শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা কেন্দ্রের ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন

আব্দুর রব॥ বড়লেখা উপজেলার ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জুয়েল বাংলাদেশ চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা কেন্দ্রের কার্যাদেশ পেয়ে ২৭ লাখ টাকার মেরামত ও সংস্কার কাজ সম্পন্নের পর সংশ্লিষ্ট অফিসে বিল জমা দেন।
৬ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা কেন্দ্রের ৪ কর্মকর্তা তার কাজের বিল থেকে অনৈতিকভাবে ১০ লাখ টাকা কেটে ফেলেন। গত ২৯ আগষ্ট ‘শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা ইন্সটিটিউট-ঘুষ না দেয়ায় ঠিকাদারের বিল কাটার অভিযোগ’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলে অবশেষে ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ চা বোর্ড উক্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারের যুগ্মসচিব ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য (অর্থ ও বাণিজ্য) ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরীকে সভাপতি করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব ও তদন্ত কমটির সদস্য সচিব লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত নোটিশ সুত্রে জানা গেছে, ঘুষ বাণিজ্যে অভিযুক্ত শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা কেন্দ্রের অভিযুক্ত মূখ্য বৈজ্ঞানিক ড. ইসমাইল হোসেন, উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্ত (উদ্ভিদ রোগতত্ব) সাইফুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী নয়ন হোসেন ও সহকারী ফ্যাক্টরী করনিক শফিকুল ইসলামকে আগামী ৬ অক্টোবর চা বোর্ডের চট্টগ্রামস্থ প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পৃথকভাবে তদন্ত বোর্ডে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগকারী ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জুয়েল ও শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলীকে আগামী ৫ অক্টোবর অভিযোগের স্বপক্ষের প্রমানাদিসহ তদন্ত কমিটির সম্মুখে উপস্থিত হতে অনুরোধ করা হয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের একটি কাজের সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ২৮ জানুয়ারী প্রায় ২৭ লাখ টাকার কাজের কার্যাদেশ পান বড়লেখার ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জুয়েল। কাজের গুনগত মান নিশ্চিত করে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি কাজ সম্পন্ন করেন। কাজ চলাকালীন বিটিআরআই’র ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে নানাভাবে হয়রানি করেন। কাজের বিল প্রদানের জন্য তারা ৬ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এক পর্যায়ে সহকারী প্রকৌশলী নয়ন হোসেন, মূখ্য বৈজ্ঞানিক ড. ইসমাইল হোসেন, উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ব) সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ফ্যাক্টরী করণিক শফিক আহমদ জোরপূর্বক ১ লাখ টাকা আদায় করেন। আরো ৫ লাখ টাকা না দিলে পুরো বিল দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। গত ২০ জুন বিল দেয়ার কথা বলে অফিসে ডেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ম্যাজারমেন্ট বুকে স¦াক্ষর আদায়ের চেষ্টা ও প্রাপ্য বিল ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮১ টাকার পরিবর্তে ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৫৫ টাকার বিল ধরিয়ে দেন সহকারী প্রকৌশলী নয়ন। বিলের আকাশ-পাতাল তারতম্য ও মনগড়া ম্যাজারমেন্ট দেখে তিনি বিল গ্রহণে অসম্মতি জানান। তখন নয়নসহ ৪ জন এ টাকা না নিলে পরে একটি টাকাও দেয়া হবে না বলে ভয় দেখান।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব ও তদন্ত কমটির সদস্য সচিব লুৎফুন নাহার মঙ্গলববার বিকেলে জানান, ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জুয়েল শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা কেন্দ্রের ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের সচিব বরাবরে ঘুষ বাণিজ্যের লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়ে গত ২৯ আগষ্ট বিভিন্ন পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বরের বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের অফিস আদেশে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন