মৌলভীবাজারে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী রয়েছে শিখন ঘাটতিতে

July 16, 2025,

বিকুল চক্রবর্তী : শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শেষ হয়েছে ১৫দিন ব্যাপী শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি যাচাই প্রকৃয়া। যার মাধ্যমে উঠে এসেছে এ জেলার গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে শিখন ঘাটতি রয়েছে।আর আগামী ৪ মাস অতিরিক্ত যত্ন নিয়ে তাদের উত্তোরণ করা হবে বলে জানায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এটি বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের একটি মাইল ফলক কর্ম পরিকল্পনা বলেও জানান তারা।

বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানন্নোয়নের লক্ষ্যে বিগত প্রহেলা জুলাই থেকে শুরু করা হয় শিক্ষার্থীদের শিখন অবস্থান নির্ধারণ ও শিখন ঘাটতি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম। যা ১৬ জুলাই শেষ হচ্ছে।

সরজমিনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি যাচাই প্রকৃয়া। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজী ও গনিত বিষয়ে প্রথমে লিখিত, পরে একজন একজন করে বিভিন্ন প্রশ্ন করে ও রিডিং পড়িয়ে মান যাচাই করছেন।

শ্রীমঙ্গল সিন্দুরখান ইউনিয়নের চিমাইলত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ঝুমু রানী সরকার জানান, এর মাধ্যমে মুলত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর  নির্দেশনায় বেইজলাইন টুলস এর মাধ্যমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর বাংলা ইংরেজি এবং গণিত বিষয়ের উপর শিখন অবস্থান, শিখন ঘাটতি যাচাইকরা হয়।তিনি বলেন, আর আগে আমরা ভালো ও দূর্বল শিক্ষার্থী সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখলেও এভাবে একজন একজন করে কার মান কতো তা নির্ণয় করিনি। এখন এই শিখন ঘাটতি যাচাইকরণ প্রকৃয়ার মাধ্যমে তা লিখে রাখতে পারছি। এই মুল্যায়ন পত্র অনুযায়ী তাদের উন্নয়নের লক্ষে কাজ করা যাবে। তিনি বলেন, আমরাতো তাদের যত্ন নিবোই তার উপর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও অবগত করতে পারবো।

চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাইমা আক্তার জানান, তার শিক্ষকরা ইংরেজী, গনিত ও বাংলা বিষয়ে প্রথমে লিখিত পরে মৌখিকভাবে পরীক্ষা নিয়েছেন। এটি করতে তাদের ভালোই লেগেছে। তবে যে বিষয়টি পারেনি সে বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে পড়া শুরু করেছি।

একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাভলী রানী দে জানান, বিশেষ এ মুল্যায়নে দেখা গেছে প্রায় ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীর কেউ সঠিকভাবে পড়তে পারেনা, কেউ উচ্চারণ করতে পারে না, কেউ সঠিক মাত্রায় লিখতে পারে না। যা রেকর্ড ফরমে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়।

শিক্ষিকা লিপিমনি গোয়ালা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বেইজলাইন টুলস এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম থেকে ৫ম শ্রেনির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে প্রতিটি  শিক্ষার্থীর শিখন অবস্থান, শিখন ঘাটতি যাচাইকরনের লক্ষ্যে স্তর ভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্হা করা হয়েছে।এটি বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।

শ্রীমঙ্গল যুগেন্দ্র মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রায় ২৫ ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে দূর্বলতা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন আমাদের এই কার্যক্রম ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছেন জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

শ্রীমঙ্গল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক  কল্যাণ দেব জানান, বিগত ১৫দিন উৎসব আয়োজনে আমরা নির্ধারিত নিয়েমে শিক্ষার্থীদের মান পরীক্ষা করে তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। কাছাকাছি সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদেপ্তরের পরামর্শ মোতাবেক তাদের মান উন্নয়নে কাজ শুরু করবো।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এই কার্যক্রমের  মাধ্যমে উঠেএসেছে শতকরা ৬৫-৭০ ভাগ শিক্ষার্থী লিখতে ও সঠিকভাবে পড়তে পারে, বাকি ৩০-৩৫ ভাগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্তরে স্তরে শিখন ঘাটতি রয়েছে। এ সকল শিক্ষার্থীর অনেকেই সঠিকভাবে লিখতে পারে না। তাদের এই ঘাটতি দূরিকরে ৪ মাস কাজ করা হবে এবং আগামী নভেম্বরে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখা হবে তারা উত্তির্ণ হতে পারলো কিনা।

আগামী চার মাসের মধ্যে শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষক ও অভিভাবক মিলে এই ঘাটতি দূরকরা হবে বলে জানান, মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম, তিনি বলেন, সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত অ্যাসেসমেন্ট টুলস ব্যবহার করে শিখন অবস্থান নির্ধারণ ও শিখন ঘাটতি পর্যবেক্ষণ এবং শিখন উন্নীতকরণের  কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের একটি মাইল ফলক সিদ্ধান্ত এটি। তিনি বলেন, এই কার্যক্রম দেখতে প্রায় প্রতিদিনই তিনি কোন না কোন স্কুল ভিজিট করেছেন। অনেক শিক্ষার্থীকে পুন:বার নিজেও যাচাই করেছেন।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) কামরুল হাসান বলেন, সারা দেশব্যাপী পহেলা জুলাই হতে ১৬ জুলাই পর্যন্ত অ্যাসেসমেন্ট টুলস ব্যবহার করে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ সঠিকভাবে পড়তে পারেনা উচ্চারণ করতে পারে না কেউ সঠিক মাত্রা ব্যবহার করে লিখতে পারে না, তাদের খোঁজে বের করে এই বেজলাইন টুলস এর মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে। এর জন্য দূর্বল স্টুডেন্টরা সময় পাবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত । প্রহেলা নভেম্বর থেকে ৩০ নিভেম্বর পর্যন্ত তাদের চূড়ান্ত যাচাই করা হবে। শিক্ষার্থীদের মানন্নোয়নে অন্তরবর্তী সরকারের এই বিশেষ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাকরা।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com