হাওরের কান্না: ক্ষতিগ্রস্থ ২৫ হাজার পরিবার, চলছে সরকারী ত্রাণ বিতরণ

April 29, 2017,

ওমর ফারুক নাঈম॥ হাওরের বোরো ধান অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে যাওয়ার ফলে দূর্ভোগে কাঠাচ্ছেন হাওর পারের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো। অকাল বন্যায় হাওরের বোরো ধান ও মাছ হারানোর পর পূরোদমে হাকালুকি পারের মানুষ এখন অসহায়, তাদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৮,৮৯৮ হেক্টর জমির বোরো ফসল ও মারা গেছে ২৫ মেট্রিক টন মাছ। হাওর পারের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারে সরকারিভাবে বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী। যা চাহিদার তুলনায় কম।

মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল, সোনাদিঘি ও কইরকোনাবিল, কড়াইয়ার, কাঞ্জার, মানিক ও বড়হাওরসহ ছোট-বড় ৩০ থেকে ৩৫টি হাওর। বছরে একবার ফসল হয় এই হাওরগুলোতে, আর এ ফসল তোলে সারা বছরের খাবার ও অন্যান্য খরচ নির্বাহ করেন কৃষকরা। কিন্তু কয়েক দিনের টানা বর্ষনে কৃষক ও জেলে পরিবারগুলো হতাশায় দিনানিপাত করছে।

সরকারীভাবে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ৭টি উপজেলার লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হয়েছে। জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যা ৬০টি ইউনিয়ন। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ২৪,৮৭১টি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪৯,৭২৩টি পরিবার। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা ১,২১,৬০৬ জন ও আংশিক ২,৫৮,৩৪৮জন হাওর পারের মানুষ। সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি ৮৯১ টি ও আংশিক ৫,৯১০টি। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৮,৮৯৮ হেক্টর জমির বোরো ফসল। মাছ মরেছে ২৫ মেট্রিক টন। হাওরের গরু ছাগল ও হাঁস মারা যাওয়ার পরিসংখ্যন এখনও নিরুপন করা যায়নি বলে জানা যায়।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারীভাবে ফসল হারানো দুর্গতদের জন্য জিআর ২০০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ এসেছে। ৯৮ মেট্রিকটন ভিজিএফ প্রতিপরিবারে ১মাসের জন্য ৩০ কেজি ১ হাজার পরিবারকে দেয়া হবে। প্রতি পরিবার কে ৫০০ টাকা করে ৩ মাস দেয়া হবে। যা ইতো মধ্যে বিতরণ করা শুরু হয়েছে।

এছাড়া নতুন করে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার জন্য বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে ৫০০ মেট্রিকটন চাল ও ১০ লক্ষ টাকা, ১হাজার ভান্ডেল ঢেউটিন সহ ও এমএস চাল বিক্রির অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় হাকালুকি হাওরের ফারুক মিয়া নামের এক কৃষকের সাথে তিনি বলেন, আমাদের সকল ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অথচ এ বোরো ধান দিয়েই আমাদের সারা বছরের সংসার চলত। এখন কিভাবে চলবে আমাদের এ সংসার তা নিয়ে চিন্তিত। ছেলে-মেয়েগুলোর পড়ালেখার খরচ কিভাবে চালাব। এ নিয়ে যেন চিন্তার কোন শেষ নেই।

কৃষক আব্দুল মতিন জানান, আমাদের ৫০বিঘা জমির সমস্ত বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অথচ আমরা এখন পর্যন্ত সরকার থেকে কোন ত্রাণ সামগ্রী পাইনি।

মৌলভীবাজার জেলায় হাকালুকি সহ রয়েছে ছোটবড় ৩০ থেকে ৩৫ টি হাওর। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের প্রশ্ন কেন এতগুলো হাওর থাকার পরেও এ সব হাওরকে হাওর উন্নয়ন বোর্ড ও দূর্যোগপূর্ণ এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হচ্ছেনা।

 

 

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com