শ্রীমঙ্গলে পেঁপে চাষে সফল কৃষক আসাদুর

October 30, 2018,

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা। হ্যাঁ, সব সাধকের চেয়ে বড় সাধক হলেন আমাদের দেশের কৃষক। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যে কৃষক শরীরের ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদন করেন সোনার ফসল। পুরো জাতি তাকিয়ে থাকে ওই কৃষকের দিকে, যে কৃষকের কারণে অর্থনৈতিক মুক্তি আসে নিজের, পরিবারের এবং সমাজের। ফলে বদলে যায় একটি জনপদ, উৎসাহিত হয় আশেপাশের অগণিত মানুষ। এমনই একজন কৃষকের নাম আসাদুর রহমান। তিনি ১০ বিঘা জমিতে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এখন অধক লাভবান হয়ে সফলতা পেয়েছেন।
ফল ও সবজি হিসেবে পেঁপে এখন বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো ফলটি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে পেঁপের। উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের শাসন গ্রামের কৃষক পেপে চাষী আসাদুর রহমান পেপেঁ চাষ করে লাভবান হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন পেঁপে চাষে।
সারি সারি পেঁপে গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলে আছে অসংখ্য পেঁপে। গত ৭ মাস ধরে গাছ থেকে পেঁপে তুলে বিক্রি করলেও গাছের পেঁপে যেন শেষই হচ্ছে না। শ্রীমঙ্গল উপজেলার শাসন গ্রামের আসাদুর রহমান গড়ে তুলেছেন এই পেঁপে বাগান। তাঁর বাগানে রেড লেডি, এবং ইন্ডিয়ান শাহী জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। ১০ বিঘা জমিতে তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। সাত মাসে বিক্রি করেছেন ৫ লাখ টাকার। অবশিষ্ট যে পরিমান পেঁপে এখন গাছে রয়েছে তাও ৫ লাখ টাকা বিক্রি করত পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষক আসাদুর!
বর্তমানে পেঁপে চাষে আসাদুর রহমান হয়ে উঠেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের শাসন গ্রামের মডেল। এই মৌসুমে আরও প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষাধিক টাকার পেঁপে বিক্রি করা যাবে বলে জানান তিনি। তার সফলতা দেখে গ্রামের অন্যরাও পেঁপে বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আসাদুর রহমান জানান, মাকড়সা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবে।
তিনি আরো বলেন, আগামীতে আমি আরও ৫ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনা করেছি। আশা করি আমি আরও সফলতা পাবো। পেঁপে চাষী আসাদুর রহমান বলেন, “ভবিষ্যতে আমি একটি কৃষি খামার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এলাকার বেকার যুবকদের ভাগ্যের উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য পেঁপে চাষের আহ্বান রইল।”
পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা কিংবা সহজ শর্তে ঋণ পেলে ব্যাপক পরিষরে পেঁপের চাষ বাড়াতে পারতেন! তিনি বলেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পেঁপে চাষ করেই দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি পেঁপে চাষে এগিয়ে আসেন তবে নিঃসন্দেহে তারাও লাভবান হবে। পাশাপাশি বেকারত্বের অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে বলে মনে করছেন স্থানীয়সহ বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় কৃষক আশরাফুল জানান, কৃষক আসাদুরের প্রথম থেকেই লেবু এবং গরু ছাগলের খামার রয়েছে এবং লেবু আর গরু ছাগলের খামারেও সে সফল! ২০১৬ সাল থেকে হঠাৎ করেই মাঠে পেঁপে চাষ শুরু করেন! এবং অল্প সময়ে পেঁপে চাষেও সে সফল হয়েছে। তার চাষ দেখে আমাদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। তার এ সফলতা দেখে গ্রামের অনেকেই পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনা করছে।আমি নিজেও এ বছর থেকেই ৫ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছি!
স্থানীয় কৃষক আব্দুল মালেক মিয়াও জানান, সে হঠাৎ করেই মাঠে পেঁপে চাষ শুরু করে সফল হয়েছে। তার চাষ দেখে আমাদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। তার সাফল্য দেখে গ্রামের অনেকেই পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনা করছে।
আসাদুর পেঁপে চাষ করে সফল হয়েছে তাই ইতোমধ্যে আমি নিজেও এ বছর ২ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করেছি!ভবিষ্যতে আরো বাড়াবেন বলেও জানান তিনি!
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসাদুরের বাড়িতে পেঁপে কিনতে আসেন আর এই পেঁপে এখান থেকে কিনে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, পেঁঁপেতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পেঁপে চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তবে আসাদুরকে দেখে অনেকেই পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন!আমরা উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি এবং প্রয়োজনমতো সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছি! তিনি আরো বলেন বেকার যুবকরা যদি পেঁপে চাষে এগিয়ে আসে তবে আমরা তাদের সবধরণের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি!

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com