সর্বনাশা মনুপ্রকল্পে পরিকল্পিত পরিকল্পনা ছাড়া কাজের নামে লোটপাট করে আগাম বন্যায় কৃষককূলের কাস্তের হাত আজ ভিক্ষুকের হাতে পরিণত হয়েছে।

May 8, 2017,

মোস্তাক চৌধুরী॥ সর্বনাশা অকাল বন্যা হাওড়ে হাহাকার, হাওড়কূলের মানুষের কান্না, বিষাদ আর আর্থনাত এর জন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত পরিকল্পনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওড়ের উন্নয়নের নামে প্রতি বৎসর মনু ধলাই প্রজেক্টের নামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড করে থাকে, ডুবন্ত বাঁধসহ বিভিন্ন বাধ মেরামতের নামে অথচ এই কাজগুলি করে তারা অপরিকল্পিত ভাবে। তারা প্রতি বৎসর উন্নয়নের নামে যে কাজ করে এই কাজ করতে তাদের কোন পরিকল্পনা থাকে না। তারা এই কাজ করতে যেমন হাওরকূলের মানুষের সাথে যেমন মত বিনিময় করেনি, তেমনী তাদের গড়ে তোলা বিভিন্ন পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি রয়েছে এদেরও কোন মতামত নেয়নি। মূলত তারা এই কাজ করে স্থানীয় ঠিকাদারদের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, কর্মচারী মিলে যে টাকা প্রতিবৎসর আসে সেই টাকা বাধ নির্মানের নামে মনু প্রকল্পের উন্নয়নের নামে হরিলোট করা ছাড়া আর কিছুই করেনা। হাওড়ের কৃষক কূলের কথা মনু প্রকল্পের মতো সিলেট বিভাগে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে কাজগুলি করে থাকে, তার পরিকল্পিত কোন পরিকল্পনা ছাড়াই করে তাকে। বরাদ্ধ আসলে তার পর এই টাকা কিভাবে হজম করবে এটাই তাদের মুল পরিকল্পনা হলো। মনু প্রকল্পের হাওড় কাউয়াদিঘি এলাকায় সরেজমিন গুড়ে দেখা গেছে, হাওড় কাউয়াদিঘি এলাকায় কয়টি ছোট বড় বীল রয়েছে, এ প্রকল্পের অধীনে, কতটি উজান থেকে পাহাড়ী ঢল নামার খাল বা ছড়া রয়েছে, সেই ছড়াগুলির উৎপত্ত্বি কোথায়? কোথা থেকে শুরু হয়েছে? কোথায় গিয়ে সেই খাল বা ছড়া নেমেছে? কতটি খাল বা ছড়া পানি উন্নয়ন কোর্ডের অধীনে রয়েছে? এই খাল বা ছড়া ভরাট হয়েছে কি না? এর কোন হিসাব মৌলভীবাজার জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে নেই। আদৌ তারা এর কোন হিসাব দিতে পারেনী, আমাদের এই প্রতিবেদকের কাছে। এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে আলাপ করে জানা গেছে এর কোন হিসাব তারা জানেনা, মৌলভীবাজার জেলার মনু প্রকল্পর সবচাইতে বড় প্রকল্প হচ্ছে রাজনগর উপজেলা ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত কাউয়াদিঘী হাওড়রে মনু প্রকল্প, এই প্রকল্পের অধীনে ভারত বা উজান থেকে যে পাহাড়ী ঢল নামে প্রতি বৎসর বর্ষার মৌসূমে, সে ঢলের সাথে বালী ও পলি এসে থাকে সেই বালীও পলিই ছড়া বা খাল দিয়ে হাওড়ের তলদেলে চলে যায়। তাই ক্রমান্নয়ে পাহাড়ী ঢলের বালী ও পলি হাওড়কূলের তলদেশ আসে আসে ভরে উঠেগেছে। এবং সে খাল ও ছড়া দিয়ে উজানের ঢল নামে সেই খাল ও ছড়া আস্তে আস্তে ভরাট হয়েগেছে, এসকল খাল খনন করে দিলে এবং সে খাল ও ছড়া দিয়ে উজানের নেমে আসা পাহাড়ী ঢল অনায়াসে দ্রুত হাওড় কাউয়াদিঘিতে নেমে গেলে নি¤œ এলাকার বোরো আবাদ তলিয়ে গেলেও মনু প্রকল্পের দুই তৃতিয়াংশ ফসল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেত। প্রতিবৎসর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড