ইউক্রেন যুদ্ধের ২য় বর্ষপূতিতে মৌলভীবাজার এনডিএফ-এর যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ সভা

February 25, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার॥ ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে একক পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ন্যাটো জোট এবং প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার মধ্যে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ দুই বছর পূর্ণ করে দীর্ঘস্থায়ী ও সম্প্রসারিত হয়ে পারমানবিক যুদ্ধ বিপদ, মার্কিনের মদদপুষ্ট ইসরাইল কর্তৃক গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে গণহত্যা, মার্কিন ও বৃটেনের ইয়েমেনে অব্যাহত বিমান হামলা, মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১০ টি দেশ নানাভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমূহ বিপদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ। দুই বছরব্যাপী চলা ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূতিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ সভা করে।
২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা এনডিএফের নেতা ও ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন এনডিএফ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘের নেতা হরিনারায়ন হাজরা, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ঝুনু মিয়া, জেলা এনডিএফ’র সদস্য সুহেল আহমদ সুবেল প্রমূখ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বন্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রা যুদ্ধ, স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় রুশ-ইউরোপ সীমান্তে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ দুই বছর পেরিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সম্প্রসারিত হয়ে পারমাণবিক যুদ্ধ ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদকে তরান্বিত করছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতিকে। তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সুতীব্র।
এ প্রেক্ষিতে রণনীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগর ও প্যাসিফিকসহ চীন সাগরের উপর নিয়ন্ত্রণের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে চলছে যুদ্ধজনিত মুখোমুখি দ্বন্দ্ব-সংঘাত। ভূ-রাজনৈতিক এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন বাংলাদেশকে আইপিএস, আইপিইএফসহ কোয়াড প্লাস-এ যুক্ত করতে অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করে চলেছে তেমনি মার্কিনের প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চীন ও রাশিয়া এতদ্বাঞ্চলে তার প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এআইআইবি, এসসিও- ব্রিকস এ যুক্ত করার প্রক্রিয়ায় নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। চীন বাংলাদেশকে বিআরআই-এ যুক্ত করাসহ বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশে তার প্রভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি মার্কিনের তৎপরতার প্রকাশ্য বিরোধিতা করে চলেছে। বিগত সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই সময়ে একদিকে মার্কিন সমাম্রাজ্যবাদ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এবং বিপরীতে প্রতিপক্ষ চীনা সাম্রাজ্যবাদ ও তার মিত্র সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার উলঙ্গ তৎপরতা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নিরাপত্তা সংলাপকে পরিণতিতে নেওয়ার জন্য জেসোমিয়া চুক্তি, আকসা চুক্তি, বঙ্গপোসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে পিএসসি চুক্তি ইত্যাদি চুক্তি করতে সর্বাত্বক তৎপরতা চালায়। আওয়ামী লীগ সরকার তার মেয়াদের শেষ সময়ে তা না করা এবং পরবর্তী নতুন সরকারের দায়িত্বের কথা বলে চুক্তি না করলেও আশ^াস দিয়ে রাখে। আবার সাম্রাজ্যবাদী চীন মার্কিনসহ পাশ্চত্যের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রতি ব্যাক্ত করে। মার্কিন চাপে বাংলাদেশ সরকার যাতে নতি স্বীকার না করে সে জন্য সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া আরব বসন্তের উদহারণ তুলে ধরে সে ধরণের পরিস্থিতি মোকবেলা করার পরামর্শ দিতে কসুর করে না। এভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এবং প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চীন ও রশিয়া স্বীয় মূল লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে স্বপক্ষে যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার চুক্তিবদ্ধ হওয়ার তৎপরতা অগ্রসর করে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমারের পরিস্থিতি সহসাই উন্নতি হচ্ছে না এবং এই কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করার বিষয়টিও তাৎপর্য। এমন কি র‌্যাবের মহাপরিচালকও অনেক আগে থেকেই মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে সীসান্তের ৩ তিন নিরিহ নাগরিকের মৃত্যু হয়। সীমান্তের বাংলাদেশী নাগরিকের কৃষিকাজ ও জীবিকা হুমকির মধ্যে রয়েছে। তাই বাজার পুনর্বন্টনের লক্ষ্যে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
সভায় সাম্প্রতিক সময়ে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন চাল-ডাল, তেল-লবন-চিনি, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, শাক-সবজি মূল্যবৃদ্ধিসহ গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালনিতেল, বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিতে জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের মূল্য হু হু করে বাড়ছে, অথচ বাড়ছে না মানুষের আয় ও ক্রমক্ষমতা। বাজার ব্যবস্থার উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের সাথে যোগসাজসে ব্যবসায়ীরা চিনি, ভোজ্য তেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগী ইত্যাদির কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিচ্ছে। অথচ সরকার অসৎ ব্যবসায়ী, কালো টাকার মালিক, ঋণ খেলাপী, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সকল দায় জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বক্তারা সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহারের নীতির সমালোচনা করে বলেন ভর্তুকি প্রত্যাহার নয়, বরং খেলাপি ঋণ আদায়, কালো টাকা উদ্ধার, ঘুষ-দুনীর্তি-লুটপাট বন্ধ, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদেশে পাচার কৃত অর্থ ফিতর এনে এবং ভ্যাটের আওতা কমিয়ে উচ্চ বিত্তের উপর প্রত্যক্ষ করের হার বৃদ্ধি করে ভর্তুকির পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে, জনগণের জন্য স্বল্প মূল্যে সর্বাত্মক রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com