কমলগঞ্জে মাধ্যমিকে ৩০ ও প্রাথমিকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে

September 30, 2021,

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জে করোনাকালীন সময়ে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতনের বোঝা, সময় মতো ফি দিতে না পারা, গোপনে বাল্য বিয়ে, অভাব অনটনের সংসারে হাল ধরতে কাজকর্মে নিয়োজিত হয়ে যাওয়ায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। মাধ্যমিকে ৩০ শতাংশ ও প্রাথমিকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার বিষয়টি প্রায় অনিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এচিত্র পাওয়া গেছে।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ মাসে সরকারি নির্দেশনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ বন্ধ হয়ে পড়ে। দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর খোলা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনাকালীন এই সময়ে উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থীই ঝরে পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের লোকদের চরম অভাব অনটনের সংসারে সন্তানদের বই, খাতা, কাগজ-কলম, স্কুলে বেতনের বোঝা, ফরম পূরণের ফি দিতে না পারা, কিছু কিছু মেয়েদের গোপনে বাল্য বিয়ে হয়ে যাওয়া, সংসারের হাল ধরতে কিশোর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজেকর্মে নিয়োজিত হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীই ঝরে পড়ছে।
তবে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও অধিকাংশ সময়ে কোন ধরণের সেবা পাওয়া না গেলেও শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন এককালীন বোঝা হয়ে দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এসাইনমেন্ট প্রদানসহ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধে চাপ প্রয়োগ করেন। অনেকের সামর্থ্য না থাকা আবার অনেক শিক্ষার্থীরা এসব টাকা পরিশোধ করতে না পারায় স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ছে এবং নানা কাজে মনোনিবেশ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আব্দুল খালিক, আক্তার মিয়া, আফিয়া বেগমসহ কিছু কিছু অভিভাবকদের করোনাকালীন সময়ে কমে গেছে আয় রোজগার। বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এতে বিদ্যালয়ের বেতন পরিশোধ করা ও অভাব অনটনের সংসার চালাতে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করানো কষ্টসাধ্য।
শমশেরনগর হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিক ও কমলগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিলকিস বেগম জানান, স্কুল খোলার পর হতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না। আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের বিদ্যালয় সমুহে গড়ে প্রায় ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়গামী করার জন্য শিক্ষকসহ আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এমনকি শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও তাদের উৎসাহিত করানো হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুন্নাহার পারভীন বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় সমুহে প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। কি কারণে তারা বিদ্যালয়ে আসছে না সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে বাল্য বিয়ে, কাজেকর্মে নিয়োজিত হওয়া ও করোনা ভয়ে অনুপস্থিত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com