কুলাউড়ায় পিডিবি’র ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল পাল্টাপাল্টি মামলা

September 28, 2016,

ইমাদ উদ দীন॥ বিদ্যুতের ভৌতিক বিল নিয়ে একজন গ্রাহক ও কুলাউড়া পিডিবির কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি মামলা। লোকমুখে এ ঘটনাটি চাউর হওয়ায় এ নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে গ্রাহকদের মধ্যে। এমনিতে কুলাউড়া পিডিবি অফিসের বিরুদ্ধে ভৌতিক বিল নিয়ে স্থানীয় গ্রাহকদের অভিযোগ ও ক্ষোভের অন্তনেই। তারপর এমন ভৌতিক বিল দিয়ে গ্রাহকে হয়রানীর পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় গ্রাহকদের মধ্যে। অভিযোগ উঠেছে কুলাউড়ায় লক্ষিপুর কাদিরবক্স (র) মাজারে ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার পর তা না পরিশোধ করাতে বিল বকেয়া এবং সংযোগ অবৈধ দেখিয়ে মামলা দেন কুলাউড়া পিডিবি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এদিকে ভূক্তভোগী মাজারের মতাওয়াল্লী রুশন আলী অবৈধ ভৌতিক বিল থেকে পরিত্রাণের জন্য বিদ্যুৎ বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেন। এতে কর্তৃপক্ষ কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা মামলার হয়রানী ও ভৌতিক বিল থেকে বাচঁতে রুশন আলী নিজে বাদী হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলা জজ কোর্টে পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (সিলেট), নির্বাহী প্রকৌশলী কুলাউড়া, উপ সহকারী কুলাউড়া, আবাসিক প্রকৌশলী কুলাউড়া, তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী পওস সার্কেল মৌলভীবাজারসহ ৫জনকে বিবাদী করে করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৩৬/২০১৬ইং(স্বত্ব)। ভূক্তভোগী গ্রাহকের লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কুলাউড়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর এলাকায় কাদিরবক্স (র) মাজারে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে মাজারের মোতায়াল্লী রুশন আলীর নামে মিটার নং ০৫১০৪৬ ও কনজ্যুমার নং ৪৬১৬০৭৪৫ এ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে কোন বিদ্যুৎ বিল গাহকের নিকট প্রদান করা হয়নি ও মিটার রিডিংয়ের জন্য কেউ যোগাযোগও করেন নি। অতচ চলতি বছরের মার্চ মাসে গ্রাহকের মিটার রিডিং না দেখেই অনুমান নির্ভর সর্বমোট ব্যবহৃত ইউনিট ৩৪,৭৬৫ ও মে মাসে সর্বমোট ব্যবহৃত ইউনিট ৩৫,৪১৫ দেখিয়ে ভৌতিক বিল প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ৬ জুন কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান বকেয়া বিলের জন্য গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ও এনালগ মিটারটি জব্দ করেন।ওই সময় তিনি জব্দকৃত মিটারটিতে মোট ১০,৮৯৯ ইউনিট ব্যবহৃত হয়েছে উল্লেখ করে তার স্বাক্ষরিত একটি রিসিভ কপিও গ্রাহককে প্রদান করেন। সর্বশেষ আবারও অনুমান নির্ভির হয়ে ওই গ্রাহকের ব্যবহৃত ইউনিট ৩৫,৬৬৫ দেখিয়ে ১ লাখ ৮১ হাজার ১৬৯ টাকা জুন মাসের আরেকটি বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হয়। এদিকে ওই বছরের ৩১ জুলাই ভৌতিক বিলসহ বকেয়া বিল প্রদান না করায় ও অবৈধ বিদ্যু সংযোগ ব্যবহার দেখিয়ে সিলেট বিদ্যুৎ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করা হয় গ্রাহক রুশন আলীর বিরুদ্ধে। ভূক্তভোগী রুশন আলী অভিযোগ করে বলেন, বিদুৎ সংযোগ নেয়ার পর বিদ্যুৎ অফিস থেকে কেউই কোনদিনই মিটার চেক করতে আসেননি এবং কোন বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হয়নি। এ বছরের মার্চ ও মে মাসের দুটি বিল প্রদান করা হয়। কোন প্রকার নোটিশ প্রদান না করেই আকস্মিকভাবে জুন মাসের ৬ তারিখ উপসহকারী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান মাজারে এসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন এবং মিটারে ১০৮৯৯ ইউনিট ব্যবহৃত হয়েছে এমনটি লিখে তাঁর দস্তখত দিয়ে একটি কাগজ প্রদান করে মিটারটি খুলে নিয়ে যান। সংযোগ বিচ্ছিন্নের তিনদিন পর ওই মাসের ৯ তারিখ একটি নোটিশ প্রদান করেন। ভৌতিক বিলসহ বকেয়া বিল প্রদান না করায় ও অবৈধ বিদ্যু সংযোগ ব্যবহার দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে সিলেট বিদ্যুৎ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন কুলাউড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান। অতিরিক্তি বিল কর্তন করে মূল বিল প্রদান করার জন্য কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিলেট বিভাগীয় প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এর কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সর্বশেষ আমি জেলা জজ কোর্টে মামলা দায়ের করেছি। এ ব্যাপারে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, বকেয়া বিল প্রদান না করায় মাজারের বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এসময় মিটারে গ্রাহকের ব্যবহৃত ইউনিট ১০,৮৯৯ ছিলো। আমি কয়েক মাস আগে এখানে যোগদান করেছি তাই কিভাবে অতিরিক্ত বিল প্রদান সম্পর্কে কিছু জানিনা। তবে এই অতিরিক্ত বিল প্রদান কোনভাবেই কাম্য নয় দাবী করে তিনি বলেন অতিরিক্ত বিল কর্তন করার ব্যাপারে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হিসাব নং ডি ৪২৭, ডায়েরী নং  ৫২৭/ ০৫.০৯.১৬ইং রিপোর্ট এর মাধ্যমে সুপারিশ করেছি। এখন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এবিষয়ে জানতে কুলাউড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান ও মোজ্জাফর হোসেনের মুঠোফোনে একাধীকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস মুঠোফোনে মানবজমিন কে বলেন বিষয়টি সম্পর্কে আমি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেব। তবে গ্রাহকে তিনি তার মিটার রিডিং অনুযায়ী বিলটি দেওয়ার অনুরোধ করে বলেন যে হেতু গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটি একজন পীর সাহেবের মাজার হওয়ায় বিষয়টি আমাদের সকলের জন্য স্পর্শকাতর। তিনি সময়মত বিদ্যুৎ বিল আদান প্রদানে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেতন হওয়ারও অনুরোধ করেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com