শকুন সংরক্ষণকারী ব্যক্তি ও সংস্থাকে সরকারি স্বীকৃতি ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে- পরিবেশ ও বনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার॥ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী শকুনের বিকল্প নেই। শকুন সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। কিন্তু, শকুনসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সরকারের একার পক্ষে কষ্টসাধ্য। তাই প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিবেদিত ব্যক্তিবর্গ, বিজ্ঞানীদের শকুন রক্ষার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার শকুন সংরক্ষণকারী ব্যক্তি ও সংস্থাকে সরকারি স্বীকৃতি ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার প্রদান করা হবে।
৪ সেপ্টেম্বর শনিবার আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে বন অধিদপ্তর আয়োজিত ওয়েবিনারে ঢাকাস্থ সরকারি বাসভবন হতে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার; সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল এবং অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। এছাড়াও, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এনাম উল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিদ মজুমদার বাবু, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সভাপতি ড এস এম ইকবাল, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন ওব নেচার এর বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রকিবুল আমিন এবং বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সার্কেলের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইউসিএন এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবিএম সরোয়ার আলম।
শকুন সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ বছর জানুয়ারি মাসে সরকার শকুনের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধ করেছে যা বাংলা শকুন রক্ষায় বিশ্বব্যাপি একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। অন্যান্য ক্ষতিকর ঔষধ যেমন ফ্লুনিক্সিন, এসিক্লোফেনাক যেন আমাদের দেশের বাজারে না আসে সে ব্যাপারেও মন্ত্রিপরিষদ নির্দেশনা দিয়েছে। শকুনের জন্য নিরাপদ ঔষধ মেলোক্সিক্যাম রোগাক্রান্ত পশুদের জন্য ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে দেশব্যাপী শকুনের জন্য ক্ষতিকারক ঔষধ ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে আমরা যে মাইলফলক অর্জন করেছি তা বিশ্ব সংরক্ষণ সম্প্রদায়ের কাছেও একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তিনি বলেন, শকুন সংরক্ষণে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশের দু’টি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৫ সালে শকুনের প্রজননকালীন সময়ে বাড়তি খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ও সুন্দরবনে দু’টি ফিডিং ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।
বনমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে প্রণীত দশ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিয়েই শকুন সংরক্ষণে বর্তমানে সকল ধরণের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৬ সালে অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরির্চযা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ১১৫টি হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুন উদ্ধার, পরিচর্যার পর পুনরায় প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছে। শকুনের আবাসস্থলের দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ ও শকুনের নিরাপদ এলাকার ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে শকুন সংরক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের ফলে হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গায় শকুনের প্রজনন সফলতা ৪৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট তারিখে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি’ এর ১০ম সভাতে শকুনের দু’টি হটস্পট যথা- হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা ও সুন্দরবনে বিদ্যমান শকুনের নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজস্ব খাতের আওতায় বাজেট বরাদ্দ এবং প্রতি দুই বছর অন্তর শকুনের অবস্থা মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এখন পর্যন্ত টিকে থাকা শকুনগুলোকে রক্ষায় সমন্বিতভাবে কাজ করার আহবান জানান মন্ত্রী।
মৌলভীবাজার জেলাধীন কুলাউড়ায় প্রভাবশালী কর্তৃক খাসি ও গারো জনগোষ্ঠীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র ও শারীরিক নির্যাতনের প্রতিবাদে শ্রীমঙ্গলে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্বরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার আয়োজনে এবং ছাত্র ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি প্রশান্ত কৈরির সভাপতিত্বে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন, শ্রীচুক যুব গারো সংগঠনের উপদেষ্টা সামুয়েল জোসেফ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এস কে দাশ সুমন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জলি পাল, সাংবাদিক’ কবি জাবেদ ভূঁইয়া, ছাত্র ইউনিয়ন জেলা কমিটির সভাপতি পিনাক দেব, খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক লেনচার জয়, ছাত্র ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ স্বাধীন দেব, সমাজকর্মী প্রিতম দাশ ও মিঠুন উড়াং প্রমূখ।
মন্তব্য করুন