জুড়ী সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে দলিল ও রেকর্ড বইয়ে জালিয়াতি : কপিষ্ট বরখাস্ত দলিল লেখককে রক্ষায় সিন্ডিকেটের দৌড়ঝাপ

May 20, 2017,

আবদুর রব॥ জুড়ী উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক জাহাঙ্গির আলম আর্থিক হয়রানীর উদ্দেশ্যে দুইজন প্রকৃত ভুমি ক্রেতার ভুয়া নাম এবং দলিল দাতার ধর্ম সনাতনের পরিবর্তে ইসলাম লিপিবদ্ধ করে ভুমি রেজিষ্ট্রী দলিল সম্পন্ন করেছেন। মুল দলিল হাতে পেয়ে ভুক্তভোগীরা দলিল লেখকের শরনাপন্ন হলে সে সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের নকল নবিসের সহযোগিতায় বিরাট অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ব্লেড দিয়ে ঘষামাজা করে জালিয়াতির মাধ্যমে মুল দলিল ও রেকর্ড বই সংশোধন করে দিয়েছে ! এ ঘটনায় নকল নবিস সুমন দে’কে বরখাস্ত ‘করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে এ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে অসাধু দলিল লেখক জাহাঙ্গিরকে রক্ষায় তদন্ত ভিন্নখাকে প্রবাহিত করতে অসাধু দলিল লেখকদের একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ সাগরনাল গ্রামের আমিন আলী ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার একই এলাকার নগেন্দ্র চন্দ্র শীলের নিকট থেকে ২৬ হাজার টাকায় ৫ শতাংশ ভুমি ক্রয়ের মৌখিক চুক্তি করেন। দলিল লেখক জাহাঙ্গির আলমের মাধ্যমে ক্রেতাদ্বয় বছরের ১৬ মার্চ উক্ত ভুমির দলিল রেজিষ্ট্রী করেন। ৩১ আগষ্ট দলিল ফেরৎ পাওয়ার পর ক্রেতা আমিন আলী দলিলের ৮নং কলামে (গ্রহিতা) দেখেন অন্য ব্যক্তির নাম। অপর ক্রেতা মোছা. জেসমিন আক্তারের স্থলে মোছা. রহিমা জান্নাত, দাতা নগেন্দ্র চন্দ্র শীলের ধর্মের কলামে সনাতনের স্থলে ইসলাম লিপিবদ্ধ থাকতে দেখে দলিল লেখকের শরনাপন্ন হন। দলিল লেখক জাহাঙ্গির আলম সংশোধন করে দেয়ার কথা বলে ভুমি ক্রেতা আমিন আলীকে দলিলসহ নকল নবিস সুমন দে’র কাছে নিয়ে যায়। তারা এটা কোন সমস্যা নয় জানিয়ে সংশোধন করে দেয়ার আশ্বাসে বিরাট অঙ্কের উৎকোচ আদায় করে। কয়েকদিন পর ব্লেড দিয়ে ঘষামাজা করে দলিল ফেরৎ দিলে তাদের সন্দেহ হয়। এভাবে ঘষামাজার মাধ্যমে দলিল সংশোধন আইনসিদ্ধ নয় জেনে আমিন আলী দলিল লেখক জাহাঙ্গির আলমের বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা নিতে জেলা রেজিষ্ট্রার বরাবরে অভিযোগ করেন।
জেলা রেজিষ্ট্রার মতিউর রহমান অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি তদন্ত করতে বড়লেখা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তদন্ত কর্মকর্তা বড়লেখা উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুল করিম দোলা জানান, ব্লেড দিয়ে ঘষামাজার মাধ্যমে ভুমির দলিল কিংবা রেকর্ড বই সংশোধন অবৈধ। এটি জালিয়াতির সামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাৎক্ষণিক রেকর্ডরুমের নকল নবিস সুমন দে’কে বরখাস্ত করা হয়েছে। জেলা রেজিষ্ট্রারের নির্দেশে তিনি অভিযোগটির তদন্ত করেছেন। শিগগীর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক শেডের সাধারণ সম্পাদক সামছুল ইসলাম জানান, কতিপয় অসাধু দলিল লেখকের কারণে সমিতি ও সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের দুর্ণাম হচ্ছে। সমিতির পক্ষ থেকেও এ অসাধু দলিল লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত দলিল লেখক জাহাঙ্গির আলম জানান, দলিল লিখায় কিছু ভুল হয়েছে। তবে রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত অবস্থায় দলিল ও রেকর্ড বইয়ে (বালাম বই) ঘষামাজার ঘটনার জন্য তিনি একা দায়ী নন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com