(ভিডিওসহ) বাসায় আড্ডা দিয়ে মাদক সেবন ও ধর্ষণের স্বীকারোক্তি নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড়

August 31, 2020,

স্টাফ রিপোর্টার॥ বন্ধুদের নিয়ে মাদক পার্টি ও ধর্ষনের আড্ডা ও রাতভর নানা আমুদ ফুর্তি। সেই সাথে মেয়ে বন্ধুকে রাতভর ধর্ষণ। এরপর ওই রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনার আদ্যোপান্ত নিজেরাই নিজেদের ফেসবুকে তোলে ধরে। প্রতিনিয়তই হত এমন পার্টি। কিন্তু তা নিজেরা নিজেদের মধ্যেই তা চেপে রাখত। ওই দিন আমুদ ফূর্তির ভাগবাটোরায় দ্বন্ধ নিয়ে বেসামাল হয়ে নিজেরাই বলে দেয় অভ্যন্তরীণ বেহুঁশ বেফাস কথা।
গত কয়েকদিন থেকে এমন মাদক সেবন ও নারীকে ধর্ষণের স্বীকারোক্তি নিয়ে পাল্টাপাল্টি কিছু ছবিসহ স্টেটাস দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ব্যাপক তোলপাড় চলছে মৌলভীবাজারে।
জানা গেছে, সাবেক ছাত্র মৈত্রী নেতা, সাবেক বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফর ডটকম প্রতিনিধি ও সংবাদকর্মী মাহমুদ এইচ খান ২৫ আগষ্ট একটি ধর্ষণের ঘটনার বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় (তার ফেসবুক পেইজে) তুলে ধরে, অভিযোগ করেন সামাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সজিবুল ইসলাম তুষার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন গত ৩ আগষ্ট তার নিজ বাসায় একটি পার্টির আয়োজন করা হয়, সেখানে একজন নারীবাদী ও এক্টিভিস্ট মার্জিয়া প্রভা, বাম নেতা রায়হান আনছারী, ছাত্রফ্রন্টের সজিবুল ইসলাম তুষার ও তার এক নারী বন্ধু যোগ দেন,খাওয়া-দাওয়া শেষে সেখানে সবাই গাঁজা সেবন করেন, এক পর্যায়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে তুষার তার ঐ নারী বন্ধুকে জোরপূর্বক ভাবে ধর্ষণ করে। এই কাজে বাঁধা দিলেও মার্জিয়া প্রভা ও রায়হান আনছারী তুষারকে এ কাজে সহযোগীতা করেছেন বলে তিনি তাঁর স্টেটাসে উল্লেখ করেন।
একদিন পর অভিযুক্ত তুষার সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক আইডিতে) স্টেটাস দেন ঐদিন মাহমুদের বাসয় গাঁজা পার্টি বসেছিল, এবং নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ঐ মেয়েটির সাতে তাঁর অন্তরঙ্গতা হয়,তবে ধর্ষণের বিষয়টি অস্বিকার করে তিনি ঐ মেযেটির আগ্রহে এ কাজ করেছেন তা অকপটে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বীকার করেন।  এ ঘটনার পড় মাহমুদ, তুষার, মার্জিয়া প্রভা ও রায়হান আনছারী ও তুষারের সেই নারী বন্ধু মারিয়ার প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও নারী-পুরুষের সাথে অন্তরঙ্গতার বেশ কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
এমন ঘটনা জানাজানি হলে ফুঁসে উঠে জেলার সচেতনমহল,তরুণ ও যুবসমাজ।  সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তোলপাড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা এমন নিন্দনীয় অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সোচ্চার হন। তাদের সাথে একাত্রতা পোষন করে জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। তারা প্রশাসন কাছে জোর দাবি তোলেন প্রয়োজনীয় আইনানুজ্ঞ ব্যবস্থা গ্রহনের। অন্যতায় তারা ওই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজপথে কঠোর আন্দোলনে সোচ্চার হবেন বলেও জানাচ্ছেন।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ গঠনার সত্যতা অকপটে স্বীকার করার পড় মৌলভীবাজার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহর শাখার সভাপতি সজিবুল ইসলাম তুষার কে সংগঠনের সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির বর্ধিত ফোরামের সদস্য রায়হান আনছারীকেও সংগঠনের সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব রোববার ৩০ আগষ্ট সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরী সভায় প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের কারণে মাহমুদ এইচ খানের সহযোগী সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করে সদস্যপদ বাতিল করা হয়।
