ভুয়া চিকিৎসক শিশু ফাইমার হাত বাঁকা করে বিকল করে দিল! আদালতে অভিযোগ দায়ের

January 29, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার॥ চিকিৎসক নয় তারপরও অহরহ চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে। এভাবে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ১০ বছরের ফাইমা বেগমের হাত বাঁকা করে বিকল করে দিল ওই ভুয়া চিকিৎসক। শিশুটির জীবন এখন সংকটাপন্ন। ফাইমার হাত রক্ষায় উন্নত চিকিৎসা বর্তমানে প্রয়োজন। কিন্তু ফাইমার দিন মজুর পিতা-মাতা চিকিৎসা ব্যয় কোন ভাবেই মিটানো তাদের পক্ষে সম্বব হচ্ছেনা। শিশুর পরিবার উন্নত চিকিৎসা ও সুবিচারের আসায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এনিয়ে গেল ৭ জানুয়ারি ভুয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার বিষয়ে মৌলভীবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ফাইমা বেগম ২০২৩ সালের ৩১ মে বিদ্যালয়ে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় সহপাঠীদের সাথে খেলা করার সময় ডান হাতে আঘাত পায়। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ফাইমার পিতা কমলগঞ্জ উপজেলার বনগাাঁও এলাকার মোঃ আলকাছ মিয়া তার মেয়েকে ডাক্তারে কাছে নিয়া যাওয়ার জন্য রওয়ানা হইতে চাইলে পূর্ব পরিচিত মঞ্জু মিয়া বলেন, তিনি হাড় ভাঙ্গা ও ফাটা এসবের খুব ভাল চিকিৎসা করতে পারেন। মঞ্জু মিয়ার কথা বিশ্বাস করে তার মালিকানাধীন কমলগঞ্জের ভানুগাছ ষ্টেশন রোডস্থ মনসুর মেডিসিন সেন্টারে নিয়ে মঞ্জু মিয়া ও মির হোসেন শিশু ফাইমার হাতে চাপাচাপি করে ব্যান্ডেজ শুরু করলে ফাইমা হাউমাউ করে কান্না কাটি করে। তার বাবা এসময় বাধা দেন এবং এভাবে ব্যান্ডেজ না করার জন্য তাদেরকে অনুরোধ করেন।
অভিযুক্ত মঞ্জু মিয়া ও মির হোসেন কোন সমস্যা হবেনা বলে ফাইমার বাবাকে বুঝান। তাদের কথায় আশ্বস্থ হয়ে ব্যান্ডেজ শেষে মেয়েকে বাড়ীতে নিয়া যান। বাড়ীতে নিয়া যাওয়ার পর শিশুটি আরও বেশি ব্যাথা জনিত কারণে চিৎকার করিয়া কান্নাকাটি করিতে থাকে। একদিন পর দেখা যায় শিশুটির হাতের উপরিভাগ ফুলে গেছে। তখন শিশুটি কান্না কাটি করো মূমূর্ষ হয়ে পড়ে। তার অভিবাবকরা ব্যান্ডেজ খুলিয়া দেখিতে পান হাত পঁচে গেছে এবং পুড়ার মত কালো হয়ে গেছে। তখন চিকিৎসক নামধারী মঞ্জু মিয়ার নিকট গিয়া হাত পঁচে যাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করিলে বলেন, এগুলো কোন সমস্যা নয়। এরকম একটু হয়ই। পরে তারা পরামর্শ দেন শিশুটির হাতে থেরাপি দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি প্রতিদিন তাহার ফার্মেসীতে নিয়ে হাত ড্রেসিং করার জন্য বলেন। ১ মাস থেরাপী দেওয়ার পর হাতের কোন উন্নতি না হওয়ায় তার মেয়ের হাত অবশ হয়ে বাঁকা হয়ে বিকল হয়ে যায়।
পরে নিরুপায় হয়ে বাবা শিশু ফাইমাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এর চিকিৎসক পুলিন বিহারী ধর (পিযুষ)কে দেখান। চিকিৎসক বলেন, ব্যান্ডেজ এর কারণে তার মেয়ের হাত পঁচে গেছে এবং বাকা হইয়া বিকল হয়ে গেছে। উক্ত চিকিৎসক অর্থোপেডিক্স এর চিকিৎসক দ্রুত দেখানোর পরামর্শ দিলে মোঃ আলকাছ মিয়া তার মেয়েকে গত ৩০/১২/২৩ইং তারিখে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান। ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকগণ বোর্ড গঠন করিয়া সিদ্ধান্ত দেন শিশুটির হাতে ৩টি পার্টে ৩টি অপারেশন করানো লাগবে। বর্তমানে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছে।
শিশুর পিতা মোঃ আলকাছ মিয়া জানান, তার মেয়ের ভুল চিকিৎসার জন্য কমলগঞ্জ থানায় ৫ জানুয়ারি ২০২৪ইং তারিখে অভিযোগ করিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মালা না নিয়ে আদালতে মামলা দায়েরের জন্য পরামর্শ দেন। নিরুপায় হয়ে তিনি ৭ জানুয়ারি ২০২৪ইং তারিখে ভুয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার বিষয়ে সুবিচার চেয়ে মৌলভীবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একটি সুত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মঞ্জু মিয়া ও মির হোসেন ফাইমার ভুল চিকিৎসার সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com