শ্রীমঙ্গলে ৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত : ডেঙ্গু নিধন ও নিয়ন্ত্রণে তৎপর শ্রীমঙ্গল পৌরসভা
এহসান বিন মুজাহির॥ শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। আর এই ডেঙ্গু নিধন ও নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা।
চলতি মাসে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়েছে দেশের ৬১ জেলায়। ইতোমধ্যে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার উদ্যোগে রোববার ৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে পৌর এলাকায় মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম, কাউন্সিলর কাজী আব্দুল করিম, মো. আলকাছ মিয়া, ছাদ উদ্দিন প্রমুখ।
গত ৯ জুলাই থেকে বুধবার ১২ জুলাই পর্যন্ত সরেজমিন পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কালিঘাট রোড, ৭ নং ওয়ার্ড এবং শ্রীমঙ্গল থানা ভবনসহ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মেয়র মো. মহসিন মিয়ার নির্দেশে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে পৌরসভার সকল স্থানে ছিটানো হচ্ছে জীবানুনাশক। একইভাবে পৌরসভার কাউন্সিলর ও সংশ্লিষ্টরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার উৎপত্তিস্থল, ময়লা আবর্জনা ও ড্রেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
পৌরসভার পক্ষ থেকে স্থানীয় কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। মশক নিধন কার্যক্রম উদ্বোধনের দিন থেকে এ পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশের ড্রেনগুলোতে মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে কার্যক্রম সরেজমিন উপস্থিত থেকে পৌর মেয়র মো. মহসিন মিয়া তদারকি করছেন।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল জব্বার আজাদ বলেন, সারাদেশে ডেঙ্গু প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু মহোদয়ের নির্দেশে ২নং ওয়ার্ডের কালিঘাট রোড, সিন্দুরখান রোডসহ বিভিন্ন বাসাবাড়ির আঙ্গিনা, উঠানে এবং ড্রেনে মঙ্গলবার ১১ জুলাই মশক নিধনের ওষুধ স্প্রে করেছি। ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করেছি এবং সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছি।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউনন্সিলর মীর এম এ সালাম বলেন, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু মহোদয়ের নির্দেশে ৭নং ওয়ার্ডের শান্তিবাগ, শাপলাবাগসহ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় মশা নির্মূলের লক্ষে বুধবার ১২ জুলাই মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করে বাসাবাড়িতে গিয়ে ওয়ার্ডবাসিকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছি। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
মশক নিধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চতুর্দিন বুধবার ১২ জুলাই শ্রীমঙ্গল থানা ভবনসহ আশপাশের এলাকায় কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: আমিনুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু বলেন, সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। তাই ডেঙ্গু নিধন ও নিয়ন্ত্রণে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা তৎপর রয়েছে। আমরা মশক নিধনে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি।পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রতিদিনই কোনো না কোনো ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষায় বাড়ির-উঠান, আঙ্গিনা ও চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পৌরবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন পৌর মেয়র মহসিন মিয়া।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের সুবিধার্থে মাননীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে থেকে বুধবার (১২) জুলাই একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে নির্দেশনা মোতাবেক সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার মূল্য ১. NS 1 for Dengue ৫০/-, ২. IgG for Dengue ৫০/ এবং ৩. IgM for Dengue ৫০/- নির্ধারণ করা হয়েছে। ভিন্নতর কোন পত্র জারী না হলে এই মূল্যে আগামী ১ (এক) মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই সময় ডেঙ্গু জ্বর বেড়ে যায়। ডেঙ্গু রোগটি ভাইরাসজনিত। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ জ্বর।
৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়।
ডেঙ্গু রোগীদের অবশ্যই হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ফার্মেসি থেকে ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। যারা এ রোগে আক্রান্ত হবে তাদের
প্রচুর তরলজাতীয় খাবার, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী আরো বলেন, ড্রেন, ময়লা আবর্জনা, বাড়ির আঙ্গিনা সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে। এটা পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় মোতাবেক সংশ্লিষ্টরা করবেন।
তিনি বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) উপজেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে এমপি স্যারসহ সবাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করেছি। সবাইকে সচেতন থাকার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ঢাকা থেকে কেউ জ্বর নিয়ে আসলে বা শ্রীমঙ্গলে আসার পর জ্বর হলে এবং জ্বরে আক্রান্তদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি।
আমরা সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। আমি মনে করি সরকার প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সবাই মিলে কাজ করলে শ্রীমঙ্গলের নাগরিকেেদকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারবো।



মন্তব্য করুন