জুড়ীর সেই উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ

July 2, 2020,

কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের জুড়ীর বিতর্কিত সেই উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের বিরুদ্ধে পোলট্রি খামারে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট, ধান কাটার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের যন্ত্রপাতি ভাংচুর এবং করোনা পরিস্থিতিতে বিশাল গণজমায়েত সৃস্টি করার দায়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তাঁর কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলো। সরকারের মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা, অতিরিক্ত সচিব, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি গতকাল বৃহস্পতিবার ২ জুলাই সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সেখানে খামার মালিক দীনবন্ধু সেন, সহযোগী শাহাজান মিয়াসহ বাদী পক্ষের লোকদের স্বাক্ষ্যগ্রহণ ও বিবাদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এরপর স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্যগ্রহণ নেয়া হয়। এছাড়া এই ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জুড়ী থানার ওসি (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলামেরও স্বাক্ষ্য নেওয়া হয়। শুনানি শেষে বাদী-বিবাদীদের নিয়ে উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামে আলোচিত ‘বন্ধু পোলট্রি খামার’ পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মশিউর রহমানসহ অন্যান্যরা।

তদন্তকালে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব ও পরিচালক, স্থানীয় সরকার) মোঃ ফজলুল কবীর, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম, জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরদার প্রমুখ।

তদন্ত কাজ শেষে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে চিঠি পেয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য। সেই মোতাবেক আমি সরেজমিন এসে তদন্ত করেছি। আমি আমার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিব, এরপর মন্ত্রণালয় তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই। বিবাদী পক্ষের সামনে বাদীপক্ষের স্বাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়ায় বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কোন ব্যাঘাত ঘটবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, স্বাক্ষী নেওয়ার প্রক্রিয়াটাই তাই। বিবাদীর সামনে স্বাক্ষী নিতে হবে। বিষয়টি আড়ালেই নেওয়ার কিছুই নেই। বাদী যখন বিচার চাইছেন তাই স্বাক্ষীর সামনেই দিতে হবে। এটাই হল আইনগত প্রক্রিয়া।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি স্বাক্ষরিত একটি চিঠি উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের কাছে পাঠানো হয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের বিরুদ্ধে ১৮ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সূত্রোলি¬খিত স্মারকে উলি¬খিত অভিযোগ/অপরাধের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এর আগে ৫ মে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার এর স্মারকের সূত্র ধরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ে তাঁর জবাব পাঠান। কিন্তুু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তাঁর কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে স্বীয় পদ থেকে অপসারণের লক্ষ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য ১৮ মে স্থানীয় সরকার, পল¬ী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (উপজেলা-২ শাখা) উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারকে প্রেরণ করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার চিঠির সূত্রে জানা যায়, গত ১ মে রাত ১০ টায় মদ্যপ অবস্থায় জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামে অবস্থিত “বন্ধু পোলট্রি ফার্ম” এ বেআইনীভাবে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে তান্ডবলীলা চালায়। এসময় বাঁধা দিলে ফার্মের মালিক দীনবন্দু সেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়। এতে খামার মালিকের আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন হয়। এছাড়া স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে থাকা প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে প্রাপ্ত ধান কাটার হারভেস্টার মেশিনের যন্ত্রপাতি ভাংচুর, লুটপাট করা হয়। হামলার ঘটনায় বিশাল গণজমায়েত করে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সংকটময় মুহুর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটানো হয়। এসব অভিযোগ/অপরাধের কারণে কেন তাঁকে (উপজেলা চেয়ারম্যান) উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ (সংশোধিত-২০১১) এর ১৩ ধারা অনুযায়ী কেন তাঁকে স্বীয় পদ হতে অপসারণ কার্যক্রম শুরু করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানো হয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১২ মে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঈদ ফারুক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করেন। কিন্তুু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তাঁর কারণ দর্শানোর জবাব অসন্তোষজনক বলে প্রমাণিত হয়। এমতাবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যান মোঈদ ফারুক এর বিরুদ্ধে আনীত অপরাধের কারণে উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ (সংশোধিত ২০১১) এর ১৩ ধারা অনুযায়ী তাঁকে তাঁর স্বীয় পদ হতে অপসারণের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের সদস্য ও মহিলা সদস্যদের (অপসারণ, অনাস্থা ও পদ-শুন্যতা) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয় সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসিকে। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঈদ ফারুককে প্রধান আসামীসহ আরো ১২ জনকে অভিযুক্ত করে পোলট্রি খামারে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় খামার মালিক দীনবন্ধু সেন বাদী হয়ে জুড়ী থানায় মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত কোন আসামী ধরতে পারেনি জুড়ী থানা পুলিশ।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com