করে থাকে, এ কাজগুলি কোথায়? কেন? করা হয় তাহা ভূক্তবোগিরা জানে না, এই উন্নয়ের নামে টাকাগুলি নিয়ে হরিলোট না করে, এই টাকা দিয়ে পরিকল্পিত একটি পরিকল্পনা করে যদি হাওড় কাউয়াদিঘীর তলদেশে খনন করা হতো এবং কাউয়াদিঘী হাওড়ের সবকটি খাল ছড়া খনন করা হতো তাহলে এ অকাল বন্যা আর্শিবাদের নামে  মনু প্রকল্পের অধীনে থাকা কুষককূলের সর্বনাশের প্রকল্পে পরিণত হত না। মনু প্রকল্পের অধীনস্ত হাওড় কাউয়াদিঘী এলাকার সবকটি খাল ছড়া নদী নালা পাহাড়ী ঢলের বালী ও পলিতে ভরাট হয়ে ঘেছে এগুলি পানি উন্নয়ন বোর্ডের চোখে পড়েনী, এমনকি কয়টি ছড়া দিয়ে মনু প্রকল্পে পানি আসে তাও তারা জানেনা। তবে প্রতি বৎসর কয় কোটি টাকার ৩০% পেয়ে কয়কোটি আয় হলো তা তারা ভাল করে জানে।  তাদের কোন পরিকল্পনা নেই, কাজ আসলে কি ভাবে ভাগ বাটোয়ারা করতে হয় সেটা তারা ভালভাবে জানে। গেল বৎসর কুছিমুড়া নদী নামে একটি ছড়া স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির চাপে ২ বৎসরে ৮ কোটি টাকা বরাদ্ধে মুন্সীবাজার ফেঞ্চুগঞ্জে রোড থেকে বুড়ি ছড়ী, বুড়বুড়ি, সিংগুয়া হয়ে বালুয়ার ছড়া পর্যন্ত খনন করায়, হিংগুড়া, বুড়বুড়ি, বুড়িজুড়ি, ছাতলা, বড়ই উড়ি, ছোট বুড়বুড়ি, ছাড়–য়া, সামারী সহ ৮টি বিলের, ২০/২৫ টি গ্রামেরে, ২১/২২ টি হাওড়ের ধান পানিতে তলিয়ে গেলেও ২/৩ দিন পড়ে সেই ধান আবার পানির নীচ থেকে ভেসে উঠেছে। এই ধানের পুরো ফসল না হলেও ৮০% ফসল কৃষকের ঘরে উঠবে।

এ নিয়ে কথা হয় হাওড় কাউয়াদিঘী অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপানা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোলতান আহমেদের সংঙ্গে, এই সময় এই সমিতির আরো সদস্য মেন্দি মিয়া তরফদার, সুন্দর মিয়, ছায়াদ মিয়া তরফদার, শেখ হায়দার আলী সহ অনেকের সংঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন সমিতি সহ এলাকার সচেতন নাগরিকের চাপের মুখে মৌলভীবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা মখলিছুর রহমান তালুকদার এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করে কাজটি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু ছড়াটি যেভাবে খনন করার কথা ছিল সে ভাবে খনন করা হয়নি, ঠিকাদাররা কম লোট পাট করেনী। এছাড়া এই ছাড়ার সিংগুয়া হইতে বুড়বুড়ির মধ্যে খান ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার রহস্য জনক কারণে কাজ করা হয়নি। তবুও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘী প্রকল্পের এসডিও মখলিছুর রহমানকে অশেষ ধন্যবাদ জানায় হাওড়কূলের লোকজন। প্রতি বৎসর পানি উন্নয়ন বোর্ডে যে কাজগুলি লোটপাটের নামে করা হয়ে থাকে এই কাজগুলি যে ঠিকাদারের মাধ্যমে করা হয়, বিশেষ করে যে বাধগুলিতে কাজ করা হয় সেই বাধগুলি বাধের পাশ থেকে মাটি তুলে বাধগুলির কাজ করা হয়ে থাকে। যার কারণে বর্ষা আসার সাথে সাথে যে খাদ থেকে মাটি তুলে বাধ করা হয়, সেই বাধ ভেঙ্গেই আবার খাদেই চলে যায়। আমি হাওড় কূলের একজন ভুক্তভোগি কৃষকের ছেলে, তাই আমি বুঝি আমার এলাকার মানুষের যন্ত্রনার কথা, যারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী তারাতো আমাদের সিলেটের লোক নয় তারা হাওড় কূলের মানুষের আর্থনাত আর যন্ত্রনার কথা কি করে