টানা ভারী বর্ষণে : বাঁশ মহালদাররা বিপাকে : কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

May 23, 2017,

ইমাদ উদ দীন॥ একের পর এক প্রাকৃতিক দূর্যোগে বির্পযস্থ জেলার বাঁশ মহাল ইজারাদাররা। এবছর চৈত্র মাসে আগাম বন্যার পর ঘন ঘন ভারী বর্ষণ আর পহাড়ী ঢল এই ক্ষতির অন্যমত কারণ। এমনিতে নানা কারনে এবছর বাঁশের ক্রেতা কম। অপরদিকে বার বার বানের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে মহাল এলাকায় মজুদকৃত হান্ডরে (বিশেষ ব্যবস্থায় বাঁধের ভেতরে থাকা) রাখা বাঁশ। একের পর এক এমন দূর্যোগে পড়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাই এবছর লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে মূল পূঁজি তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন ইজারাদাররা। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা জানান এবছর একাধীকবার হান্ডর ভেঙ্গে মজুদকৃত বাঁশ বানের পানিতে ভেসে যাওয়ায় তারা এমন ক্ষতির সম্মুখীন। অনান্য বছর এমন সময়ে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাঁশ সংগৃহিত হয়েছে বেশি। এবছর বিপরিত চিত্র। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও দক্ষ বাঁশ মহাল শ্রমিক সংকটের কারনে বাঁশ যেমন সংগ্রহ করা হয়েছে কম। তেমনি তুলানমূলক ক্রেতা না থাকায় বিক্রিও হয়েছে কম। ইজারার মেয়াদ ঘনিয়ে আসলেও এই সময়ের ভেতর ইজারাদাররা উঠাতে পারেনি পুঁজির অর্ধেক টাকা। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। জানা যায় জেলার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল বাঁশ মহালের ৮টি হান্ডর (বাঁধ) গেল কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে যায়। এতে বানের পানিতে ভেসে যায় হান্ডরে মজুত করা কয়েক লাখ বাঁশ। হঠাৎ এমন বির্পযয়ে দিশেহারা সংশ্লিষ্ট মহালদার। ওই বাঁশ মহালের ইজারাদার কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। মহাল শ্রমিকরা জানান মহালের বাঁশ আহরণের জন্য মহালের অভ্যন্তরে পানির মজুত তৈরীর জন্য পাহাড়ী গাঙ্গ বা ছড়ায় একাধিক বাঁধ নির্মাণ করেন সংশ্লিষ্ট ইজারাদার। মহাল থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে প্রথমে ওই হান্ডরে রাখা হয়। এর পর ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সময়মত হান্ডরের বাঁধ কেটে পানির ¯্রােতের সাথে মজুদকৃত বাঁশ ভাসিয়ে গন্তেব্যে পৌঁছান। কিন্তু এবছর আগাম বন্যা,ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে বাঁশের মজুদ শেষ হবার আগেই সবকটি হান্ডর ভেঙ্গে মজুদকৃত কয়েক লাখ বাঁশ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। একেকটি হান্ডর তৈরী করতে ৩৫-৪০ জন শ্রমিক সপ্তাহ-দশ দিন কাজ করেন। একেক জন বাঁশ মহাল শ্রমিকের প্রতিদিনের মজুরী ৫শ-১হাজার টাকা। ইজাদারের লোকজন জানান নতুন করে ভেঙ্গে যাওয়া হান্ডর (বাঁধ) দিতে ইজারার মেয়াদ অনুযায়ী হাতে যেমন পর্যাপ্ত সময় নেই। তেমনি মিলছেনা দক্ষ পর্যাপ্ত বাঁশ মহাল শ্রমিকও। বনবিভাগ সুত্রে জানা যায়, ৩২৭৯ একর আয়তনের সাগরনাল বাঁশ মহালের ইজারা নেন স্থানীয় মহালদার মামুনুর রশিদ মামুন। ১ বছরের মেয়াদে প্রায় ৭ কোটি টাকায় ৪০ লাখ ২০ হাজার বাঁশের ইজারা নিয়ে তিনি বাঁশ আহরণ শুরু করেন। মহালদারের লোকজন জানান তারা ৭ মাসে মহালের সাড়ে ১৭ লাখ বাঁশ সংগ্রহ করে মহাল অভ্যন্তরের হান্ডরে মজুত রাখেন। কিন্তু