মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা কমলা বদলে দিয়েছে জুড়ীর চাষিদের জীবন

November 24, 2020,

জুড়ী প্রতিনিধি॥ জুড়ী উপজেলার বাগানগুলোতে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সু-স্বাদু কমলা। পাহাড়ি জনপদের কমলা চাষিদের মুখে বইছে আনন্দের হাসি। আর এ কমলা বদলে দিয়েছে অত্রাঞ্চলের চাষিদের জীবন। কমলা পাকতে শুরু করায় ইতো মধ্যে বেচা-কেনা শুরু হয়ে গেছে। কমলা ফলনের পাশাপাশি বাজার দর সন্তোষজনক হওয়ায় চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ থেকে পাকা, আধাপাকা কমলা সংগ্রহ ও খাঁচা বন্দি করে পাইকারদের হাতে তুলে দিয়ে টাকা গুনতে গুনতে প্রশান্তির হাসি মুখে ঘরে ফিরছেন চাষিরা। এ অঞ্চল থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বেশী কমলা বিক্রি হবে হলে আশা করছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে এ মৌসুমে প্রায় দ্বিগুন বেশী কমলার ফলন ও বিক্রি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষি ও সংশ্লিষ্টরা।
অধিক মুনাফা লাভের আশায় ক্রেতা ও চাষিরা পাকা ও আধাপাকা কমলা স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজধানী, ভৈরব ও সিলেটে পিক আপভ্যান ও ট্রাক যোগে নিয়ে বিক্রি করছেন। উপজেলার গোয়াল বাড়ি ইউনিয়নের লালছড়া, শুকনাছড়া, ডুমাবারই, লাঠিটিলা, লাঠিছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল, সাগরনাল ইউনিয়নের পুটিছড়া, পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের কালাছড়া ও টালিয়াউড়া এবং জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাহাদুর পুরসহ অন্যান্য গ্রামের টিলা বাড়িগুলোতে কমলার পাশাপাশি বাতাবি লেবু, আদা লেবু, শাসনি ও জাড়া লেবুর বাগান রয়েছে। এছাড়াও অত্রাঞ্চলের মাটিগুলো মাল্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বিধায়, কৃষকরা ২/৩ বছর যাবততা আবাদে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।আর এ বাগানগুলোতে পেশা হিসেবে সর্বদা পরিচর্যা করা ওই গ্রামগুলোর মানুষের পেশায় রূপান্তরিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এক একটি বাগান থেকে প্রায়৩/৪ লাখ টাকার ফলন পাওয়াযায়। কমলা চাষে যেমন খরচ কম, তেমন শ্রমও দিতে হয় না এমন টাই জানিয়েছেন অত্র বাগানগুলোর কৃষকরা। ফলে, কমলাও মাল্টা চাষে অত্রাঞ্চলের কৃষকরা আগ্রহী হওয়ার পাশাপাশি স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন ্নইউনিয়নের ৯১ হেক্টও জমিতে ৮৫ টি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। তন্মধ্যে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে শতকরা ৮০ ভাগ বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোতে ২ জাতের কমলার চাষাবাদ হচ্ছে। এক জাতের নাম খাসি ও অপর জাতের নাম নাগপুড়ি।অত্রাঞ্চলের অধিকাংশ কমলা খাসি জাতের চাষাবাদ হচ্ছে। এ বাগানগুলো থেকে চলতি মৌসুমে ৫৫০ মেট্রিক টনক মলা লেবুর ফলন প্রাপ্তির আশা রয়েছে। সরেজমিনে আলাপ হয়, গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি মোরশেদ মিয়া (৫০) এর সাথে। আলাপ কালে তিনি বলেন, কমলা এক বছর বেশি হলে অন্য বছর কম হয়। এ বছর সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবারের ফলন মোটা মুটি ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, এবারে কমলার বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় বেশি, আকারের মোটা মুটি বড়। তিনি ইতো মধ্যে ১ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন।
আরো ৪ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানালেন। এছাড়াও একই গ্রামের কমলা চাষি শামীম আহমদ (৩০), যয়নুল মিয়া (২৯), হায়াছড়া গ্রামের আব্দুর রহিম (৫৫),কচুরগুল গ্রামের হাজী নজির আহমদ (৬১) ও শুকনাছড়া গ্রামের ইব্রাহিম আলী (৫৬) সহ অনেকে জানান,প্রতি বছর ভারতীয় কমলা বাংলাদেশে আসায় আমাদের কমলা বিক্রি করতে সমস্যা হয়। তা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন। জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, অত্রাঞ্চলের কমলা চাষিরা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কমলা বাগানের পরিচর্যা করেছেন। পোকা মাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করায় এবং কৃষি অফিসের দিক নির্দেশনা সঠিক ভাবে পালন করায় এ বছর জুড়ী উপজেলায় গত বছরের ন্যায় ভালো না হলেও মোটা মুটি ভালো হয়েছে। কারণ, সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া। তিন আরো জানান, অত্রাঞ্চলে কমলা চাষিদের কমলার পাশা-পাশি মাল্টা আবাদে আগ্রহ দেখে মাটির গুনাগুন যাচাই করে বিগত ২/৩ বছরে ৭০ জন চাষির মাঝে ৭০টি মাল্টার চারা বিতরণ এবং দার্জিলিং থেকে আমদানিকৃত সু-মিষ্ট ও সুস্বাদু কমলার কলম পরীক্ষামূলক ভাবে রোপন করার জন্য উপজেলার বিভিন্ন চাষিদের মাঝে বিতরণ করেছি। দেখা গেছে, কমলার ন্যায় অত্রাঞ্চল মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।নতুন করে এ বছর উপজেলার বিভিন্ন বাগানে মাল্টার অভাবনীয় ফলন হয়েছে।ভারতীয় কমলা যাতে আমাদেও বাজারে আসতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com