কমলগঞ্জে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

September 19, 2023,

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে চলমান কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কমিউনিটিভিত্তিক এ প্রকল্পে গত দেড় বছরেও ২০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একাধিকবার তাগাদাপত্র দিয়েও কাজ শেষ করাতে পারছে না উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলায় কমিউনিটিভিত্তিক নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮০টি পরিবারের জন্য ১৮টি স্থানে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

নলকূপ স্থাপনের কাজটি পায় মৌলভীবাজারের ইউসুফ এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৫ জানুয়ারি শুরু হয়ে ৯ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।

তবে দেড় বছর চলে গেলেও তা শেষ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৯টি স্থানে কাজ শুরু করলেও মাত্র ২টি স্থানে পানি সরবরাহ চালু হয়েছে।

কয়েকটি সুবিধাভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পের কাজের শুরু থেকেই নলকূপ স্থাপন, পানির ট্যাংক নির্মাণ, প্ল্যাটফরম তৈরি ও পানির লাইন সংযোগে অনিয়ম করা হয়েছে। কাজে নিম্নমানের ইট, খোয়া, পাইপ, রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।

পানির ট্যাংক তৈরির কলামের পিলারে অনেক স্থানে ৮টি রডের স্থলে ৪ থেকে ৬টি রড ব্যবহার করা হয়েছে। নলকূপের গভীরতা ৭০০ ফুটের স্থলে ৪০০-৫০০ ফুট করা হয়েছে।

পানির ট্যাংক নির্মাণে ৬ থেকে ৭ ফুট গভীরে ফাউন্ডেশন দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কোনো স্থানে ২-৩ ফুট গভীরে ফাউন্ডেশন দেওয়া হয়েছে।

পানির ট্যাংকের ওপরের স্লাবের প্রটেকশন দেয়াল পাঁচ ইঞ্চি পুরো করার কথা থাকলেও তা তিন ইঞ্চি করা হয়েছে। পানির ট্যাংকের সঙ্গে একটি ডিস্ট্রিবিউশন চেম্বার বক্সে ৫টি করে সংযোগ পয়েন্ট থাকার কথা।

কিন্তু একটি চেম্বারেই ১০টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে প্ল্যাটফরমে ফাটল দেখা দিয়েছে ।

৫নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সরইবাড়ি এলাকার মামদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বছরখানেক আগে শুরু হওয়া কাজটি ভালো হচ্ছে না। রড, সিমেন্ট কম দেওয়া হয়েছে। ছয় মাস ধরে কাজ বন্ধ আছে।

আলীনগর ইউনিয়নের দিশারী আবাসন এলাকায় ২০টি পরিবারের জন্য দুটি গভীর নলকূপ বরাদ্দ হলেও একটি চালু হয়েছে। অন্য নলকূপের অসমাপ্ত পানির ট্যাংকটি হেলে পড়েছে। ট্যাংকের কলামের পিলারগুলোতে চারটি করে রড দেওয়া হয়েছে।

উপকারভোগী সুমন্ত মালাকার ও পীযুষ দেব অভিযোগ করেন, আমাদের এখানের পানির লাইনের পাইপ, রড, প্ল্যাটফরম, সিমেন্টসহ সবক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। কিছুদিন আগে সংযোগ দেওয়া হলেও এখনই পাইপ ছিদ্র হয়ে গেছে।

মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাদে সোনাপুর মাদ্রাসায় পানির সংযোগে পাইপ নিম্নমানের হওয়ায় ছিদ্র হয়ে পানি বের হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মাদ্রাসার সুপার রফিকুল হক।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউসুফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ইউসুফ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক শুকুর আহমেদ বলেন, আমাদের কাজ অনেক ভালো হচ্ছে। বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে, আর কিছু বলতে পারব না। বিস্তারিত ঠিকাদার স্যারের সাথে আলাপ করুন।

কমলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী সুজন আহমেদ বলেন, ১৮টি স্থানের মধ্যে ৯টি স্থানের কাজ শুরুই হয়নি।

যে ৯টি স্থানে কাজ চলছে, সেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেনি। কাজ শেষ করার জন্য আগের কর্মকর্তা তাগাদাপত্র দিয়েছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কমিটির সভাপতি রইছ আল রেজুয়ান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। কাজে কোনো অনিয়ম হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান বলেন, কাজ যখন শেষ হবে, তখন এগুলো হস্তান্তÍর করা হবে। সাইট যদি যথাসময়ে দেওয়া হতো, তাহলে কাজও দ্রুত শেষ হতো।

অনিয়মের অভিযোগ এড়িয়ে তিনি বলেন, কাজ বাস্তবায়ন হলে গ্রাহক ও আমরা তা বুঝে নেব। কোনো কাজই সমাপ্ত হয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com