স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হাকালুকি হাওরে ভীড় বাড়ছে পর্যটকদের

August 13, 2020,

ইমাদ উদ দীন॥ এশিয়ার অন্যতম ও দেশের সবচেয়ে বড় মিঠা পানির হাওর হাকালুকিতে এখন ভীড় বাড়ছে পর্যটকদের। জেলার প্রায় শতাধিক পর্যটন স্পট কোভিড-১৯ এর কারনে বন্ধ থাকায় উন্মুক্ত এই হাওরটিতেই বেড়েছে তাদের আনাগোনা। প্রতিদিনই দল বেঁধে ওখানে ছুটে আসছেন প্রকৃতি প্রেমিরা। ওখানকার ঢেউ জাগানিয়া সফেদ জলরাশি। অর্ধ ডুবন্ত হিজল করচেসহ জলজ প্রাণি। পাখির জল খেলি আর অবাধ বিচরণ দেখতে ওখানে আসতে কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানলেও মানছেন না অনেকেই। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি।
এমনটি জানাচ্ছেন হাওর তীরের বাসিন্দারা। তারা বলছেন হাওরটিতে আসতে কোনো বাঁধা না থাকায় ও একাধিক প্রবেশ পথ থাকায় বিশাল হাওরটিতে এখন বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা।
উপরে নীল আকাশ আর নিচে সফেদ জলরাশি। হাওরের বুকে কোনরকম মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে হিজল-করচ,বরুন,আড়ং আর মাখনসহ নানা জলজ বৃক্ষ। প্রাণি আর উদ্ভিদ। হাওরের জলে বয়ে চলছে ছোটবড় নৌকা। চলছে জেলেদের মাছ শিকার। আর মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। নয়নাভিরাম এই দৃশ্যটি এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মন কেড়ে নেয় ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের। তাইতো প্রতিদিনই ওখানে ছুটে আসছেন তারা। জানা যায় ঈদুল আযহার দিন থেকে এখনো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হাকালুকি হাওর। করোনা ভাইরাসের ভয় উপেক্ষা করে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ওখানে আসছেন। আর তা উপভোগ করতে ভীড় জমাচ্ছেন। এতে স্থানীয় নৌকার মাঝিদের আয় রোজগার বাড়ালেও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


জানা যায় দেশের অন্যতম হাওর হাকালুকি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া,জুড়ী ও বড়লেখা আর সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের ৩৯ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমি নিয়ে এর অবস্থান। এই দুই জেলার মধ্যে ৭৫ ভাগ পড়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। আর ২৫ ভাগ পড়েছে সিলেট জেলায়। ছোট বড় মিলে হাওরে রয়েছে ২৪০টি বিল। হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় কয়েকটি নদী ও গাঙ্গ। একসময় হাওরটিতে ১ হাজার ২০৩ প্রজাতির জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদ ছিলো। এখনো ওখানে রয়েছে অনেক বিরল ও বিলুপ্ত প্রজাতির মিঠা পানির দেশীয় মাছ,প্রাণি ও উদ্ভিদ। হাওরটিতে একসময় ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ ছিলো। ১১২ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আর ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখির আপন নিবাস। ১২ প্রজাতির উভয়চর। ৭০ প্রজাতির সরীসৃপ ৫৯ প্রজাতির স্থন্যপায়ী প্রাণি। যার বিরাট একটি অংশ আজ অবহেলায় বিলুপ্ত হতে চলছে। তারপরও তার মনকাড়া রুপ মাধুর্য আকৃষ্ট করে প্রকৃতি প্রেমিদের। প্রতিবছর বর্ষা এলেই হাকালুকি হাওরে পর্যটকের ভীড় বাড়ে। এবার করোনার কারনে যেখানে পর্যটক না আসারই কথা। এখন উল্টো সেখানে উপছে পড়ছেন। এর কারন হিসেবে জানাগেল করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পর্যটন স্পট সমৃদ্ধ এজেলার সব পর্যটন স্পট ও কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় এখানে ভিন্ন স্পট দিয়ে প্রবেশ করে বিশাল এই হাওরটিতে ভ্রমণ করছেন। ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে অর্ধ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে এমনটি বলছেন স্থানীয়রা। হাকালুকি হাওর ঘুরতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। কেউ কেউ এসেছেন বন্ধুদের সাথে। জুড়ীর কন্টিনালা নদীর পাড়,জায়ফরনগর,বেলাগাঁও ও শাহপুর গ্রাম। কুলাউড়ার ভুকশিমইল ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম আর বড়লেখার হাওরপারের হাল্লা গ্রাম। সরজমিনে এমন চিত্রই ধরা পড়লো। সড়কের পাশ ঘেঁষে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে ছোটবড় নৌকা। মানুষজন দর কষাকষি করে সেসব নৌকায় ওঠে হাওরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কুলাউড়ার ভূকশিমইল কালেশা মাস্টার বাড়ি ও বড়লেখা হাল্লা গ্রামের পাখিবাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন জাতের পাখিদের ওড়াওড়ি আর বাসস্থানের দৃশ্য দেখছেন। হাওরের বুকে চলছে ছোটবড় নৌকা। মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াচ টাওয়ার আর বনবিভাগের বিট অফিসের ওপর দাঁড়িয়ে হাওরের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য অবোকলন করছেন পর্যটকরা। ঘুরতে আসা পর্যটকদের কেউ কেউ ওয়াচ টাওয়ার থেকে হাওরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। সাঁতার কাটছেন। ওয়াচ টাওয়ারে দায়িত্বরত লোকজন তাদেরকে সতর্ক করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। সন্ধ্যা অবধি সুর্য ডুবার দৃশ্য দেখতে সেখানে মানুষজন অবন্থান করছেন। হাওরে ঘুরতে আসা সিলেটের এমসি কলেজ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়েক,তানভীর,আফজাল, সামিরা ও তাসনিহা বললেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন থেকে তারা ঘরবন্ধি। অনেকদিন থেকে ঘোরাঘুরি হয়নি। প্রকৃতির কাছকাছি যাওয়া হয়নি। ভেতরে একরকম অস্বস্তি কাজ করছিল। ভাবলাম পরিবার ও বন্ধুদের সাথে হাওর থেকে ঘুরে আসি।
এখানে এসে ভালো সময় কেটেছে। এখানে সূর্যাস্ত দেখতে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। তবে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেননা দেখে তাদের খারাপ লাগছে বলে জানালেন। ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা সাব্বির আহমদ আকন্দ বললেন, ‘বর্ষায় হাওরের সৌন্দর্য দেখতে অন্যরকম ভালো লাগে। এখকার পরিবেশ আমাকে বার বার টানে। তাই প্রাণের টানে এখানে ছুটে এসেছি। অসম্ভব ভালো লাগছে। আসার সময় সড়কপথে কষ্ট হয়েছে। তবে হাওরের রূপ দেখে তা ভুলে গেছি।
নৌকা চালক শাহ তামিম আলম, সমির আলী ও শৈলেন দাশ জানালেন তারা বর্ষাকালের এই সময়টার জন্য বছর জুড়ে অপেক্ষায় করেন। এবছর তারা দুশ্চিনতায় ছিলেন। কিন্তু না এবছর তাদের আয়-রোজগার আরও বেড়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com