শ্রীমঙ্গলে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করছেন যুবকরা

তোফায়েল পাপ্পু॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই বিশ্বজুড়ে হানা দিলো করোনাভাইরাস। যার প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশও পড়েছে সংকটে।বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগও কমছে। তবে সরকারী উদ্যোগে মুজিব বর্ষে করোনাকাল ও পরবর্তী বাংলাদেশে বেকারত্ব ঘোচাতে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে কর্মসংস্থান ব্যাংক।এই প্রকল্পের অধীনে ২০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। বিনা জামানত ও সহজ শর্তের ঋণে আত্মর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যকেও কাজের ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্নসংস্থানের আয়োজনসহ স্বাবলম্বী হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার শতাধিক বেকার যুবক- যুবতী ও উদ্যোক্তারা। বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করে দেয়ার তাগিদে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই প্রতিষ্টানটি ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ্যে সৃষ্টি হয়েছিলো। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০১-২০১৯ পর্যন্ত উপজেলার ২৪৫২ জন বেকার-অর্ধবেকার ঋণ নিয়েছে ১৯ কোটি ৭৬ লাখেরও বেশী আর আদায় হয়েছে ১৯ কোটি ৩৬ লাখেরও বেশী।
২০২০ সালে মুজিববর্ষকে ঘিরে কর্মসংস্থান ব্যাংক নিয়ে এসেছে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ যা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে দুই বছরে ৫৭৫ জন, বিশেষ করে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুন ও যুবকরা আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই স্বাপেক্ষে ৯% সরল সুদহারে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। আর এতেই উপজেলার প্রশিক্ষিত ও শিক্ষিত তরুন বেকার যুবকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে বিপুল শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত তরুন-যুবক-যুবতী যারা ইচ্ছা থাকা সত্বেও শুধু দুর্বল আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারনে নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারছে না। পাশাপাশি রয়েছে এ এলাকায় শিল্প-কারখানার অভাব ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষেত্রের অভাব। সে কারনে অনেকেই চাকুরীর পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরেও কাঙ্খিত চাকুরী না পেয়ে ছদ্দবেশী বেকার হিসেবেই জীবন ধারন করছে। বিশেষ করে, এ এলাকার চা বাগান ও নৃ-তাত্বিক জনজাতিগোষ্টি অঞ্চলের মানুষের নেই নিজস্ব কোন ভিটেমাটি। রয়েছে ভূমি ও বাস্থভিটাহীন পরিবার যাদের নেই এদেশের কোথাও এতটুকু নিজস্ব স¤পত্তি। মূলত, দলিত, ভূমিহীন পরিবারের কর্মক্ষম ও শিক্ষিত সন্তানরাই রয়েছে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়। প্রশিক্ষিত একাধিক কর্মপ্রত্যাশি যুবক জানালেন, কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রতিই তাদের নজর সবচাইতে বেশী এবং মুজিববর্ষে বেকারত্ব ঘুচিয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক শ্রীমঙ্গল শাখা থেকে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ নিয়েছেন উপজেলার আলিশারকুল গ্রামের নাজমা আক্তার। তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি জানান, কোন ধরনের হয়রানি বা উৎকোচ ছাড়াই কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছি। আমি দুই লক্ষ টাকা ঋণ পেয়েছি। ঋণ পাওয়ার পর বাড়িতে দুগ্ধ খামার তৈরী করেছি। এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অত্যান্ত সৎ ও আন্তরিক। আবেদনের ৩দিনের মধ্যে আমি ঋণ পেয়েছি। আমার ধারনো ছিলোনা যে এতো সহজে আমি ঋণ পাবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। খোজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার আয়েশা আক্তার, মুসলিমবাগ এলাকার হাসিনা আক্তার দুই লক্ষ টাকা ও তিতপুরের রহিমা আক্তার এক লক্ষ টাকা নিয়ে দুগ্ধ খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এবং নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছেন।
মির্জাপুর ইউনিয়নের তাপস দেব নামে এক ব্যাক্তি বলেন তিনি, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ৪ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে ব্রয়লার খামার তৈরী করেছেন। ৩নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের তাজুল ইসলাম শামীম জানান, আমি এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক উপকৃত হয়েছি। এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে কোন প্রকার ঝামেলা হয় না। এই ব্যাংকের ম্যানাজার ও সকল কর্মকর্তাবৃন্দ অত্যন্ত ভাল ও আন্তরিক।
গন্ধর্বপুর গ্রামের দ্বিজয় চন্দ্র দেব জানান, অন্যান্য ব্যাংকে কোন ধরনের ঋণ নিতে হলে বিভিন্ন দালাল ধরে ঘুষ দিয়ে লোন নিতে হয়। কিন্তু কোন প্রকার হয়রানি ও ঘোষ ছাড়াই আমি কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে দুই লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। আমি ঋণ নিয়ে চা পাতার ব্যবসা শুরু করেছি। বর্তমানে আমি স্বাবলম্বী আছি। এই ঋণ পেয়ে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি।
কর্মসংস্থান ব্যাংক শ্রীমঙ্গল শাখা ব্যবস্থাপক মো. আলী আক্কাছ মিজি জানান, কোন প্রকার জামানত ছাড়াই কোন শিক্ষত যুবক যদি কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে তাহলে ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ২০ থেকে ৫ লক্ষ টাকা বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ নিতে পারবে। এ শাখা থেকে সর্বমোট ঋণগ্রহীতার ৮০% বেকার থেকে আজ স্বাবলম্বী ও অর্থনৈতিক ভিত্তির আওতায়। এ এলাকার যুবসমাজ অত্যন্ত সৎ ও কর্মদ্দোগী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বেকার যুবদের আত্মর্মসংস্থানে কর্মসংস্থান ব্যাংক মুজিববর্ষে বিশেষ কর্মসূচী হিসেবে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ ২০২০ গ্রহণ করেছে। সংগ্রহকৃত সীমিত ফান্ড দিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক বেকার যুবকে সহায়তা করা আমাদের লক্ষ্য। যুবশক্তিকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
ব্যাংক সুত্র জানা যায়, ঋণ বিতরণে ও আদায়ে সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ট এ শাখার কিছুটা রয়েছে সীমাবদ্ধতা। গত তিন মাসে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বঙ্গবন্ধু যুব ঋণের প্রকল্পে ১২০জনকে ১ কেটি ৯ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এদিকে জনবল সংকটে ভূগছে শাখাটি, মাত্র পাঁচজন লোকবল দিয়ে চলছে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার একাংশ জুড়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থলে ছয়টি পদে নেই জনবল। একজন করে প্রিন্সিপাল অফিসার, সেকেন্ড অফিসার, ক¤িপউটার অপারেটর ও নৈশপ্রহরী চালিয়ে নিচ্ছে দৈনন্দিন ব্যাংকের কর্মযজ্ঞ।
উল্লেখ, প্রতিটি পরিবারে কমপক্ষে একজন সদস্যকে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভিত্তির আওতায় আনা ও ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে এবং বেকার যুবদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুজিববর্ষে সারাদেশে দুই লাখ শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত বেকার যুবকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষেই দেয়া হবে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ।
মন্তব্য করুন