যৌন নির্যাতনের অভিযোগে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ ফের দ্বায়িত্ব নিতে তৎপর

February 16, 2019,

হোসাইন আহমদ॥ ছেলে শিক্ষার্থীদের সাথে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মৌলভীবাজার পৌর শহরের কাশীনাথ আলাউদ্দিন হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আইয়ুব আলীকে ২ বছর আগে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বরখাস্থকৃত অধ্যক্ষ ফের চেয়ারে বসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এদিকে তিনি ক্ষমতাশীল দলের একাধিক নেতাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় তদবিরও অব্যাহত রেখেছেন। এমন খবর শুনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অধ্যক্ষ বরখাস্ত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশের আলোকে পর পর তিন বার পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে তাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপিল করায় সিলেট শিক্ষা বোর্ড সর্বশেষ সিলেট শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ ফরহাদ রাব্বিকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি ঘটন করেছে।

ওই তদন্ত কমিটি চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাথে পৃথক পৃথক কথা বলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসময় অভিযোগকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষক, নৈশ্য প্রহরী, দারোয়ান ও সাবেক কমিটির সদস্যসহ ২৩ জন লোক সাক্ষাৎকার দেন।

বিদ্যালয় থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ওই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঁচজন শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ কর্তৃক যৌন হয়রানির অভিযোগ লিখিত ভাবে সভাপতিকে জানান। অভিযোগে তারা বলেন, অধ্যক্ষ তাদেরকে নানা ধরনের শাস্তি, পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয়, পরীক্ষায় প্রশ্ন বলে দেয়া, মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড বা নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সাথে প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে সঙ্গম করেন। অধ্যক্ষের এসব অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে তারা পরবর্তীতে বিষয়টি শ্রেণী শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অবহিত করেন। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধ্যক্ষের যৌন অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০১৬ সালের ৬ই ডিসেম্বর মো. আইয়ূব আলীকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন হইতে বিরত রাখা হয় এবং কেন তাকে অধ্যক্ষের আসন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না এর কারণ দর্শানোর জন্য সাত দিনের সময় দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিগত ২০১৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর অধ্যক্ষের দেয়া বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শাহ্ আব্দুল ওয়াদুদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘটন করে কর্তৃপক্ষ। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তিনি দোষী প্রমানিত হন এবং কলেজ গভর্নিং বডি ও তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে তাকে আবারও সময় দেয়া হলে তার বক্তব্যে কমিটি সন্তুষ্ট না হওয়ায় চলতি ২০১৭ সালের ২০শে আগষ্ট তাকে স্থায়ী বরখাস্তের আদেশ সিলেট শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করা হয়। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ অপিল করলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের আরবিটেশন বোর্ডের গোলাম কিবরীয়া তাপাদারকে আহ্বায়ক করে দ্বিতীয় বার আরেকটি তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়। তদন্ত করে ওই কমিটিও অভিযোগের সত্যতা পায়। এটাতেও বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ আয়ূব আলী আপত্তি জানান। পরবর্তীতে সিলেট শিক্ষা বোর্ড মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামছুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে আরেকটি তদন্ত কমিটি ঘটন করে। সর্বশেষ সিলেট শিক্ষা বোর্ড বর্তমান তদন্ত কমিটি ঘটন করে।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী এক শিক্ষার্থীর বাবা প্রতিবেদককে বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে আমরা লিখিত ও মৌখিক ভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছি। এর আগেও আমরা একাধিক তদন্ত কমিটির কাছে স্বাক্ষী দিয়েছি। নাম গোপন রাখার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলেন, বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ আইয়ুব আলী ফের চেয়ারে বসলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ থাকবেনা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিসি নিয়ে অনত্র চলে যাবে। শিক্ষার্থীরা বলেন, যে শিক্ষক অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীদের সাথে নোংরা কাজ করেন। সেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা উনার কাছ থেকে কি শিখবে ?

কাশীনাথ আলাউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক রোখসানা বেগম শাবির তদন্ত কমিটির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা ধারাবাহিক সাড়ে ১৫ ঘন্টা বিভিন্ন ভাবে তদন্ত করেছেন। প্রতিবেদন জমা দিলে ফলাফল পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ ফরহাদ রাব্বি বলেন, ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির অডিও রেকর্ডিং নিয়েছে। এ গুলো পর্যালোচনা শেষে তদন্ত প্রতিবেদন সিলেট শিক্ষা বোর্ডে জমা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মোঃ আইয়ূব আলী বলেন, সর্বশেষ তদন্ত কমিটি আমাকে ডাকলে আমার প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছি। কিন্তু এখনও তদন্ত কমিটি কোনো প্রতিবেদন দেয়নি। এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামছুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে যে তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়েছিল ওই কমিটির বিরুদ্ধে আমি আপত্তি জানিয়েছি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com