কর্মধায় নৌকার পরাজয়ে হতাশ নেতাকর্মীরা, মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ কুলাউড়া উপজেলার সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন হলো কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদ। ওই ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বরের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক। নির্বাচনে প্রায় ৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে তাকে পরাজিত করেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুহিবুল ইসলাম আজাদ। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১১ হাজার ১২৫ ভোট। আর এম এ রহমান আতিক পেয়েছেন ৪ হাজার ১৯৪ হাজার ভোট।
ভোটের এই বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করা চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে তেমন কোন বিজয় উল্লাস দেখা যায়নি। বিজয়ী চেয়ারম্যান নিজে হাতেগোনা কয়েকজন সমর্থক নিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কুশল বিনিময় করেন। কিন্তু হয় নি কোন বিজয় বা আনন্দ মিছিল। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে শুরু হয়েছে নানান মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এই ফলাফলের কারণে চেয়ারম্যান আতিকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। অনেকে মনে করছেন, অজানা কোন কারণে বা বিশেষ কোন যোগসাজশে এমন ফলাফল বিপর্যয় দেখানো হয়েছে।
রাঙ্গিছড়া চা-বাগান এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন নাইডু বলেন, চা বাগানের শ্রমিকরা মূলত নৌকাকেই সমর্থন জানায়। দেশের সকল চা বাগান গুলোতে নৌকার প্রার্থী বিজয় হয়। কিন্তু কর্মধায় নৌকার প্রার্থী যে ভোট পেয়েছেন তাতে আমরা হতাশ ও বিস্মিত হয়েছি। বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থনে ইউনিয়নে নেই কোন উৎসব-আমেজ।
হাসিমপুর এলাকার বাসিন্দা মছব্বির আলী জানান, নির্বাচনের মাঠ জরিপ অনুযায়ী যে ফলাফল হওয়ার কথা ছিলো সেটা হয় নি। যে ফলাফল এসেছে তা ইউনিয়নের মধ্যে এই প্রথম। ভোটাররা বলেন আমরা ভোট দিলাম কিন্তু ফলাফল বিপর্যয় এমন হলো কিভাবে? এর উত্তর আমাদেরও জানা নেই।
বুধপাশা এলাকার ইদ্রিস আলী বলেন, নির্বাচনে কি কারণে আশানুরূপ ফল আসেনি, তা চিন্তা করে পাচ্ছিনা। আমরা শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হবেন। তাঁর বিজয় না হওয়াতে আমরা খুবই ব্যতিত হয়েছি।
কর্মধা ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। আমরা সব সময় আওয়ামী লীগ ও নৌকার পক্ষে অবস্থান করি। কিন্তু এই প্রথম কর্মধায় নির্বাচন পরবর্তী উৎসবের আমেজ নিস্তব্ধতায় পরিনত হয়েছে।
কর্মধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী জানান, আমি নৌকার প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু দল আমাকে না দিয়ে এম এ রহমান আতিক কে নৌকা উপহার দিয়েছেন। আমি আওয়ামীলীগের একজন কর্মী হিসেবে নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। কিন্তু আমার সভাপতি এবং যুগ্ম সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন। আমরা ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ ঐক্যবদ্ধ ভাবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এবং যে ফলাফল এসেছে সেটা কাম্য নয়। আমরা কোন ভাবেই তা মানতে পারছি না।
কর্মধা ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক বলেন, গত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে এই ইউনিয়নে বিজয় এনেছিলাম। এরপর থেকে কর্মধার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। পাহাড় অধ্যুষিত আমাদের কর্মধাকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মডেল ইউনিয়নে পরিণত করেছি। দল আবারো আমাকে ২য় বারের মতো নৌকা প্রতীক দিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এই নির্বাচনে। এই রহস্য একদিন উন্মোচন হবে। কর্মধাবাসী আমাকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে যে ভোট দিয়েছে আমি তাদের রায়কে সম্মান জানাই। আমার বিজয়কে অদৃশ্য কারণে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। কর্মধাবাসীর সুখ দুঃখে অতীতে যেমন ছিলাম আগামীতেও তেমনি থাকবো।
তিনি আরো বলেন, আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আজ উপজেলা আওয়ামীলীগের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতি করে আসছি। গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ৫টি বছর দলীয় সুনাম অক্ষুন্ন রেখে ইউনিয়নবাসীর সেবা করেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ^ স্বীকৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া আমার ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে লেগেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।
মন্তব্য করুন