শ্রীমঙ্গলে নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

June 2, 2020,

তোফায়েল পাপ্পু॥ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের  অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ইউপি  সদস্য হলেন উপজেলার ভুনবীর  ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য মিনারা বেগম।

এ ইউপি সদস্য বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দিয়ে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

তার বিরুদ্ধে টাকা না দিলে কার্ড করে দেন না বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।

এসব ভাতা পাওয়ার জন্য কার্ড পাবার আগে ও পরে ৫ হাজার টাকা না দিলে কার্ড বাতিল করার হুমকিও দেন এই নারী ইউপি সদস্য। আর টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে বললে নারী সদস্যের হেনস্তার শিকার হতে হয় সাধারণ জনগনের।

ভুনবীর ইউনিয়নের বাসিন্দা ছমেদ মিয়া বলেন, বয়স্ত ভাতা পাই না, গেলাম মহিলা মেম্বারনির কাছে। তিনি বললেন ভাতা করে দিবো, কিন্তু ভাতা পাওয়ার সাথে সাথে আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। তারপর অনেক দিন ঘুরাঘুরি করে কার্ড পাইনি। আমি গরীব মানুষ ভাবলাম কিছু টাকা দিয়েও যদি পাই। পরে মেম্বারনিকে বলেছি ভাতার টাকা পেলেই পাঁচ হাজার টাকা দিবো। পরে তিনি আমায় কার্ড করে দেন। যেদিন ব্যাংক থেকে আমি বয়স্ক ভাতার টাকা উঠাই, সেদিন তিনি ব্যাংকের নিচে দাড়িয়ে ছিলেন ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পরই তিনি পাচ হাজার টাকা নেন। শুধু আমার কাছ থেকেই নয়, আরো কয়েকজনের কাছ থেকেও নেন।

জ্যোৎসনা বেগম বলেন,  আমি গর্ববতী অবস্থায় ইউপি সদস্য মিনারা বেগমের কাছে গিয়েছিলাম গর্ভভাতার একটা কার্ড করে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন টাকা ছাড়া এসব কার্ড করা যায় না। আমার কাছে কোন টাকা ছিলো না। তিনি বলেন, যতবার টাকা পাইবায় অর্ধেক তাকে দিতে হবে। আমি গরীব মানুষ টাকার দরকার ছিলো তাই আমি রাজি হই। আমি ৪ বার তিন হাজার টাকা করে পাই। এর মধ্যে তিন বার তিনি টাকা উঠানোর সাথে সাথে অর্ধেক (১৫শ) করে নিয়েছেন। শেষবার আমি তাকে টাকা দেই নি। তিনি এই টাকা নেওয়ার জন্য আমার সাথে অনেক খারাপ আচরন করেন। বলেন আর জীবনেও আমার ও আমার পরিবারের কাউকে কার্ড করে দিবেন না। তিনি মোট ৪৫শ টাকা দিয়ে ছিলেন।

গ্রামের চেরাগ আলী নামের একজন বলেন, কার্ড করতে নাকি অনেক টাকা লাগে। উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হয়। উপজেলার কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে কার্ড করা যায় না। এই কথা বলে  মেম্বারনি আমার কাছ থেকে কার্ড করার আগে পাঁচ হাজার টাকা নেন। আমি ঋণ করে তাকে টাকা দেই। পরে আমাকে অনেক দিন ঘুরিয়ে কার্ড করে দেন।

এই গ্রামের একাধিক জনগন বলেন, তারা কার্ড করার আগেই মেম্বারনিকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। যারাই টাকা দিয়েছেন তাদেরই কার্ড হয়েছে। কেউ আগে টাকা না দিলে পরে টাকা তুলে দিতে হয়েছে। পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার পরও তিনি আরো টাকা দাবী করেন। যদি কেউ মুখ খোলে তাহলে মেম্বারনী তাদের কার্ড বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেন। মেম্বারনির লোকজন মারধরের হুমকি দেয়। তাই কেউ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চায় না।

ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) মো. নিয়াজ ইকবাল মাসুদ বলেন, আমাদের কাছেও অনেকে এই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ জনগণ ভয়ে উনার নামে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন না। তবে আমাদেরকে এলাকার জন প্রায়ই অভিযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মিনারা বেগম বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এটি সম্পুর্ন মিথ্যা। আমি কোন ভাতার কার্ড করার জন্য কারো কাছে টাকা পয়সা চাইনি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এলে আমরা সেটা তদন্ত করে দেখি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com