জুড়ীতে জ্বলছে সংরক্ষিত বন পাহাড়ের প্রায় ৪০ হেক্টর বনের ভূমি আগুনে পুড়ে ছাই

March 13, 2023,

জুড়ী প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের জুড়ী ও বড়লেখা  উপজেলায় অবস্থিত পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্ট। এই বনের বড়লেখা রেঞ্জ এর মধ্যে  থাকা সমনভাগ সংরক্ষিত বনের আয়তন ১৮৫০ হেক্টর। এই এলাকার দলছড়ি ও মাকাল জোরায় প্রায় ২০ হেক্টর যায়গায় প্রায় ৮ দিন থেকে জ্বলছে আগুন। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এই বন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। আগুন নিভানোর কোন প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় বন বিভাগ।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন  মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপির নির্বাচনী এলাকায় প্রকাশ্যে বনের ভিতর এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও তা দেখার কেউ নেই। বন রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে পরিবেশ  মন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি থাকলেও এক শ্রেণীর অসাধু বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে তা বাস্তবায়ন না করে বন পুড়িয়ে পরিবেশ কে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সমনভাগ বিটের দলছড়ি ও মাকাল জোরা এলাকায় রয়েছে ছোট বড় অনেক পাহাড়। এসব পাহাড়ের প্রায় ৪০ হেক্টর বনের ভূমি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।

বনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি, পোকা মাকড়, জীবজন্তু মারা যাচ্ছে। এক পাশে এখন দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আগুনে পুড়ে অজগর সাপ, চশমাপরা হনুমান, মায়া হরিণ, কচ্চপ, বনরুই, সজারু সহ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রজাতির বিরল প্রজাতির কীটপতঙ্গ এবং বেশ কিছু প্রজাতির বৃক্ষের ক্ষতি হয়েছে। আরেকপাশে ওবাদে চলছে বাঁশ কাটার মহোৎসব। প্রায় ২০ জন শ্রমিক দিয়ে সরকারি সম্পত্তি গুলোকে বিনষ্ট করানো হচ্ছে। এসব বাঁশ শুকানোর পরে পরিবর্তীতে আগুন দিয়ে পুড়ানো হবে বলে জানান দিনমজুররা।

এই বনে নিয়মিত যাওয়া আসা করেন, নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে আগুন লেগেছে আমরা বনে আগুন দেখতে পাই। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় বনের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি বন বিভাগকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় নি। যার ফলে এখানকার বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণী সহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এই বিটের প্রায় অর্ধেক যায়গা এখন খাশিয়াদের দখলে। তারা প্রায় ৯০০ হেক্টর বন ভূমি দখল করে গড়ে তুলেছে পানের জোম। দিন দিন বাঁশ ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ধ্বংস করেছে বন্যপ্রাণীর আবাস্থাল। এখন বন্যপ্রাণী গুলো এই এলাকা থেকে স্থানান্তর হয়ে যাচ্ছে।

এই এলাকার স্থানীয়  বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, আমি জ্বালানি কাঠ ও নিজের কাজের জন্য বাঁশ নিতে মাঝে মধ্যে বনে আসা যাওয়া করি। এই বনটি এমন ছিল না এটি প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো একটি পরিপাটি বন ছিল। তবে এখন আর আগের মতো নেই! সব বন খেকোরা বনটি ধ্বংস করে  ফেলছেন। এক সময় এই বনে মায়া হরিনের অবাধ বিচরন ছিল। বন কাটা শুরু হওয়ার পর থেকে হরিনগুলো  চলে গেছে। কিছুদিন পূর্বে ও বনে  হাতি থাকত। কিন্তু থাকার কোন পরিবেশ না থাকায় এখন হাতি ও থাকে না। প্রায় সময় এখন খাদ্যের অভাবে লুকালয়ে চলে আসে ক্ষতি করে কৃষকের ফসল আদি।

এ বিষয়ে সমনভাগ বিট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)  এফ জি মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হয়তো কেউ বিড়ি খেয়ে ফেলেছে এটা থেকে আগুন লেগে বনের চার-পাঁচ হেক্টর ভূমি  আগুনে পুড়িয়ে গেছে। তবে সত্যতা আড়াল করে নুরুল ইসলাম বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চান।

খোজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন সংরক্ষিত বনে সামাজিক বনায়নের নামে ব্যবসা করছে বন বিভাগ। সেখানে আকাশমনি, আগর গাছের চারা রোপন করা হয়। বিটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সর্দারের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা করে নেন তারা। বিনিময়ে একজন লোক বন বিভাগের ১ হেক্টর সংরক্ষিত বনের জায়গার গাছ দেখাশোনা করবেন এবং এসব গাছ বিক্রির ৪০ শতাংশ টাকা তারা পাবেন।

এসবের অংশ হিসেবে সমনভাগের এই সংরক্ষিত বনে আগর বাগান করবে বন বিভাগ। এ কারনে তাদের নির্দেশে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে বাশঁ ও বনের গাছ পরিষ্কার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সংরক্ষিত এই বনে আগুন লাগার ফলে মারা যাচ্ছে  বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ফলে হুমকির মূখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বড়লেখা রেঞ্জ  কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেট বিভাগীয় বোন কর্মকর্তা (ডিএফও) বলেন, আগুন লাগার খবর শুনে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আগুন লাগার অনুসন্ধানে একটি তদন্ত টিম করে দেওয়া হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করবে। সামাজিক বনায়নের নামে পাহাড় পোড়াচ্ছে বন বিভাগ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমাদের যদি কর্মকর্তা করতে আগুন লাগানোর সাথে সম্পৃক্ত থাকেন তার বিরুদ্ধে বিপক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (সদর দপ্তর মৌলভীবাজার)  রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি বনে আগুন লাগার  বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু সংরক্ষিত বন এলাকায় আগুন লেগেছে এতে সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী সহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, পাখির বাসার ব্যাপক ক্ষতি হবে।

এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমির হোসেন চৌধুরি বলেন, আমি সংরক্ষিত বনে আগুন লাগার বিষয়টি জানতাম না। আপনার মাধ্যমে বিষটি অবগত হয়েছি, এই বিষয়ে সিলেট ডিভিশনের ডিএফও কে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করবো।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com