয়। আজকের এ আয়োজনে শত শত মণিপুরি তরুণ-তরুণী অংশনেয়। জ্যোৎস্নালোকিত রাতে খোলা মাঠে প্যান্ডেল সাজিয়ে যুবক-যুবতী-নারী-পুরুষরা হাত ধরে অংশগ্রহণ করে এবং বৃত্ত তৈরির মাধ্যমে এই নৃত্যানুষ্ঠান করে। সাথে ঐতিহ্যবাহী নানা লোকসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
থাবাল চোংবা উৎসবের এ নৃত্যে ঢোল ও ব্যান্ডের তালে তালে আর গানের সুরে সুরে আন্দোলিত হয় পা আর সঙ্গীর হাতে ধরা দৃঢ়বদ্ধ হাত। প্রথমে শুরু হয় মৃদুলয়ে। কিন্তু ক্রমশ দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে তাল ও লয়। নৃত্যের তালে তালে এ মানবশৃঙ্খল কখনো রচনা করে বৃত্ত বা অর্ধবৃত্ত; আবার কখনো এঁকেবেঁকে চলতে থাকে সর্পিল গতিতে।
এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় থাবাল চোংবা নৃত্যের অনুষ্ঠান। এই নৃত্যানুষ্ঠান প্রধানত যুবক-যুবতীদের জন্য হলেও গ্রামের বয়স্ক প্রবীণ অভিভাবকেরাও এসে চারদিকে গোল করে বসে উপভোগ করেন ধর্মীয় ঐতিহ্যের আলোকে আয়োজিত জাতীয় এই লোকনৃত্য।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com