ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার উপরে কমলগঞ্জে ৩টি স্থানে বাঁধে ভাঙ্গন ঃ ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

June 20, 2024,

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধলাই নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পানি বিপদ সীমার ২৬ সে:মি: উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের খুশালপুরে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। পানি প্রবেশ করে কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের ছয়কুট এলাকায় এবং আদমপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি-আধাকানি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ১২টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কায় করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী।

ভারতের ত্রিপুরার বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ত্রিপুরা ও আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি আবার সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও খোয়াই নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ধলাই নদীতে পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা যায়, গত সোমবার ২মি:মি, মঙ্গলবার ১৩৬ মি:মি ও বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৯ মি:মি: বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এলাকার এবং রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের খুশালপুর গ্রামে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দিয়েছে। ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে নারায়নপুর, চৈতন্যগঞ্জ, বাঁধে উবাহাটা, খুশালপুর ছয়কুট, বড়চেগ, জগন্নাথপুর, প্রতাপী, গোপীনগর, আধকানী, কাঁঠালকান্দিসহ প্রায় ৪০টি গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও বাড়ী ঘরে পানি প্রবেশ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিব আহমেদ বলেন, ধলাই নদীর পানি বুধবার সকাল ৯টায় ভানুগাছ রেলওয়ে সেতু এলাকায় ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ধলাই নদীটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।

এদিকে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধলাই নদীর সাথে সংযুক্ত ড্রেন দিয়ে পানি প্রবেশ করে পৌর এলাকার ৩টি ওয়ার্ডের পানিশালা, চন্ডীপুর ও নছরতপুর এলাকায় বসতবাড়ী, ডাক বাংলো, কমলগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজারে পানি প্রবেশ করেছে।

এছাড়া উপজেলার পৌর এলাকার খুশালপুর, নিন্মাঞ্চল পতনউষার, মুন্সিবাজার, আদমপুর, ইসলামপুর ও আলীনগর এলাকার বৃষ্টির পানি লাঘাটা ও খিন্নি ছড়ায় পানি উপছে পড়ে ফসলী জমি তলিয়ে গেছে।

এদিকে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের রামপাশা, শিমুলতলা সহ প্রায় ১০ স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেতে পারে।

ধলাই নদীর ভাঙ্গনকৃত বাঁধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা সমুহ পরিদর্শন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল প্রমুখ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ৩টি স্থানে ভাঙন দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নদীতে পানি বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করছি। পর্যাপ্ত পরিমানের ত্রাণ মজুদ আছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং সার্বক্ষনিক নজরতদারী রয়েছে। এছাড়া সবকটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় রহিমপুর ইউনিয়নের বন্যাকবলিত বড়চেগ এলাকা পরিদর্শন করেন কৃষি মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com