বড়লেখায় জালিয়াতির মাধ্যমে চলমান নদীকে বদ্দ বিল দেখিয়ে ইজারা, বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই আরো ৫৫৪ শতাংশ ইজারা
আব্দুর রব : বড়লেখায় মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আদেশ অমান্য করে চলমান ‘দর্শনা নদী’-কে জালিয়াতির মাধ্যমে জলমহাল (বদ্দ) দেখিয়ে একটি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ৩ বছরের জন্য ইজারা প্রদান করেছে উপজেলা ভূমি প্রশাসন। শুধু তাই নয়, জলমহাল ইজারার বিজ্ঞপ্তির সিডিউলে ১.২ একরের উল্লেখ করে রহস্যজনকভাবে অতিরিক্ত আরো ৪.৫২ একর নদী শ্রেণির ভূমির দখল সংশ্লিষ্ট ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জলমহাল ইজারার এই মহাজালিয়াতির নাটের গুরু জেলা প্রশাসনের সদ্য বদলি হওয়া এক রাজস্ব কর্মকর্তা (এডিসি)।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক দায়েরকৃত মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল পিটিশন নং- ৩০৩৯/২০১৯ এর ১৭.০২.২০ তারিখের রায়ের আদেশ অনুযায়ি চলমান কোনো নদী ইজারা দেওয়ার বিধান নেই। ইতিপূর্বে ইজারা প্রদান করা হয়ে থাকলে তা বাতিল করার জন্য মহামান্য আদালত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করেছে।
জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার চলমান দর্শনা নদীতে জাইকার অর্থায়নে এলজিইডি মৌলভীবাজারের তত্ত্বাবধানে গত বছর প্রায় ৮ কিলোমিটারের খনন কাজ সম্পন্ন হয়। এতে সরকারের ব্যয় হয় ১ কোটি ২৮ লাখ। দুইটি স্লুইচগেট ও একটি কৃষক সমবায় সমিতির অফিসঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের আরো প্রায় ৫ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর আগে উপজেলা ভূমি প্রশাসন দর্শনা নদীর ১ একর ০২ শতাংশ ভূমি বদ্দ জলমহাল হিসেবে ১৪৩১ হতে ১৪৩৩ বাংলা সন পর্যন্ত রূপালী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি গপেন্দ্র বিশ্বাসকে ইজারা প্রদান করে। মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের লীজ বাতিলের চিঠি পেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের এক রাজস্ব কর্মকর্তার অদৃশ্য ইশারায় চলমান দর্শনা নদীকে ‘দর্শনা বিল (বদ্দ)’ জলমহাল দেখিয়ে ইজারা বহাল রাখা হয়েছে। ইজারা বিজ্ঞপ্তির সিডিউলে জল্লার হাওর মৌজায় ১ একর ২ শতাংশ উল্লেখ থাকলেও রহস্যজনকভাবে ইজারা গ্রহীতাকে গত ৬ জুন দর্শনা নদীর আর্থনিকান্দি মৌজায় বিভিন্ন দাগে আরো ৫ একর ৫৪ শতাংশসহ সর্বমোট ৭ একর ৫৬ শতাংশ নদীর ভূমির দখল বুঝিয়ে দিয়েছে উপজেলা ভূমি প্রশাসন (এসিল্যান্ড)।
সরেজমিনে দর্শনা নদীর ইজারাকৃত ভূমির কোনো অংশ জলমহাল হিসেবে পরিলক্ষিত হয়নি। প্রবাহমান একটি নদী হিসেবেই দেখা গেছে। স্থানীয় হাকালুকি ও দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্রে উল্লেখিত খতিয়ার ও দাগের ভূমির শ্রেণির কলামে ‘নদী’ উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এই নদীটি গত বছর সরকারিভাবে খনন করা হয়েছে। আরো কিছু প্রকল্প চলমান। এই নদীর কোনো অংশই বিল কিংবা জলমহাল নয়। তারা শুনেছেন চলমান কোনো নদী ইজারা দেওয়া যায় না। ইজারাদারের নানা অপতৎপরতায় নদীতীরবর্তী কৃষিজীবিরা ক্ষতিগ্রহস্থ হচ্ছেন। কিন্তু দর্শনা নদী কিভাবে বদ্দ বিল (জলমহাল) হল তা তাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
ইউএনও নাজরাতুন নাঈম জানান, এই জলমহালটির ইজারা প্রক্রিয়া চলাকালিন গত ১২ মার্চ থেকে কয়েক মাস তিনি মাতৃত্বকালিন ছুটিতে ছিলেন। দখলদেহি বুঝিয়ে দেওয়ার সময়ও তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
মন্তব্য করুন