চাইলে যুক্তরাজ্যের মতো বাংলাদেশের এক একটি বাড়ি হয়ে উঠতে পারে সবজি বাড়ি
বিকুল চক্রবর্তী : বড়লেখার একটি পরিবার দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ভাড়া বাড়িতেই বছর জুড়ে চাষ করেন নানা জাতের সবজী। সারা বছর তাদের চাহিদা পুরণ করে অতিরিক্ত সবজিগুলো বিতরণ করেন পতিবেশীদের মধ্যে। আর বছরের পর বছর ধরে তাদের বাড়ির সামনে ও পিছনে যতটুকু জমি আছে সেখানে সবজী চাষ করায় তাদের বাড়িটি এখন ওই এলাকায় সবজী বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তাদের এই সবজি চাষের সাফল্য হতে পারে বাংলাদেশে মানুষের জন্য অনুকরনীয়।
বড়লেখা উপজেলার গল্লাসাঙ্গন গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: আছাদ উদ্দিন পরিবার পরিজন নিয়ে বহু বছর ধরে বসবাস করেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন সিটির হেইচ শহরে। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। চাকরী করেন একটি বে-সকারী কোম্পানীতে। আর তার স্ত্রী বাড়িতেই টেইলারিং এর কাজ করেন।সাংসারিক জীবনে তাদের দুজনকেই থাকতে হয় ব্যস্ততার মধ্যে।
মো: আছাদ উদ্দিন জানান, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। আমাদের শখ হচ্ছে শাকসবজি চাষ করা। আমার শশুর সব সময় গাছপালা নিয়ে থাকেন। উনি উনার দেশের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীজাজারে নিজের বাড়িকেই একটি ফলজ গার্ডেনে রুপ দিয়েছেন। আমরাও লন্ডনে আসার পর আমাদের বাসার সামনে ও পেছনে অল্প কিছু জায়গা পেয়েছি। আমরা দেশ থেকে বিভিন্ন সবজির বীজ নিয়ে এসে এখানে চাষ শুরু করি। লন্ডনে আমাদের দীর্ঘ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। তার পরও প্রতিদিন একটু একটু সময় দিয়ে আমরা শুরু করি সবজী চাষ। আমরা প্রতিবছর পর্যায়ক্রমে আমরা এখানে চাষ করি সীম, মিষ্টি লাউ, পানি লাউ, করলা, ঝিঙ্গে, বরবটি, টমেটো, মুলা, কপি, ডাটা, সিসিংগা, পটল, বিভিন্ন জাতের কাঁচা মরিচ, লাইশাক, কচুশাক, লালশাক, বারোপাতা শাক, বাকর পাতা, ধনিয়া পাতা ও পুঁদিনা পাতাসহ নানান জাতের সবজি।তিনি বলেন, চাষ করার ফলে তাদের কোন এ সকল সবজি কিনে খেতে হয়না।
আছাব উদ্দিন এর কাজের মূল সহযোগী তাঁর স্ত্রী। তিনি বলেন, এই কৃষিজ কাজে আমার স্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমার কাজে মুল সহায়কই হচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে মো: আছাদ উদ্দিন এর স্ত্রী জেসমিন বেগম লোদী বলেন, গাছপালার পরিচর্যা এবং ফলফসলাদি চাষের শিক্ষা আমার পরিবার থেকেই নেওয়। তিনি বলেন, আমার স্বামী এ সবে খুবই আগ্রহী। দুজন মিলেই পরিচর্যা করেন। অনেক সময় তাদের সন্তানরাও এগিয়ে আসে। তার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে লন্ডনের মতো জায়গায় রান্নার আগে গাছ থেকে পেড়ে টাটকা সবজি রান্না করতে পারা। আর টাটকা সবজির স্বাদও আলাধা।তিনি বলেন, এটাতে যে, কতটা তৃপ্তি তা বলে বুঝাতে পারবোনা। তাদের ডাটা অনেক বড় হয়। এক এক টা ডাটা বাজার থেকে কিনে আনলে ৮ থেকে ১০ পাউন্ড লাগতো। এভাবে নিজে চাষ করায় তাদের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের খাবার রেখে তা প্রতিবেশী ও স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করেদেই। এই কাজটা করতে খুবই ভালো লাগে। শুধু সবজি বিতরণ নয় আমরা অনেকের বাসায় গিয়ে সবজি গাছ লাগিয়ে দিয়ে আসি। বিভিন্ন সবজির চারা করে সেটাও উপহার দেই।
লন্ডন প্রবাসী ব্ক্ষৃপ্রেমী আব্দুল মালিক লোদি বলেন, তাদের অদম্য ইচ্ছায় শত ব্যস্ত থাকার পরও তারা লন্ডনের প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যেও তাদের বাসার সামনে ও পেছনে যতটুকু খালি জায়গা পেয়েছেন তারা সেখানে চাষ করেন নানা জাতের মৌসুমী সবজি। তারা যুক্তরাজ্যের হাউজ কৃষির একটা উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি বলেন, এই উদাহরণটা যুক্তরাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না। এটা যেন নিজের জন্ম দেশে প্রতিটি গ্রামে বা শহরে ঘরে ঘরে পালন করা হয়। সবাই যদি নিজের প্রয়োজনীয় শাকসবজি এবং ফলফলাদি নিজে চাষ করেন তাহলে বাজার থেকে বিষযুক্ত ফলও শাকসবজি কিনে খেতে হবেনা। তাছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়াও সবজি চাষের অনুকুলে।
যুক্তরাজ্যের আরেকজন প্রবীণ নাগরিক বাংলাদেশ মৌলভীবাজারের সন্তান গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মকিস মনসুর বলেন, তবে তাদের মতো যুক্তরাজ্যে আরো অনেক সৌখিন হাউজ কৃষক রয়েছেন। তারা হতে পারেন আমাদের বাংলাদেশের পতিত ফেলে রাখা জমির মালিকেদের উৎসাহদাতা।
অপর লন্ডন প্রবাসী আব্দুল হামিদ ইউছুপ বলেন, লন্ডন হেইচে মো: আছাদ উদ্দিন আমাদের লন্ডনে হাউজ কৃষির একজন আইডল। বছরের পর বছর জুড়ে তার বাসার সামনে লেগেই থাকে নানান জাতে সবজি। এখন ওই এলাকায় তার বাড়িটিকে মানুষ সবজিবাড়ি বলে ডাকে। তিনি বলেন, আমরাও প্রায় সময় এই সবজি বাগান দেখতে যাই এবং দেখতে গেলে তারা আমাদের সবজি উপহার দেন।
যুক্তরাজ্যে অল্প জায়গায় প্রতিকুল পরিবেশে সবজি চাষে সফল হতে পারলে বাংলাদেশে অনকুল আবহাওয়ায় প্রতেকটি বাড়িই হয়ে উঠতে পারে এক এক টি সবজি বাড়ি।



মন্তব্য করুন