পৌর ও ইউনিয়ন নির্বাচন ভোটার নয় র্টাগেট এখন দলীয় প্রতীক

ইমাদ উদ দীন॥ ভোট কিংবা ভোটার। প্রার্থীদের কাছে এখন দু’টিরই গুরুত্ব কম। দলীয় মনোনয়নই মূখ্য। তাই উপজেলা থেকে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আর্কষণে ব্যস্ত তারা। কারন দলীয় মনোনয় পেলেই জয় নিশ্চিত এমন ধারনা অনেক প্রার্থীর। এমন বিশ্বাসে এখন রাত দিন প্রাণপন ছুটছেন প্রার্থীরা। একারনে প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের আমেজ থাকলেও ভোটারদের মাঝে তা প্রতীয়মান হচ্ছেনা।
জেলার বড়লেখা পৌরসভার নির্বাচনের দিনক্ষন চূড়ান্ত হলেও অপেক্ষমান অন্য ৪টি পৌরসভা। আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিনক্ষন এখনো চূড়ান্ত না হলেও বসে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে ঠিকে থাকতে মৌলভীবাজারের ৫টি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৫ সহস্রাধীক প্রার্থীরা এখন থেকেই শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। শুরু হয়েছে ভোটের আগে প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধ। প্রার্থীদের কাছে এখন ভোটারদের চাইতে কদর বেড়েছে দলীয় নেতা ও স্থানীয় কর্মীদের। ভোটের আগে মনোনয়ন যুদ্ধে যিনি জয়ী হবেন তিনিই এগিয়ে থাকবেন এমনটিই মনে করছেন প্রার্থীরা। তাই আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন তারা। ডিসেম্বর ও মার্চে সম্ভাব্য পৌর ও ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে সরব প্রার্থীরা।
করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ও শুভেচ্ছা সংম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন আর বিলবোর্ড টানানো হচ্ছে শহর ও স্থানীয় হাট বাজারের লোক সমাগম স্থলে। এছাড়া প্রার্থীদের নিজেদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা সংশ্লিষ্ট পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা সংম্বলিত লিফলেট আগাম ছেপেও বিলি করেছেন কেউ কেউ। তফসিল ঘোষণা না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন কৌশলে অনেক আগে থেকেই প্রচারণায় নেমেছেন।
মৌলভীবাজারে ৫টি পৌরসভা আর ৬৭ টি ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা নিরব হলেও মাঠে সরব প্রার্থীরা। তবে প্রার্থীরা হঠাৎ সরব হলেও তাদের এ তৎপরতা ভোটারকে ঘীরে নয়। ভোটের মাঠে ঠিকে থাকতে দলীয় নেতাদের আর্শিবাদ পেতে প্রার্থীদের এমন আগাম দৌড়যঝাঁপ। কারণ দলীয় নেতারা খোশ হলেই দলের মনোনয়ন পাবেন। আর দলের মনোনয়ন পেলেই দলীয় ভোটও পাবেন। বিজয়ী হবেন এমনটি ধারনা প্রার্থীদের। তাই এখন থেকেই তৃণমূল থেকে উপজেলা,জেলা এমনকি কেন্দ্র পর্যন্ত দলীয় নেতাদের মন জয় করতে প্রার্থীরা ছুটছেন রাত দিন। নানা উপঢৌকন নিয়ে নেতাদের বাসা বাড়ি আর অফিসেই ধর্ণা দিচ্ছেন বার বার। কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন নেতাদের সাথে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক, আত্নীয়তা কিংবা ব্যাক্তি সম্পর্ক। নেতাদের অবগত করছেন সংগঠনের জন্য নিজের অবদান।
প্রার্থীরা জানালেন তারা তৃণমূল থেকে উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্র পর্যায়ের সকল নেতাদের কাছে ধর্না দিয়ে তাদেরকে খুশি রাখছেন। এখন থেকে প্রতিনিয়তই সব নেতার কাছে ধর্না দিতে গিয়ে তারা হচ্ছেন হয়রান। তবে আশায় বুক বেধেই তারা এখন এমন তদবিরকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রার্থীদের এমন আচরনে বেজায় নাখোশ ভোটাররা। নির্বাচনী অভ্যস্ত রেওয়াজে ব্যত্যয় ঘটায় তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দলীয় প্রতীকে এবারকার নির্বাচনও হবে কি না। আর হলেও তার পক্ষে বিপক্ষে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
