হাকালুকিতে মাছ খেয়ে মরছে হাঁস! মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে ছিটানো হচ্ছে চুন ও ঔষধ

April 20, 2017,

এম. মছব্বির আলী॥ হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে মাছ ও পোকা খেয়ে মরছে পোষা হাঁস। গত কয়দিনে সহস্রাধিক হাঁসের মারা গেছে দাবি খামারিদের। এদিকে এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে মাছ মড়ক বন্ধে কুলাউড়া মৎস্য অফিসের উদ্যোগে ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে ছিটানো হচ্ছে চুন ও ঔষধ। এতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং দ্রুত মাছ মরা বন্ধ হবে বলে উপজেলা মৎস্য অফিস দাবি করছে। কৃষকরা বলছেন, ১৫ এপ্রিল শনিবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ের পর বাতাসের সঙ্গে ভয়ানক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন থেকে হাওরের মাছ মরতে দেখা যায়। সেই মাছ খেয়ে এখন মারা যাচ্ছে হাঁস।
হাকালুকি হাওরে পানিতে ভাসতে থাকা মরা হাঁস বাতাসে ঠেলে কিনারায় নিয়ে আসতে দেখা গেছে সরেজমিন পরিদর্শণকালে। তা কুঁড়িয়ে আনছেন খামারিরা। হাকালুকি পাড়ের বাসিন্দা কৃষক আবুল হোসেন, মলিক মিয়া ও সবু মিয়ারা বলেন, পানিতে ধান নিয়েছে। অভাবের সংসার হাঁসের ডিম বিক্রি করে চালাতেন। হাঁস মরে যাওয়ায় একটি এনজিও থেকে তোলা ঋণ কিভাবে শোধ করবেন এ নিয়ে চিন্তিত তারা। হাকালুকি হাওর পাড়ের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার আশিঘর গ্রামের মাইজভাগ এলাকার বাসিন্দা কাদিম শাহ বলেন, খামারিরা হাওরে হাঁস ছাড়লে মাছ ও পোকা খেয়ে একের পর এক হাঁস মারা যায়।


কৃষি ক্ষেতের পাশাপাশি এনজিও থেকে উত্তোলিত ঋণের টাকায় হাঁস কিনে ডিম বিক্রি করে সংসার চালানোর আশা করেছিলেন হাওরবাসী। এনজিও থেকে তোলা সেই ঋণ এখন তাদের গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্র জানায়, মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিন হাকালুকি হাওরে চুন ও ঔষধ ছিটানো হবে। শুধুমাত্র সোমবার বিকেলে ও মঙ্গলবার সারাদিনে ৩ হাজার ৩শ কেজি চুন এবং সাথে ঔষধ ছিটানো হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হাকালুকি হাওরের চকিয়া, ফুটবিল, গৌড়কুড়ি ও কাংলি বিলে চুন ও ঔষধ ছিটানো হয়। চুন ও জিওলাইট ঔষধ ছিটানোর পর পানির রং পরিবর্তণ হচ্ছে।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, পুরোপুরি অ্যামোনিয়া গ্যাসে আক্রান্ত মরা মাছ খেলে হাঁসও মারা যাবে। তবে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে কৃষকদের বা হাঁসের খামারিদের সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ তার।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, এত বড় হাওরে যে পরিমান চুন ও ঔষধ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। তবে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না দুর্যোগ কাটছে এবং অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। চুন ও ঔষধের যোগান প্রসঙ্গে তিনি জানান, আপাতত এই বিষয় নিয়ে না ভেবে দুর্যোগ থেকে মুক্তির জন্য ম্যানেজ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, হাকালুকি হাওরে চৈত্র মাসের অকাল বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধান পচে পানি দুষিত হয়ে গত ২-৩ দিন থেকে ব্যাপক হারে মাছে মড়ক লেগেছে। এতে ধান আর মাছ পচা দুর্গন্ধে ভারি হয়ে উঠে হাওরের বাতাস।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com