গেল ক’দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের ¯্রােতের তোড়ে মহাল অভ্যন্তরের ৮টি হান্ডর (বাঁশ মজুতের বাঁধ)ভেঙ্গে কয়েক লাখ বাঁশ ভেসে যায়। সরেজমিনে সাগরনাল বাঁশ মহাল এলাকায় গেলে বাঁশ কাটা শ্রমিক বিজয় ঘোষাই,পরিমল,আজমির মিয়া,হাবিব মিয়া, রুনাই মিয়া,আছদ্দর আলী, শহীদ মিয়াসহ অনেকেই জানান এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া দিনমজুর লোকজনের জীবিকা উর্পাজনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পাহাড়ে বাঁশ কাটা আর হাওরে ধান কাটা। কিন্তু এবছর চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় হাকালুকি হাওরে হেক্টরের পর হেক্টর বোরো ধান বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কেউ কাচি নিয়ে হাওরে নামতে পারেনি। শেষমেষ বাঁশ মহালের হান্ডর ভাঙ্গার ফলে বাঁশ মহালের কাজও মনে হয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বাঁশ মহালের কাজ বন্ধ হলে পরিবার পরিজন নিয়ে খাবেন কি আর সংসার চালাবেন কি করে। এমন চিন্তায় তারা উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। সাগরনাল বাঁশ মহালের ইজারাদারের লোকজন ও বাঁশ কাটা শ্রমিকরা জানান তাদের বাঁশ মহালের খাঙ্গ, মুলি ও মাখাল বাঁশের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকে। কিন্তু এবছর ভরা মৌসুমে উল্টো দৃশ্য। ক্রেতা নেই বললেই চলে। তারা জানান ইতনা,মদন,মিঠাবন,নিকলি,সুনামগঞ্জ, আজমেরীগঞ্জ, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, শিপ্পা, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চাতলপার, আকতাপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন বোরো ধান তোলে বৈশাখ মাসে ঘরের ছাদ,বসতঘর তৈরী, মেরামত,মাছ ধরার বিভিন্ন ফাঁদ,আসবাবপত্র তৈরী ও ধান সংরক্ষণের বড়বড় ঝুড়ি তৈরীর জন্য বিভিন্ন প্রকারে বাঁশ ক্রয় করে থাকেন। কিন্তু এবছর ধান হারানো ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ যেখানে পেট চালাতে হিমসিম খাচ্ছে সেখানে বাঁশ ক্রয় করবেন কি দিয়ে। সাগরনাল বাঁশ মহালের (মহালদার) ইজারাদার মামুনুর রশিদ মামুন জানান এবার আগাম বন্যায় বাঁশের বাজার নিন্ম মুখী। তার উপর টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে মহালের হান্ডর ভাঙ্গায় মড়ার ওপর খড়ার ঘা দেখা দিয়েছে। ইজারার মেয়াদ অনুযায়ী বাকি সময়ের মধ্যে হান্ডর নির্মাণ করে বাঁশ নামানো মোটেও সম্ভব নয়। বৈরী আবাওয়া আর দক্ষ শ্রমিক সংকটের কারনে এখন পর্যন্ত বিনোয়গের শতকরা ২০ ভাগই তোলা সম্ভব হয়নি। ইজরার যে মেয়াদ আছে সে সময়ের ভেতর মহালের বাকি বাঁশ কাটা যেমন সম্ভব হবেনা তেমনি হান্ডার ভেঙ্গে যাওয়ায় কাটা বাঁশও মজুদ রাখতে পারবেন না। সবমিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার লোকসানের দুশ্চিন্তা আর ব্যাংক ঋণের কারনে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। মামুন জানান তারমত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ঢালুয়া ও ধলাই বাঁশ মহালের ইজারাদাররা। এবছর প্রাকৃতিক দূর্যোগে এজেলার বাঁশ মহাল ইজারাদাররা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ। তাদের দাবী সরকার যদি দয়া করে তাদের ক্ষতির দিক বিবেচনায় নিয়ে ইজারার মেয়াদ বাড়িয়ে দেন তাহলে হয়ত এ ক্ষতি কিছুটা হলেও পোষাবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com