বড়লেখায় ৮ মাস ধরে বন্ধ প্রাইমারী স্কুল!

September 17, 2022,

আব্দুর রব॥ বড়লেখায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বাগান কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বে প্রায় ৮ মাস ধরে বন্ধ দক্ষিণগুল (সাবেক কেরামতনগর) চা বাগানের বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশংকায় রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ করে অনেক শিক্ষার্থীকে চা পাতা চয়নে নিয়োজিত করেছে।
জানা গেছে, ২০১২ সালে বাগান পঞ্চায়েত ও অভিভাবকদের দাবীর মুখে সাবেক হুইপ ও বর্তমান বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপির সুপারিশে উপজেলার দক্ষিণগুল চা বাগানের (সাবেক কেরামতনগর) চা কারখানা ও কার্যালয় সংলগ্ন খেলার মাঠের দক্ষিণ পাশের ভুমিতে একটি প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। নাম দেয়া হয় দক্ষিণগুল প্রাইমারী বিদ্যালয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিনের দাবী তিনি ব্যক্তিগত ৩-৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ও সরকারী অনুদানে নিচু জায়গা ভরাট করে স্কুলের টিনসেড ঘর তৈরী করে দেন। বাগান পঞ্চায়েত তাকে স্কুল কমিটির সভাপতি মনোনিত করেন। তিনি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পাঠদান চালিয়ে যান। সংশ্লিষ্টরা সাইনবোর্ডে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তার নাম লিখেন। প্রায় ১০ বছর ধরে যথারীতি পাঠদান চলছিল। হঠাৎ ৮ মাস আগে বাগান কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড নামিয়ে স্কুল বন্ধ করে দেয়। এতে অধ্যয়নরত দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশুনা থমকে গেছে। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ করে অনেক শিক্ষার্থীকে চা পাতা চয়নে নিয়োজিত করেছে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে স্কুলের শ্রেণীকক্ষ ফাঁকা থাকতে এবং মাঠে গরু-ছাগল চরতে দেখা গেছে। প্রধান শিক্ষক সুমন ঘোষ জানান, প্রায় ৮ মাস আগে স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ১০ বছর ধরে তারা চার শিক্ষক পাঠদান চালিয়ে ছিলেন। সভাপতি হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন কয়েক মাস তাদের সম্মানী ভাতা দিলেও পরে আর খোঁজ নেননি। তারা কিভাবে পড়াবেন, কি খাবেন এ নিয়ে কারো কোন চিন্তা নেই। এরপরও তারা পাঠদান চালিয়ে যান। কিন্ত হঠাৎ স্কুল বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েছে।
বাগানের ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান মাছুম জানান, বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুলটি বন্ধ করেনি। সাবেক হুইপ ও বর্তমান বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপির সুপারিশে মালিকপক্ষ স্কুলের জন্য ভুমি দান করে। ঘর নির্মাণেও বাগান সহায়তা করেছে। বাগানের ভুমিতে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের সাইনবোর্ডে হঠাৎ ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিনের নাম দেখে মালিকগণ বিম্মিত হন। তারা সাইনবোর্ড অপসারণ করতে বলায় তিনি তা নামিয়ে ফেলেন। স্কুলের কোন শিক্ষার্থীকেই বাগানের কাজে নিয়োজিত করা হয়নি। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের ডেকে পুনরায় পাঠদান শুরু করতে বলেছেন। তবে বৃহস্পতিবারও স্কুল ঘুরে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হতে দেখা যায়নি।
উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষা অফিসার মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ স্কুলটিতে চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যেক ক্লাসের শিক্ষার্থীর সরকারী বই দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সকল তথ্যও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করা হচ্ছে। ৮ মাস ধরে স্কুল বন্ধ থাকার কথা কেউ তাকে জানায়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com