কুলাউড়ার শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন, বরখাস্তকৃত শিক্ষককে যোগদান করালেন বিদ্যালয়ের সভাপতি

September 14, 2022,

মাহফুজ শাকিল॥ কুলাউড়ায় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরখাস্তকৃত সেই শিক্ষক মো. আইয়ুব আলীকে অবশেষে নিয়োগপত্র দিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুর”ল ইসলাম খান বাচ্চু। এতে স্থানীয় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর আগে ওই শিক্ষককে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিলে নিয়োগ বোর্ডের বির”দ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ আছকর আলী। যার প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর কবির আহাম্মদ জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ফজলুর রহমানকে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানকে দায়িত্ব দেন তদন্তের জন্য।
জানা যায়, ২৯ আগস্ট শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষক পদে মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের বরখাস্তকৃত আইয়ুব আলীসহ মোট সাতজন প্রার্থী ছিলেন। আইয়ুব আলী সেখানে অধ্যক্ষ থাকাবস্থায় ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের সাথে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ওই শিক্ষকের বির”দ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় কলেজ গভর্ণিং বডি তাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে রেজ্যুলেশন করে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুর”ল ইসলাম খাঁন বাচ্চু বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আইয়ুব আলী। অভিযোগের বিষয়ে দুটি তদন্ত কমিটি এবং ওই শিক্ষককে বর্তমানে নিয়োগপত্র না দেয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো কোন অফিসিয়ালি চিঠি পাইনি। তাই তাকে নিয়োগপত্র দিয়ে যোগদান করিয়েছি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শতদল দে বলেন, প্রক্রিয়া অনুযায়ী ওই শিক্ষককে নিয়োগ পত্র দেয়া হলে তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার বলেন, নিয়োগ কার্য সম্পন্নের পর অভিযোগ আসলে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় সভাপতির সাথে কথা বলতে আমি বিদ্যালয়ে যাই। সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক  ফোনে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে বলেছেন অভিযোগের বিষয়টি সমাধান না হওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে ওই ব্যক্তিকে নিয়োগপত্র না দেয়া হয়। তখন সভাপতি উপ-পরিচালককে বলেছিলেন তারা ওই শিক্ষককে নিয়োগপত্র দিবেন না। কিন্তু পরবর্তীতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই কথা রাখেননি। এখন সিদ্ধান্ত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ দিবেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল বিষয়টি সমাধান না হওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে ওই শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান না করানো হয়। কিন্তু তারা এটা ঠিক করেনি। ওই শিক্ষক যোগদান করার বিষয়টি জেনেছি, আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে সেটা অবহিত করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক মহোদয় আমাকে একটি চিঠি ইস্যুৎ করেছেন। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিবো।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, তদন্তের চিঠি হাতে পেয়েছি। তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন ইউএনও স্যারের কাছে জমা দিবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা আমাদের মতো করে যথাযথ ব্যবস্থা নিব।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com