জানা গেছে মাহমুদ এইচ খান সুনাপুর এলাকায় (সুনাপুর প্লেইস-২২৩) নাম্বার বাসার ২য় তলায় ভাড়া থাকতেন, এই বাসায় মালিক সিরাজ মিয়া লন্ডন প্রবাসী।  গণী মিয়া নামের একজন কেয়ার-টেকার এই বাসাটি দেখাশুনা করেন।  টেকার  জানান মাহমুদ এই বাসাটি তার স্ত্রী, মা ও বোন কে নিয়ে থাকবেন বলে ভাড়া নিয়েছিলেন, কিন্তু কিছুদিন পড় তার মা-বোন এখান থেকে অনত্র চলে যান,আর তাঁর স্ত্রী ঢাকায় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন তাই তিনিও ঢাকায় চলে যান।  মাঝে মধ্যে এ বাসায় আসা যাওয়া করতেন তা তারা বুঝে উঠতে পারেননি।
টেকার আরও জানান প্রায়ই পার্টি হত তার ফ্লাটে,উচ্চ স্বরে গান-বাজনা হত, সেখানে মেয়েরাও আসত মাহমুদ তাদেরকে তার বন্ধু বলে পরিচয় দিতেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মাহমুদের এক প্রতিবেশী বলেন, মাহমুদের বাসায় মেয়েদের আসাযাওয়া ছিল নিয়মিত। তাঁর এসব পার্টিতে যোগ দিতেন মৌলভীবাজারের বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক নেতারা।
মাহমুদ ও তুষারের মদ গাঁজা ও নারী ধর্ষণের এমন সত্যতার স্বীকারোক্তিতে এখনও নীরব রয়েছে প্রশাসন। তবে জেলার সচেতন মহল এসব কিছুকে অপরাধ হিসেবে দেখছেন। বাম সংগঠনের সাথে জড়িত কয়েজন সদস্য নিয়মিত মাদকের আসর বসাতেন এমন সত্যতার স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরেও এ বিষয়ে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন এমন প্রশ্ন এখন জেলার সাধারণ মানুষের।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হবার পড় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি খালেদ চৌধুরী, সচেতন নাগরীক ফোরাম (সনাফ) এর সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, বোরহান উদ্দিন (র:) ইসলামী সোসাইটির সভাপতি এম মুহিবুর রহমান মুহিব,স্পন্দন মৌলভীবাজারের সভাপতি ইহাম মুজাহিদসহ অনেকেই এবিষয়ে মুঠোফোনে বলেন মৌলভীবাজারে বাম সংগঠনের সাথে জড়িত কয়েজন সদস্য প্রকাশ্যে আসর বসিয়ে মাদক সেবন ও ধর্ষণ করার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। অথচ এখনও নীরব রয়েছে প্রশাসন। তারা ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। অন্যতায় তারা রাজপথে তীব্র আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারীও দেন।
এবিষয়ে নির্যাতিতা ওই মেয়ে ও অভিযুক্ত চার জনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য নানা প্রচেষ্ঠায় চালিয়েও সম্ভব হয়নি। তাদের সবারই মুঠোফোন ফোন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে মাহমুদ এইচ তিনি ওই ঘটনার প্রতিবাদকারী হিসেবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন আমার বাসায় শুধু ডিনার পার্টির আয়োজনের কথা বলে তারা গাঁজা সেবন ও ধর্ষণ করায় আমি এর প্রতিবাদ জানাই।
শান্ত শহর মৌলভীবাজারে সামাজিক সংগঠনের আড়ালে এমন অশ্লীল কার্যক্রম করে পরিবেশ নষ্ট না করার আহবান জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এ জেলার সাধারণ মানুষ পাশাপাশি অবিলম্বে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানিয়েছেন তারাঁ।
জেলা শহরের সচেতন মহল,সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্দ্যোগে নাগরিক সমাজের ব্যানারে ওই ঘটনার প্রতিবাদে ও দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার কথা রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com