মৌলভীবাজারের হাওর পারের প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতি গ্রস্থ : ত্রাণ অপ্রতুল থাকায় অনেকেই পাননি
এস এম উমেদ আলী॥ বোরো ফসল ধান ও মাছ হারানোর পর পূরোদমে হাকালুকি পারের মানুষ এখন অসহায়। হাওর পাড়ে চলছে সুনশান নীরবতা। বছরে একবার ফসল হয় এই হাওরে, আর এ ফসল তোলে পূড়ো বছরের খাবার ও অন্যন্য খরছ নির্বাহ করেন। কিন্তু কয়েক দিনের টানা বর্ষনে কৃষক ও জেলে পরিবারের উলট-পালট হয়ে গেল। অসহায় মানুষ গুলো মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে আহাজারি করেছেন কি ভাবে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকবেন। সরকারী ভাবে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা একবারে অপ্রতুল।
মৌলভীবাজার জেলায় পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ৭টি উপজেলার লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হয়েছে। জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যা ৬০টি ইউনিয়ন। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ২৪,৮৭১টি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪৯,৭২৩টি পরিবার। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা ১,২১,৬০৬ জন ও আংশিক ২,৫৮,৩৪৮জন হাওর পারের মানুষ। সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি ৮৯১ টি ও আংশিক ৫,৯১০টি। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৮,৮৯৮ হেক্টর জমির বোরো ফসল । মাছ মরেছে ২৫ মেট্রিক টন। হাওরে হাঁস, ছাগল ও গরু মারা যাওয়ার পরিসংখ্যন এখনও নিরুপন করা যায়নি বলে জানায়।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ফসল হারানো দুর্গত মানুষদের জন্য জিআর ২০০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ এসেছে। যা ইতো মধ্যে বিতরণ করা শুরু হয়েছে। প্রতি পরিবার কে ৫০০টাকা করে ৩ মাস দেয়া হবে। ৯৮ মেট্রিকটন ভিজিএফ প্রতিপরিবারে ১মাসের জন্য ৩০ কেজি ১ হাজার পরিবারকে দেয়া হবে।
নতুন করে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার জন্য বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে ৫০০ মেট্রিকটন চাল ১০ লক্ষ টাকা, ১০০০ ভান্ডেল ঢেউটিন সহ ওএমএস চাল বিক্রির অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাকালুকি হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও অনেকে এখোনও ত্রান পাননি বলে অভিযোগ করেন। ভুকশিমইল এলাকায় উস্তার আলী, রমজান আলী জানান ত্রাণের চাল নিয়ে অনেকেই ঘরে ফিরলেও লাইনে দাঁড়িয়ে তারা কোন প্রকার ত্রাণ না পেয়ে ঘরে ফিরেন।
এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরকে হাওর উন্নয় বোর্ডেরর অন্তর্ভুক্ত না করায় মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসনী, মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মতিন, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযুদ্ধা মোঃ আজিজুর রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত সময়ের মাধ্যে এ তিন উপজেলার হাকালুকির অংশ হাওর ও জলাভূমি হাওর উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত করার জোর দাবী জানান।
মৌলভীবাজার জেলায় হাকালুকি হাওরসহ রয়েছে, কাউয়াদিঘী, কড়াইয়ার হাওর, বড়হাওর ও হাইল হাওরসহ ছোট বড় আরও বেশ কয়েকটি হাওর। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের প্রশ্ন কেন এতগুলো হাওর থাকার পরেও এ সব হাওরকে “হাওর উন্নয়ন বোর্ডের” অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দ্রুত হাওর উন্নয়ন বোর্ডের অন্তঃভুক্ত করে স্থায়ী সমাধানের দাবী করেন।
মন্তব্য করুন