বড়লেখায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুস নিয়ে নৈশপ্রহরী পদে চাকরি দেয়ার অভিযোগ, অবশেষে চাকরিচ্যুত

March 23, 2024,

আব্দুর রব॥ বড়লেখা উপজেলার টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে ৪ লাখ টাকা ঘুস নিয়ে নৈশপ্রহরী পদে বশির উদ্দিনকে চাকুরী দিয়ে প্রায় দেড় বছর বিনাবেতনে দায়িত্ব পালন করিয়ে অবশেষে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে ভোক্তভোগি নৈশপ্রহরী সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর অনুলিপি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের কাছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস স্কুলের নৈশপ্রহরী পদে স্থানীয় হতদরিদ্র বশির উদ্দিনকে চাকুরী দিতে ৫ লাখ টাকা দাবী করেন। দরকষাকষির এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ৪ লাখ টাকায় চাকুরী দিতে সম্মত হন। বশির উদ্দিনকে নিয়োগ দিতে প্রধান শিক্ষক নিজেই অষ্টম শ্রেণি পাশের জাল সার্টিফিকেট প্রদান করেন। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় বশির উদ্দিনকে নৈশপ্রহরী পদে নির্বাচিত করে ৭ মে কমিটির অনুমোদন নিয়ে নিয়োগপত্র দেন। ১৪ মে বশির উদ্দিন ওই স্কুলে নৈশপ্রহরী পদে যোগদান করেন। এমপিওভুক্তি প্রক্রিয়াধীন থাকায় ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বশির উদ্দিন বিনা বেতনে নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালনকালিন প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস তার কাছে আরো দুই লাখ টাকা চান। নৈশপ্রহরী বশির উদ্দিন আর টাকা দিতে পারবেন না বলায় তাকে স্কুল থেকে বের করে দেন। অদ্যবাধি তাকে স্কুলে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
ভোক্তভোগি নৈশপ্রহরী বশির উদ্দিন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস চাকুরী দিতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। অনেক অনুনয় বিনয়ের পর ৪ লাখ টাকায় রাজি হলে স্ত্রীর সোনা গহণা, গরু-ছাগল, গাছপালা বিক্রি করে তাকে টাকা দেওয়ায় তিনি নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেন। ইন্টারভিউয়ে প্রথম হওয়ায় আমাকে নিয়োগ দেন। প্রায় দেড় বছর বিনা বেতনে ডিউটি করার পর এমপিওভুক্ত করার নামে তিনি আরো দুই লাখ টাকা চান। আমি গরিব মানুষ, আর টাকা দিতে পারবো না বলায় গত বছরের ১২ অক্টোবর তিনি স্কুলের রুমে থাকা আমার বিছানাপত্র বাহিরে ফেলে আমাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেন। আমাকে স্কুলে ঢুকতে দিচ্ছেন না। স্বেচ্ছায় রিজাইন দিতে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। আমি ক্ষতিপুরণসহ ঘুসের টাকা ফেরৎ চাই। দেড় বছর আমাকে বিনা বেতনে স্কুলে ডিউটি করানোর পারিশ্রমিকও চাই।
প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস জানান, বশির উদ্দিনের কাগজপত্রে জটিলতা থাকায় তার এমপিও হচ্ছে না। ২০২২ সালের ১৪ মে থেকে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বশির উদ্দিন নৈশপ্রহরী হিসাবে বিনা বেতনে দায়িত্ব পালনের, স্কুলের কর্মচারি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর থাকার, শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ প্রদানের সত্যতা স্বীকার করলেও উৎকোচ নিয়ে চাকুরী দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। কাগজপত্রে জটিলতা থাকলে আবেদনপত্র বাছাইয়ে বাদ দিলেন না কেন, তাকে কিভাবে ইন্টারভিউতে ডাকলেন, নির্বাচিত করলেন, নিয়োগপত্র দিলেন এমনসব কোনো প্রশ্নের সদোত্তর দেননি প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজরাতুন নাঈম জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। কর্মস্থলে ফিরে অভিযোগটি দেখে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com