বাইক্কাবিলে এবার ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০ পাখি পাওয়া গেছে : দেখা মিলল বিশ্বের দ্রুততম পাখি রকেট বার্ড

স্টাফ রিপোর্টার : হাইল হাওড় অধ্যুষিত মাছের অভয়াশ্রম বাইক্কাবিলে জলজ পাখি শুমারি-২০২৫ শেষ হয়েছে। শুমারিতে প্রথমবার দেখা মিলেছে পৃথিবীর দ্রুততম পাখি ‘পেরিগ্রিন ফ্যালকনের’। যাকে অনেকে ‘রকেট বার্ড’ও বলেন। এ বছর বাইক্কা বিলে শীতকালীন জলচর পাখি গণনা করে ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির দেখা মিলেছে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের আয়োজনে পাখি শুমারি শেষ হয় গেল শনিবার।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য ও পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থমসন জানান, এ বছর বাইক্কা বিলে শীতকালীন জলচর পাখি গণনা করে তারা ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির দেখা পেয়েছেন। এ সংখ্যা বিগত দুই বছরের চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালে ৩৩ প্রজাতির ৪ হাজার ৬১৫ জলচর পাখি দেখা গিয়েছেল এবং ২০২৩ সালে দেখা মিলেছিল ৪০ প্রজাতির ৬ হাজার ১৪১ জলচর পাখির।
পাখি বিশেষজ্ঞ থমসন আরও বলেন, ‘সংখ্যা পরিবর্তিত হয়, কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারিতে বেশি দেখা যায়। তবে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা নির্ভর করে জলন্তর, আগের মৌসুমের পরিস্থিতি এবং পরিযায়ন পথের ওপর।’
এ ব্যাপারে বাইক্কা বিলের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সিএনআরএস’র সাইট অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, পাখি গণনাকারিরা তাদের জানিয়েছেন একটি মাত্র পেরিগ্রিন ফ্যালকনের দেখা মিলেছে। পাখিটি উড়ে এসে একটি ঝোঁপের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।’
পাখি বিশারদরা জানান, পেরিগ্রিন ফ্যালকন একটি বিরল প্রজাতির পাখি। পাখিটি ঘণ্টায় ৩৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে। এমন দ্রুতগতির কারণে একে রকেট বার্ডও বলা হয়। তবে এই পাখি মাছের সঙ্গে অন্য পাখি ধরেও খেয়ে থাকে। বিশেষ করে হাঁস জাতীয় পাখি তাদের প্রিয়। আর বাইক্কাবিলে হাঁস জাতীয় প্রচুর জলজ পাখি শুমারি পাখি রয়েছে।
পাখি গণনায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য সামিউল মহসিন জানান, এই বছর পাখি গণনায় উল্লেখযোগ্য ৭৫০ মেটে মাথা টিটি (গ্রে- হেডেড ল্যাপউইং) এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক কাস্তেচরা- ৬৩৯ এবং ১০০ কালা মাথা কান্তেচরা (ব্ল্যাক-হেডেড আইবিস) দেখা গিয়েছে। তবে এবার বাইক্কা বিলের পাখির সংখ্যা অতীতের গড় গণনার সংখ্যার চেয়ে কম। ২০০৮-১০ এবং ২০১৪-১৯ সালে শীতকালে গড়ে ৯ হাজার জলচর পাখি দেখা মিলত। সামিউল মহসিন আরও জানান, বাইনোকুলার, টেলিস্কোপের সাহায্যে ও তাদের পাখি গণনার সূত্র এবং থিয়োরির মাধ্যমে বাইক্কা বিলের পাখি গননা করেন তারা। তিনি বলেন, ‘বাইক্কা বিলের এরিয়া ১৭০ হেক্টর। এখানে মাছের
অভয়াশ্রম করা হয়েছে তাই সারা বছরই এখানে পানি ধরে রাখা হয়। হাইল হাওরের মধ্যে আরও ৬০-৭০টা বিল থাকলেও এ বিলেই বেশি পাখির দেখা মেলে। যে কারণে পাখি গণনার জন্য এই বিলটিকে বাছাই করে নেওয়া হয়েছে।’ বাইক্কা বিল পরিচালনায় নিয়োজিত বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী বলেন, ‘পুরো হাইল হাওরেরই পাখি থাকে। তবে বাইক্কা বিলে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এখানে পাখির সংখ্যা বেশি থাকে।’
তিনি বলেন, ‘বাইক্কা বিলের জন্য পাঁচজন পাহারাদার আছে, পালাক্রমে এটি দেখাশোনা করেন তারা। সারা বছর এই বিলে পাখি থাকলেও মূলত শীত মৌসুমে বিদেশি নানা প্রাজাতির পাখির আগমন ঘটে। অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে বাইক্কাবিল। এখানে সাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা অতিথি পাখি দেখতে ছুটে আসেন দেশী-বিদেশি পাখিপ্রেমি।
মন্তব্য করুন