বুঝবে? পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওড় এলাকায় যে বাধগুলি মেরামত করে থাকে এই বাধগুলির নামই হলো “ডুবন্ত বাধ”, যদি এই বাধের নামই ডুবন্ত হয়ে থাকে, তাহলে এই বাধে কাজ করার পর যদি বাধটি পানিতে ভেসে যায়, তাহলে আমরা কাকে দায়ী করবো। ডুবন্ত বাধতো ডুববেই, আসল কথা হলো তাদের কাজের পরিকল্পনাই নয়ে ছয়ে তাহলে কাজ ভাল হবে। কিভাবে? এই হাওড় কূলের কৃষকদের এক মাত্র ফসল বোরো অবাধ যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে কাউয়াদিঘী হাওড় কূলের মানুষজনকে নিয়ে, পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি নিয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি পরিকল্পিত করিকল্পনা করতে হবে, তাহলে হাওড় কূলের মানুষেকে রক্ষা করা সম্ভব, আর এমন পরিকল্পনা যদি মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড না করে তবে তাদেরকে হাওড়কূলের মানুষজন মনু প্রকল্পে ঢুকতে দেবেনা বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাওড় কড়াদাইরে কাসেপুর পাম্প হাউজে একটি সুইস গেইট রয়েছে, সেখানে ৭টি পাম্প মেশিন রয়েছে এই পাম্প দিয়ে পানি সেচ করে গোটা বছর হাওড় কাউয়াদিঘীকে সুখিয়ে রাখবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মনু প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন, এই সুইস গেইটের ৭টি পাম্পের ৫টি পাম্পই অকেজ হয়ে গেছে। এই পাঁটি পাম্প গোটা বছরই বন্ধ থাকে। আর এই ৭টি পাম্প ভাল থাকলেও কাউয়াদিঘী হাওড়কে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই এখানে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প হাউজ প্রতিষ্ঠা করার কথা কয় বছর যাবৎ পানি উন্নয়ন বোর্ড করবে বলে, কিছুই করা হচ্ছে না। তারা শুধু আশার বানী আর লোট পাটের মহা উৎসব নিয়ে ব্যস্ত কাজের কাজ কিছুই করছে না। প্রতিবৎসর হাওড়কূলের মানুষকে আষাঢ়ের গল্প শুনিয়ে নিজের আখের ঘুছাতে ব্যস্ত হয়ে আছে। টেলিভিশনে বসে হাওড়  উন্নয়নের নামে, হাওড় উন্নয়নের বড় বড় নেতারা বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন। হাওড় কূলেরমানুষকে রিলিপ আর ব্যাংক ঋণ নিয়ে মুখ রোছক বক্তব্য দিচ্ছেন। কি করলে হাওড়কূলের মানুষের ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা করা যায়, এ নিয়ে কথা না বলে শুধু বন্যা নিয়ে কথা বলছেন। এ মহামারী সমস্যার হাত থেকে কিভাবে কৃষককূলকে আগামীতে রক্ষা করা যায় এ নিয়ে কয়জন কথা বালছেন। হাওড়কূলের মানুষকে রক্ষা করতে হলে পরিকল্পিত পরিকল্পনা মতো কাজ করাতে হবে হাওড় এলাকার হাওড় কাউয়াদিঘী উন্নয়ন নিয়ে একটি পরিকল্পিত পরিকল্পনা করতে হবে হাওড়কূলের মানুষকে নিয়ে, আর সেই পরিকল্পনা মতো প্রথম কাসেমপুর একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প হাউজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্বিতীয় উজান থেকে নেমে আসা বালু ও পলিতে ভরে উটা ছড়াগুলেকে খনন করতে হবে, হাওড় কাউয়াদিঘীর তলদেশ খনন করতে হবে, তবেই রক্ষা পাবে মনু প্রকল্প। ভূক্ত ভোগী হাওড়কূলের মানুষের কথা এ দিকে কি একটু নজর দিবেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ?

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com