৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী-ফ্রান্স প্রবাসীর স্ত্রীকে বের করে দিলেন শ্বশুর ও ভাসুর
আব্দুর রব॥ বড়লেখায় ফ্রান্স প্রবাসীর স্ত্রী খালেদা বেগমের কাছে ভাসুর বিদেশ যাওয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করেন শ্বশুড় রফিক উদ্দিন ও ভাসুর নজমুল ইসলাম। দুই শিশু সন্তানের জননী গৃহবধু টাকা দিতে না পারায় শ্বশুড় ও ভাসুর নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। শ্বাশুড়ি হারিছুন নেছা পুত্রবধুর পক্ষে কথা বলায় তারা (শ্বশুড় ও ভাসুর) তাকেও হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এব্যাপারে গৃহবধু খালেদা বেগম শ্বশুড়, ভাসুর ও ভাসুরের স্ত্রীকে আসামি করে বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা (সি.আর-৫১৪/২০২৩) করেছেন।
গৃহবধুর অভিযোগ ওই মামলায় শর্তসাপেক্ষে আদালত তাদের জামিন দেন। জামিনে বেরিয়ে আসামিরা অনবরত তাকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মামলার বাদী খালেদা বেগমের স্বামী প্রবাসী কয়েছ উদ্দিন অভিযোগ করেন, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার লিয়াকত আলী আসামীদের পক্ষে বিজ্ঞ আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা একটি প্রত্যয়ন জমা দেন। বিজ্ঞ আদালত তার এই ভুয়া প্রত্যয়নটি বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে জামিন দিয়েছেন। তিনি ইউপি সদস্য লিয়াকত আলীর এই ধরণের মিথ্যা প্রত্যয়ন প্রদানের বিচার দাবী করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার কাঠালতলী গৌড়নগর গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে কয়েছ উদ্দিনের সাথে প্রায় ১০ বছর আগে কলারতলীপার নয়াগ্রামের মৃত নুর উদ্দিনের মেয়ে খালেদা বেগমের বিয়ে হয়। কয়েছ উদ্দিন প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যে থাকতেন। সেখানের আয়রোজগারের সমুদয় টাকা বড়ভাই নজমুল ইসলাম ও বাবা রফিক উদ্দিনের হাতে তোলে দিতেন। তার টাকায় রফিক উদ্দিন পাকা বাড়ি তৈরী করেন। ২০১৭ সালে কয়েছ উদ্দিন দেশে এসে তার পাঠানো টাকা পয়সার হিসাব চাওয়ায় বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। কয়েছ উদ্দিন পাকা ঘরে টাইলস লাগাতে চাইলে বাবা ও বড়ভাই তাকে বাধা দেন। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে দুবাই গিয়ে তিনি সেখান থেকে ২০১৯ সালে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে তুর্কি চলে যান। বিভিন্ন দেশ হয়ে ২০২১ সালে ফ্রান্সে ঢুকেন। এখনও লিগ্যাল হতে পারেননি। কয়েছ উদ্দিনের অনেক টাকা ধারদেনা রয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে রফিক উদ্দিন তার বড় ছেলে নজমুল ইসলামকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে পুত্রবধু খালেদা বেগমের কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করেন। গৃহবধু খালেদা বেগম স্বামীর দূর অবস্থা জানিয়ে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে শ্বশুড় রফিক উদ্দিন, ভাসুর নজমুল ইসলাম ও ভাসুরের স্ত্রী জাহানারা বেগম তাকে হত্যাসহ নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এসময় বিয়েতে বাবার বাড়ি থেকে আনা আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। এতে শ্বশুড়ি হারিছুন নেছা প্রতিবাদ করায় তাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেন।
ফ্রান্স থেকে মোবাইল ফোনে খালেদা বেগমের স্বামী কয়েছ উদ্দিন অভিযোগ করেন, তার বাবা রফিক উদ্দিন বড়ভাই নজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমের কুমন্ত্রনায় স্ত্রী ও মায়ের উপর অবিচার অত্যাচার চালাচ্ছেন। আমার মা বাধ্য হয়ে তার বাবার বাড়িতে আর আমার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমার স্ত্রীর সব আসবাবপত্র তারা ভেঙ্গে দিচ্ছে, বাড়িতে ঢুকলে কেটে টুকরা টুকরা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এদিকে আমার বাবা আমার মাকেও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আমি প্রবাসে থেকে তাদের কোনো সাহায্য করতে পারছি না। তিনি আদালতের ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।
মন্তব্য করুন