মৌলভীবাজারে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি
ইমাদ উদ দীন॥ মৌলভীবাজারের সম্প্রীতির ঐতিহ্য অটুট রাখতে যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে ঐক্যের সংকল্প ব্যক্ত করা হলো ‘মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটি অব ইউএসএ’র বর্ণাঢ্য পরিচিতি সভায়। সিলেট বিভাগের বিশিষ্টজন ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে ‘মৌলভীবাজারে একটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’র দাবি তুলেছেন। এ দাবি আদায়ের সকলের সহযোগীতায় সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক এমপি এম এম শাহীন। সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির সানিসাইডের একটি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদি নয়া কার্যকরী কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এ সময় সদস্য-কর্মকর্তারা দৃপ্ত প্রত্যয়ে উচ্চারণ করেন প্রবাস প্রজন্মকে নিজস্ব ভাষা আর সংস্কৃতির মধ্যে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা ছাড়াও কম্যুনিটি ও দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিয়োজিত থাকার। সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান আলীর পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুনের উপস্থাপনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অন্তত: ২৩ জন। এরা হলেন বিশেষ অতিথি সাবেক এমপি সৈয়দা হাসনা বেগম, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র জাসদের সভাপতি আব্দুল মোসাব্বির, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, সেক্রেটারি জেড চৌধুরী জুয়েল, কম্যুনিটি লিডার আবু বকর চৌধুরী, মোদাব্বির হোসেন, নজরুল রহমান, সোসাইটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ জুবায়ের আলী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার লুৎফর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলওম্যান দিলারা রহমান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সহ-সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সোহাগ, সিলেট বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির নেতা চৌধুরী সালেহ, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি আহমেদ জিলু, সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান আলী, সাবেক সেক্রেটারি মোহাম্মদ কাইয়ুম, নির্বাহী সদস্য কাউসার আহমেদ, নিউজার্সি বোর্ড অব এডুকেশনের আবুল হোসেন সুরমান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক সৈয়দ এনায়েত আলী, কম্যুনিটি লিডার তোজাম্মল হোসেন। আলোচনার মাঝেই কর্মকর্তাগণকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছার মধ্য দিয়ে উপস্থিত সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
প্রধান অতিথি এম এম শাহীন বলেন, বাংলাদেশের সেরা অর্থনীতিবিদ সাইফুর রহমান এবং রাজনীতিক সৈয়দ মহসিন আলীর মত ব্যক্তিত্বরা মৌলভীবাজারের সন্তান। যাদের ছিল বিশাল হৃদয় এলাকার উন্নয়নে। তেমন রাজনীতিকদের অনুসারী হিসেবে আমি গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে অবতীণ হই। মৌলভীবাজারবাসী আমার প্রতি যে মমত্ববোধ প্রদর্শন করেছেন তা কখনোই ভুলবো না। আমি ছিলাম প্রবাসের প্রতিনিধি। তবে নির্বাচনের দুদিন আগের রাতে মটর সাইকেল প্রদানের অঙ্গিকার করেন একজন প্রার্থী। সে কারণে জয়ী হতে পারিনি। মাত্র ৫০ম ভোটের ব্যবধানে আমাকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এম এম শাহীন বলেন, অনেকে পছন্দ করেননি, নানা কথা বলেছেন। তবে বাস্তবে আমি দেখেছি যে, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের বিন্দুমাত্র কার্পণ্য ছিল না। সেটি ছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের অনন্য এক উদাহরণ। এম এম শাহীন উল্লেখ করেন, সেই নির্বাচনে আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে মৌলভীবাজারবাসী পরমতসহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী। ভোট যুদ্ধে পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও উদাহরন হয়ে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এম এম শাহীন বলেন, প্রবাস জীবন ছেড়ে বাংলাদেশে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম। ২৩ বছর যুক্তছিলাম প্রবাসীদের প্রতিনিধি হিসেবে। এখনও রয়েছি। তিনি বলেন, আশির দশকে আমরা দাবি উঠাই প্রবাসী মন্ত্রণালয়, নিউইয়র্কে বিমান আনা এবং সোনালী ব্যাংকের শাখা খোলার। সবকটি দাবি আদায়ে সক্ষম হয়েছি। মৌলভীবাজারে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে সকলকে সোচ্চার হতে হবে। তিনি মৌলভীবাজার সোসাইটির কর্মকর্তাগণকে অনুরোধ জানিয়েছেন অবিলম্বে সরকারের কাছে একটি আবেদন করার এবং তার কপি সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রদানের জন্যে। এই প্রবাসে সকল মৌলভীবাজারবাসীর মধ্যে ঐক্যের যে প্রয়াস চলছে, তা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। আজ যারা পরিচিত হলেন, তাদের মধ্যেও একত্রিত হবার মানসিকতা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, অনৈক্য কেউই দেখতে চাই না। একটি সমিতিই আমাদের কাম্য। তাহলে কোন দাবিও আড়ালে পড়বে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক এমপি সৈয়দা হাসনা বেগম বলেন, মৌলভীবাজারে একটি ভাল হাসপাতাল নেই। উন্নত চিকিৎসা নেই। এর ভিকটিম আমি নিজেও। ছেলেকে হারিয়েছি সুচিকিৎসার অভাবে। তিনি বলেন, জেলা সদরে একটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ মৌলভীবাজারের উন্নয়নে যে কোন উদ্যোগে আমাকে পাশে পাবেন। সকলেই দলমতের উর্দ্ধে উঠে সহায়তা দেবেন।
বক্তাদের আহবানের পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সোসাইটির কর্মকর্তারাও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে এখন থেকেই সোচ্চার হবার অঙ্গিকার করেছেন। জনপ্রিয় শিল্পী মিঠুন জব্বার, কৃষ্ণাতিথি, কনক এবং কামরুজ্জামান বকুলের গানের আমেজে গভীর রাতে সমাপ্ত হয় এ অনুষ্ঠান।
মন্তব্য করুন