৫০টি পানপুঞ্জি’র আড়াই হাজার একর ভুমি খাসিয়াদের দখলে : মামলা দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার : চায়ের রাজধানী ও পাহাড়ি এলাকা অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের প্রায় ৫০টি পান পুঞ্জির অধিনে প্রায় আড়াই হাজার একর জমি দখলে রয়েছে। পুঞ্জির প্রায় ৪শ পরিবারের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ হাজার। এই ১ হাজার মানুষ জেলার চা বাগান অধ্যুষিত বিভিন্ন পাহাড় ও টিলা দখল করে বসে আছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এসব দখলীয় জমিতে চা বাগান’র উল্যেখ করে বিভিন্ন পুঞ্জির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এক চা বাগান সূত্র জানায়, একটি পুঞ্জি সর্বনিম্ন ৫০ একর জমি দখল করে থাকলে প্রায় ৫০টি পান পুঞ্জির দখলীয় জমির পরিমান হয় আড়াই হাজার একর। জেলার রাজনগর উপজেলার খাসিয়াদের দখলীয় জমির বিরুদ্ধে উত্তরভাগ ও ইন্দানগর চা বাগান কতৃপক্ষ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। মামলা সূত্র জানায়,বাগানের ইন্দানগর টিজি মৌজার এসএ খতিয়ান ১৫ ও আর এস খতিয়ান-১ এসএ-৫১৩ দাগ ও আরএস-২২১২ নং দাগের প্রায় ১০১ একর জমি খাসিয়াদের দখল থেকে উদ্ধার করতে জজ আদালতে মামলা নং ২৩/২০১১ ও ১৮/২০১৮ দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজহারে বলা হয়, খাসিয়াদের দখলে থাকা ১০১ একর জমি চা বাগানের। একসময় চা বাগানে এসব খাসিয়ারা চাকুরীর সুবাধে চা বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের বসবাস করতে দেয়। এখন তাদের সরানো যাচ্ছে না। বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ লোকমান চৌধুরী বলেন, উত্তরভাগ ও ইন্দানগর চা বাগানের জন্ম ১৮৮৬ সালে। বাগানের মোট জমি ৩৯৪৬.২২ একর। বেধখল রয়েছে ৭৩১ একর জমি। বাগানে চা শ্রমিকের মোট জনসংখ্যা ৫ হাজার। তিনি বলেন, ইন্দানগর (ইনাই) পান পুঞ্জিতে মোট ১৮ পরিবারের প্রায় ৭২জন খাসিয়া বসবাস করছেন। গড় হিসেব ধরা হলে ১০১ একর জমির মধ্যে জনপ্রতি ১ একর ৮৪ পয়েন্ট পেয়ে থাকেন। এখানে বসবাস ছাড়াও অন্যান্য পুঞ্জিতে তাদের বাড়িঘর রয়েছে। তাদের বসবাস করা জমির খাজনা প্রতিনিয়ত বাগান কতৃপক্ষ দিয়ে আসছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ওরা যাতে জমি ছেড়ে না যায়, বাগানে অবৈধভাবে স্থানীয় দখলদারেরা তাদেও ‘সেল্টার’ দেয়। তিনি বলেন, তাদের সংখ্যালঘু বলা হচ্ছে। কিন্তু উল্টো বাগান কর্তৃপক্ষকে ওরাই নির্যাতন করছে। এছাড়া জেলার অন্যান্য পান পুঞ্জির মধ্যে রয়েছে নাহার পান পুঞ্জি, মদনমোহনপুর চা বাগান পুঞ্জি, পার্থখলা চা বাগান পুঞ্জি, বরমচাল পুঞ্জি, কেরামতনগর চা বাগান (মাধবকুন্ড) পুঞ্জি, শাহবাজপুর পুঞ্জি, পাল্লাতল পুঞ্জি,ঝিমাই পুঞ্জিসহ আরও বেশ ক’টি পান পুঞ্জি।
জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মদনমোহনপুর ও প্রেমনগর চা বাগানের সাবেক ব্যবস্থাপক এএম শাহজাদা সোহাগ বলেন, মদনমোহনপুর ও পার্থখলা চা বাগানের বিরাট একটা অংশ খাসিয়ারা দখল করে আছে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মামলা চলছে। তিনি বলেন, মদনমোহনপুরে প্রায় ৬০ একর ও পর্থখলায় প্রায় ১শ একর জমি খাসিয়ারা দখল করে ভোগ করে আসছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাসিয়াদের ইনাই পান পুঞ্জির প্রধান (মন্ত্রী) গায়েস আনসে বলেন, জেলা জুড়ে আমাদের প্রায় ৬৪টি পান পুঞ্জি রয়েছে। ইনাই পুঞ্জিতে ২২ পরিবার নিয়ে আমরা বসবাস করছি প্রায় ৯৮জন আদিবাসী। তিনি বলেন, আমরা যদি বাগানের জমি জোর করে দখল করে থাকি, তবে কাগজ পত্রে প্রমাণ করতে হবে। প্রায় ৩০ বছর যাবৎ এই পুঞ্জিতে আমরা আছি। কার কাছ থেকে খাসিয়ারা জমি পেল এমন প্রশ্নের জবাবে ‘গায়েস আনসে’ বলেন, বাপ-দাদার আমলে এখানে পুঞ্জি ছিল। এরই আলোকে আমরা ভোগ করে আসছি। তিনি বলেন, উত্তরভাগ ও ইন্দানগর চা বাগানের সাথে জমি নিয়ে আমাদের ৩টি মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলো আমি দেখভাল করে আসছি।
মন্তব্য করুন