মৌলভীবাজার জেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জুড়ীর জাকিরের প্রশংসনীয় তৎপরতা

November 3, 2016,

আব্দুর রব॥ মৌলভীবাজার জেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশংসনীয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন জুড়ী উপজেলার মানবাধিকার কর্মী জাকির হোসেন মনির। প্রশাসন তার সহযোগিতায় গত তিন বছরে জেলার ৭ উপজেলায় ১১৯টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছে।
জানা গেছে, গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের সিলেট বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন মনির মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার চাটেরা গ্রামের মৃত খুরশেদ আলীর কনিষ্ট ছেলে। ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে তিনি সাধারন মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মকান্ড চালিয়ে যান। অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত ও দরিদ্র মানুষের অধিকার আদায়ে মানবাধিকার সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিভিন্ন স্কুলে সেমিনার ও বিতর্ক প্রতিযোগেতিার আয়োজন করেন। তিনি জানান, তিন বছরে জেলা প্রশাসক, ৭ উপজেলার ইউএনও, থানার ওসি, জেলা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে ১১৯ বাল্যবিয়ে বন্ধ করাতে সক্ষম হয়েছেন। জেলার কুলাউড়া উপজেলায় প্রশাসনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে বন্ধ করিয়েছেন। এ কাজ করতে গিয়ে অনেকবার তিনি প্রভাবশালী মহলের রক্তচক্ষুর ও হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছেন।
এ উপজেলায় ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারী থেকে চলিত বছরের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করিয়েছেন। ১৯ অক্টোবর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের রজনপুর গ্রামের জনৈক বর এবং কর্মধা ইউনিয়নের কর্মধা গ্রামের জনৈক কনের অভিভাবকদের নিকট থেকে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বাল্যবিয়ে না দেয়ার ব্যাপারে মূচলেখা আদায় করেন। তার তৎপরতায় ২ অক্টোবর ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভ্রাম্যমান আদালত বাল্যবিয়ের অপরাধে বরের বাবাকে ১ মাসের কারাদ- প্রদান করেন।
মানবাধিকার কর্মী জাকিরের তৎপরতায় চলিত বছরের ১ মে পর্যন্ত জুড়ী উপজেলায় ১৮টি, ২১ জুলাই পর্যন্ত রাজনগর উপজেলায় ১৫টি, ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি,  ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত বড়লেখা উপজেলায় ৭টি, ৯ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৩টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছে প্রশাসন।
জুড়ীর সাগরনাল ইউনিয়নের সচিব তারা মিয়া জাল জন্মসনদ তৈরী করে ২০১৪ সালের ১৬ মে বরইতলী গ্রামের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে (১৪) বাল্যবিয়ে করতে যাচ্ছিলেন। এ বাল্যবিয়েটির খবর পেয়ে তা বন্ধ করতে জাকির হোসেন মনির পুলিশ নিয়ে কনের বাড়িতে উপস্থিত হলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হন। পরে তৎকালিন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়েটি বন্ধ হয়।
জুড়ী ইউএনও মোহাম্মদ নাছির উল্লাহ খান, বড়লেখা ইউএনও এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন ও কুলাউড়া মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা ইয়াছমিন জানান, জাকির হোসেন মনির বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশাসনকে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করছেন। ইতিপুর্বে তার দেয়া তথ্যে জেলায় অসংখ্য বাল্যবিয়ে বন্ধ হয়েছে। তার মতো সবাই সচেতন হলে, প্রশাসনকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে সামাজ বাল্যবিয়ের অভিশাপমুক্ত থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com