কুলাউড়ায় হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি গঠন

May 23, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কুলাউড়া উপজেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ২২ মে বুধবার সন্ধ্যায় স্টেশন রোডের একটি রেস্তোরার কনফারেন্স হলে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়।

হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কুলাউড়া উপজেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক হারুনুর রশিদ ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুশ শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সম্পাদক মোঃ ছাদেক মিয়া। কর্মীসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের অন্যতম নেতা আব্দুল মুমিন রাজু, জুড়ী হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল করিম, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল মন্নান, কুলাউড়া হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিক খান ও সাবেক কোষাধ্যক্ষ জাকারিয়া আহমদ ।

সভায় বক্তারা বলেন রক্তঝরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৩৮ বছর আগে সারাবিশ্বে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়, কিন্তু বাংলাদেশে আজও হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু তাই নয় হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প সেক্টরে শ্রম আইন অনুযায়ী ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, নিয়মিত মজুরি পরিশোধের আইন থাকলেও মালিকরা তা মানে না আবার সরকারও তা বাস্তবায়নে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করে না। এছাড়া হোটেল সেক্টর, স’মিল, নির্মাণ ও পরিবহন সেক্টরে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের নিয়ম উপেক্ষিত। এছাড়াও বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ ( অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ৪৫ দিনের গ্রাচ্যুয়েটি, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থাতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি  ও উৎসব বোনাস প্রদানের আইন থাকলেও হোটেল শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শ্রম আইনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বাসস্থানের বিধান থাকলেও শ্রমিকরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে ও থাকতে বাধ্য হন। হোটেল শ্রমিকরা দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, যার কারণে হোটেল শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সমাবেশ থেকে আসন্ন ঈদুল আযহায় মাসিক বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাস প্রদান এবং ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর, অবিলম্বে হোটেল-রেস্টুরেন্ট সেক্টরে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ, দফায় গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো এবং স্বল্পমূল্যে রেশনিং চালুর দাবি জানান।

সভায় এক প্রস্তাবে সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃত শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া বাংলাদেশ নৌয়ান শ্রমিক ফেডারেশন আহুত ১১ দফা দাবিতে আগামী ২৬ মে দিবাগত রাত ১২.০১ টা থেকে কর্মবিরতির প্রতি একাত্নতা প্রকাশ করে নৌ-শ্রমিকদের ন্যায় সঙ্গত দাবি মেনে নেওয়ার জন্য মালিক ও সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

সভায় উপস্থিত শ্রমিকদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কুলাউড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক আশিক খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হারুনুর রশিদ ভূইয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি নির্বাচন করা হয়। কমিটির নেতৃবৃন্দকে শপথ বাক্য পাঠন করান বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com