ভারিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢল বড়লেখায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী, আশ্রয় কেন্দ্রে আসা শুরু দুর্গতদের
আব্দুর রব॥ বড়লেখায় ঈদের দিন সোমবার ও পরের দিন মঙ্গলবারের টানা ভারিবর্ষণে আবারও বন্যার অবনতি ঘটেছে। তলিয়ে গেছে হাকালুকি হাওড়পাড়ের তালিমপুর, বর্নি ও সুজানগর ইউনিয়নের সহস্রাধিক বাড়িঘর ও রাস্তা। পৌরশহরের কলেজরোড, জফরপুর রোড় ও হাটবন্দ সড়কসহ কয়েকটি কলোনি তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে অন্তত শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। উপজেলার উজান এলাকায়ও দেখা দিয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। গত দুই দিনের ভারিবর্ষণে নিচু ও উজান এলাকার অন্তত ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উপজেলার ২২টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের ৯টিতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ১৭০টি দুর্গত পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন এসব দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে।
বর্নি ইউনিয়নের মিহারী এলাকায় মিহারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সোনাই নদী তীরবর্তী ইঁসলিং রাস্তা কে বা কারা রাতের আঁধারে কেটে ফেলায় ওই স্থান দিয়ে সোনাই নদীর পানি প্রবেশ করে তিনটি গ্রাম প্লাবিত করেছে। এই তিনটি গ্রামের অন্তত ১০০ পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।
জানা গেছে, ভারিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে গত এক মাসের মধ্যে চারবার তলিয়ে গেছে বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। কুশিয়ারা ও সোনাই নদীতে পানি নিষ্কাষিত না হওয়ায় হাকালুকি হাওড়ে বাড়তে থাকে পানি। ফলে অবণতি ঘটে বন্যার। হাওড়পাড়ের বর্নি, তালিমপুর, সুজানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পানিবন্দী হয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। তার উপর গত সোমবার ও মঙ্গলবারের টানা ভারিবর্ষণে উপজেলার নিচু ও উজান এলাকায় সমানতালে বন্যা দেখা দেয়। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫ হাজার মানুষ।
বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মঙ্গলবার বিকালে বলেন, আমার পুরো ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত। বড়লেখা সদরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। আমার ইউনিয়নের মানুষের জীবন প্রায়ই অচল। প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্ধি রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫-২০ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে এখনও কোনো খাদ্যসহায়তা মেলেনি। তবে আমরা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। তবে পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ শাহবাজপুর ইফপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। সবমিলিয়ে ১ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি সায়পুর আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, এই কেন্দ্রে ১২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারগুলোকে আমরা খিচুড়ি রান্না করে খাইয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে। তবে রাস্তাঘাটে পানি থাকায় সড়ক যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবসাকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।
তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান এখলাছ উদ্দিন বলেন, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজরাতুন নাঈম জানান, উপজেলার ২২টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা ছিল। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্গত ১৭০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
মন্তব্য করুন