স্থানীয় হাট বাজারের হোটেল ও রেস্তোরাতে চায়ের কাপে ঝড় তোলা আলোচনায় ভোট আর প্রার্থীর চাইতে মূখ্য বিষয় হিসেবে স্থান পাচ্ছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিয়ে। হঠাৎ করে গেল নির্বাচন থেকে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের সরকারী সিন্ধান্তে পক্ষে বিপক্ষে চলছে নানা তর্কযুদ্ধ। এমন সিন্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সকল দলের ভোট পাওয়া স্থানীয় জনপ্রিয় অনেক জনপ্রতিনিধিরাও। তারা অনেকেই জাতীয় রাজনৈতিক দল গুলোর নেতাকর্মী হওয়াসত্ত্বেও স্থানীয় নির্বাচনে তারা দলের পরিচয় না দিয়েই ভোটারদের মন সহজেই জয় করে নেন। তাই গেল নির্বাচনের মত আবারও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এমনটিই আশংকা তাদের। কারন হিসেবে তারা জানালেন স্থানীয় এ নির্বাচন গুলোতে যোগ্যতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের ভোটদেন ভোটাররা। ওখানে প্রার্থীর নিজ যোগ্যতা ছাড়াও বংশ ও গোষ্টীগত মর্যাদা ও প্রভাব,এলাকা ও অঞ্চল প্রীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ই আকৃষ্ট করে স্থানীয় ভোটারদের। দলীয় প্রভাব থাকে খুবিই কম। উৎসবমুখর পরিবেশেই একদলের নেতাকর্মী ও সর্মথক অন্যদলের প্রার্থীদের ভোট দেন। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচন ছাড়া তৃণমূলের কর্মীরাও স্থানীয় এ নির্বাচন গুলোতে প্রার্থীদের দলীয় পরিচয় কিংবা প্রতীকে নির্বাচন করতে তেমন আগ্রহী নয়। তাদের ধারনা এতে করে দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ ও সংঘাত গ্রাম পর্যায়ে চলে আসে। আগের মত গ্রাম পর্যায়ে আর থাকেনা রাজনৈতিক সৌর্হাদ্য পূর্ণ পরিবেশ। রাজনৈতিক কারণেই দেখা দেয় নানা দ্বন্ধ হানাহানি আর অস্থিরতা। ডিসেম্বর থেকে শুরু পৌরসভা আর মার্চে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষনার পর থেকেই হঠাৎ করে এখন এমন সরব হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। মৌলভীবাজারের ৫ টি পৌরসভা আর ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা নিরব থাকলেও সরব হয়ে উঠছেন প্রার্থীরা। জেলার ৫ টি পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর এবং ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রায় ৫ সহস্রাধীক প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
আসছে ডিসেম্বরে জেলার বড়লেখা পৌরসভা দিয়ে শুরু হবে নির্বাচন। তবে দলীয় প্রার্থীরা নিজ দলের মনোনয়ন পেতে দৌড়যাপ শুরু করলেও বসে নেই র্নিদলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা রেওয়াজ মেনেই আগের মতই ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করে দোয়া চাইছেন। দিচ্ছেন নানা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনী বৈতরীন পার হতে নিচ্ছেন সুশীল সমাজসহ ভোটারদের পরামর্শ। তবে স্থানীয় এই নির্বাচন নিয়ে সরকারদল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা আর প্রার্থীদের দৌড়যঝাঁপ লক্ষ্যণীয়। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট দলীয় ও জোটবদ্ধভাবে পৌর ও ইউনিয়ন নির্বাচনে অংশ নিবে কি না তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তারপরও বসে নেই দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অনেকেই নিচ্ছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি। তবে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ধারণা দলের হাই কমান্ড শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নাও নিতে পারে। তাই নির্বাচনে অংশগ্রহনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিগত দিনে এ জেলার বিএনপি,জামাতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্যা মামলা হয়েছে। ওইসব মামলায় পৌর ও ইউনিয়ন নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের হয়রানির আশংকাও রয়েছে নেতাকর্মীদের। তারপরও দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করছেন দলের জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য করুন