আমন ধান উঠছে গোলাভরে:- নতুন চালের পিঠা-পুলি, মন্ডা-মিঠাইয়ের মৌ মৌ ঘ্রাণে গ্রামে চলছে নবান্ন উৎসব

December 18, 2016,

ইমাদ উদ দীন॥ এখন ধুম লেগেছে ধান কাটা,মাড়াই,শুকানো আর গোলায় ভরার। গ্রামের প্রতিটি কৃষক পরিবার মহাব্যস্ত আমন ধান নিয়ে।আবহমান বাংলার চিরায়ত নিয়মেই আবির্ভূত হলো কৃষকের আনন্দ উৎসবের মাস অগ্রহায়ণ। মূলত এ মাসটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে বয়ে চলে উৎসব। নতুন ধান গোলায় উঠা শেষ হলে শুরু হয় নতুন চালের তৈরী নানা জাতের পিঠা। কৃষাণ-কৃষাণীরা নিজস্ব ভঙ্গিমায় বেশ ঘটা করেই যে যার মত বরণ করেন গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম রেওয়াজ নবান্ন উৎসবকে।গেল কয়েক দিন আগেই যেখানে চোখে পড়ত আঁকা-বাকা মেঠো পথের বাঁকে বাঁকে মাঠের পর মাঠ ছিল শুধু পাকা আধপাকা ধান আর ধান। মনোহর এমন দৃশ্য ছিল গ্রাম থেকে গ্রামে।এখন এমন দৃশ্য কমতে শুরু করেছে। কারণ পাকা ধান কাটা আর মাড়াইয়ের ধুম লেগেছে।

amon-dan শীতের সকালের সোনা মাখা রোদেই ক্লান্তি ঠেলে কাস্তে তুলে মাঠে নামেন কৃষকের দল। প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব আর প্রযুক্তির সুবাদে সেই চিরচেনা অভ্যস্ত নিয়ম রীতিতে অনেকটাই পরিবর্তন। তারপরও তারা থেমে নেই।বাপ-দাদাদের রেখে যাওয়া গ্রামীণ রেওয়াজ এখন আবেগে আহ্লাদে বুকের মমতায় শক্ত করে আকড়ে রেখেছেন। এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্ষেতের মাঠ, উঠান, গোলা এই তিনটি স্থান নিয়েই ব্যস্ত চাষীরা।ধান মাড়াই, বাছাই আর শুকানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তারা। লক্ষ্য মাত্রার অধিক জমিতে সোনা রাঙা আমন ধানের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটেছে। এ বছর এ জেলায় (৭টি উপজেলায় কমবেশি) অনান্য বছরের চাইতে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এতে কৃষকের মন ভরছে ঠিকই। কিন্তু তা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন কি না এনিয়ে রয়েছে তাদের শংঙ্কা। কারণ ধানের বাজার দর অনুযায়ী তাদের উৎপাদন খরচ তুলে লাভের মুখ দেখতে পারবেন কি না এখন এমন হিসাব কষছেন তারা। ক্ষেতের পুরো ধান মাঠ থেকে সংগৃহিত হলে মিলবে এই আয় ব্যয়ের হিসাব। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ধান ক্ষেতের মাঠ ঘুরে ও কৃষকের সঙ্গে আলাপে তারা এমনটিই জানালেন। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় এ বছর জেলায় ৯৬ হাজার ৪শ ৭৩ হেক্টর জমি রুপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ৯৭ হাজার ৩শ ৬০ হেক্টর জমি। ফলন কি পরিমান হয়েছে তা নিরুপন হবে আরো ক’দিন পর ধান গোলায় উঠা শেষ হলে। তবে অন্য বছরের চাইতে এ বছর আমনের ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন এমনটি জানালেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যেই নানা প্রক্রিয়া শেষে গোলা স্পর্শ করতে শুরু করেছে আমন ধান। তাই ধীরে ধীরে গৃহিনীরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন রন্ধনশালায়। নতুন চালের পিঠা-পুলি, মন্ডা-মিঠাইয়ের মৌ মৌ ঘ্রাণে জিভে জল আনা অভ্যস্ত স্বাদে তৃপ্তি মেটাচ্ছে সকলেই।

amon-dhan-pic-1 ঢেকি আগেই স্বর্গে চলে গেছে ধান ভানতে, তাই সুখি হয়েছেন গৃহিনীরা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চালের গুড়োসহ সবকিছুই সহজেই এখন হাতের নাগালে।তাই ব্যস্ত জগতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়েও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে পুরোনো সেই নানা ধরণের পিঠাপুলির আইটেম।এ মৌসুমেই আনন্দ উৎসবের বন্যা চলে গ্রামে। দূর দূরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজনও নতুন চালের নানা জাতের পিঠা আর মুড়ি-মুড়কির স্বাদ নিতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। মেয়ের শশুরালয়ে পাঠানো হয় নতুন চালের তৈরী হরেক রকমের পিঠা। এমন সব আয়োজন আর কোলাহলে সারা বছরের কষ্ট ভুলে কৃষকের মুখে হাঁসি ফোটে। বীজ, সার, সেচ ও ওষুধসহ আনুসাঙ্গিক নানা খরচ যুগিয়ে গোলা ভরে ধান তোলা অনেকটা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার মতই।তারপরও থেমে নেই কৃষককূল। রোদে পোড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাতৃস্নেহে গ্রামীণ কৃষক সেই পুরাতন সময়জ্ঞান আর নিয়মানুবর্তিতায় মাটির সাথে যুদ্ধ করেই সোনা ফলান। আর্থিক অনটন আর টানাপোড়েনের মধ্যেও বুকের মমতায় সেই আদি পেশা আগলে রেখেছেন তারা। অন্যের মুখে অন্ন যুগিয়েই যেন তাদের চূড়ান্ত সার্থকতা।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com