হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মীসভা, দ্রব্যমূল্য কমানো এবং বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি প্রদানের দাবি

March 20, 2023,

স্টাফ রিপোর্টার॥ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, বজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি এবং ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে মৌলভীবাবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন।

২২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টায় শহরের চৌমুহনাস্থ দলীয় কার্যালয়ে মৌলভীবাবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত  কর্মীসভায় এই দাবি জানানো হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, মৌলভীবাবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহিন মিয়া, কোষাধ্যক্ষ সুহেল আহমেদ সুবেল, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন জুড়ী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, সদস্য শাহিন মিয়া, আলমগীর হোসেন প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলেন দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে হোটেল শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। চাল, ডাল, তেল, লবন, পিয়াজ, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে হোটেল শ্রমিকদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়ছে। তার উপর সরকার জনজীবনের সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে আবারও গ্যাস, বিদ্যুত, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলে মালিকরা প্রতিটি খাদ্যের দাম বাড়িয়েছেন কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি একটি টাকাও বাড়াননি।

সরকারও মালিকদের স্বার্থরক্ষায় ৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের জন্য নি¤œতম মজুরি বোর্ড গঠন করেননি। সরকারের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে হোটেল মালিকরাও দেশের শ্রমআইন ও রাষ্ট্রীয় আইনেরও তোয়াক্কা করেন না। যার কারণে হোটেল শ্রমিকদের সকল প্রকার আইনী অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়।

বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬(অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ধারা ২(২ক) এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধিমালা-২০১৫ এর বিধি ১১১(৫) অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিককে উৎসব বোনাস এবং শ্রমআইনের-এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ৪৫ দিনের গ্রাচুইটি, ২৬(ক) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থ্যতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদানের আইন থাকলেও হোটেল শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। হোটেল মালিকরা সরকারী আইন লঙ্ঘন করে মনগড়া নিয়মে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। হোটেল শ্রমিকরা দৈনিক ১২/১৪ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, যার কারণে হোটেল শ্রমিকদের  মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সভা থেকে আসন্ন রমজান মাসে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, ঈদুল ফিতরে মাসিক বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাস প্রদান এবং ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর, অবিলম্বে হোটেল-রেস্টুরেন্ট সেক্টরে নি¤œতম মজুরি বোর্ড গঠন করে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ, দফায় গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো এবং স্বল্পমূল্যে রেশনিং চালুর দাবি জানান।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com