হাকালুকি হাওরে মরা মাছ আর পচা ধানের দুর্গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস

April 17, 2017,

বিশেষ প্রতিনিধি: হাকালুকি হাওরের ধান পচার ফলে কলচে আর ভারি হয়েছে পানি। এতে ব্যাপক হারে মরছে মাছ। ধান আর মাছ পচা গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। এমন পরিস্থিতিতে হাওর তীরের মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে।
সরেজমিন হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিলে গেলে দক্ষিণ হাকালুকি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির লোকজন জানান, চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় ২৫ সহস্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধানের পাশাপাশি হাকালুকি হাওরের ছোটবড় ২৩৭টি বিলও তলিয়ে যায়। জলমহালগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাওরময় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধান রোদে পচন ধরে। এতে পানি দুষিত হয়ে ব্যাপকহারে মাছে মড়ক লেগেছে। হাওরের চকিয়া বিলে ৩ বছরের জন্য ইজারা নেয়ায় ইজারাদার সেখানে ১৫ লাখ টাকার পোনা মাছ অবমুক্ত করেন। কিন্তু মাছের মড়কে সেই তারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবেন বলে জানান। এব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সরেজমিন রোববার হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিল পরিদর্শণ করেন।
হাকালুকি হাওর তীরের ভাটেরা ইউনিয়নের কবির আহমদ, নোমন আহমদসহ বেড়কুড়ি, দক্ষিণভাগ গ্রামের মানুষ জানান, হাওর থেকে যখন বাতাস আসে তখন দুর্গন্ধে যেন নাড়ি ভূড়ি ছিড়ে বমি আসে। মাছ আর ধান পচে একাকার। দুর্গন্ধে এলাকায় বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শণকালে হাকালুকি হাওরে প্রচুর মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়।

ভেসে উঠা মরা মাছের মধ্যে ছিলো পুটি, টেংরা, ভেদা, বাইলা, বোয়াল মাছ, বোয়াল মাছের পোনা, চান্দা, পাবদা এবং রুই জাতীয় মাছের ছোট পোনা মরে ভেসে উঠছে। তলিয়ে যাওয়া ধান ও পচা মাছের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে হাওর জুড়ে। হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, হাকালুকি হাওর কেবল এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর নয়, দেশের সর্ববৃহৎ মিঠা পানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। এখানে ২-৪ বছরের ব্যবধানে পাহাড়ী ঢলে অকাল বন্যা হয়। কিন্তু এবারের মত চৈত্র মাসে কখনও বন্যা হয়নি। এই অকাল বন্যায় ধানের পচনে মাছেও মড়ক লেগেছে। ফলে মিঠা পানির এই মৎস্য প্রজন্ন কেন্দ্রটিতে মৎস্য প্রজনন হুমকির মুখে পড়বে। সংকট সৃষ্টি হবে মাছেও। এমনিতে নেই ধান আর সেই সাথে যদি মাছও না থাকে তাহলে হাওর তীরের মানুষের জীবন জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্র জানায়, মাছ মরার কারণ হলো অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া আধাপাকা ধান ও ধানগাছ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করেছে। ধান গাছে এবং ঘাস নিধনের বিষের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব। হঠাৎ পানির পিএইচ কমে যাওয়া। বর্তমান পিএইচ ৫ দশমিক ৮। অ্যামোনিয়ার পরিমান বৃদ্ধি এবং দ্রবিভুত অক্সিজেন হ্রাস (৫পিপিএম)। এ অবস্থা করণিয় হলো হাওরে সকল ধরনের ফিশিং বন্ধ করা, পানির ট্রিটমেন্ট করা (যদিও তা অনেক ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য)।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, এই অবস্থা এক ধরণের দুর্যোগ। হাকালুকি হাওরের মাছ মরা বন্ধে সাময়িক মাছ ধরা বন্ধে মাইকিং করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাওর সংলগ্ন এলাকায় জনসচেতনতা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com