কুলাউড়ায় শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত ৩ জয়িতার বীরত্বের গল্প

কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ কুলাউড়া উপজেলায় ২০২২ সালে ৩ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন সুফিয়া রহমান ইতি, চম্পা বেগম ও রেখা রাণী দাস।
যারা নানা প্রতিকুলতাকে ডিঙিয়ে জীবন সংগ্রামে সফলতা অর্জন করেন। ধৈর্য্য, মেধা, কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজেরা হয়েছেন স্বাবলম্বী, সন্তানদের করেছেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত, অন্যদের পথ দেখিয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার। হয়েছেন সমাজ ও দেশের আত্মপ্রত্যয়ী নারীর দৃষ্টান্ত।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী সুফিয়া রহমান ইতি: সুফিয়া রহমান ইতি ছিলেন নিতান্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মেয়ে। বাবা ছিলেন স্বল্প বেতনভূক্ত সরকারী রেল কর্মচারী।
পিতার সামান্য আয়ে সংসারের চাকা সচল রাখতে রীতিমত হিমসীম খেতে হতো তার মাকে।৬ ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ যোগান দেয়া ছিল সুফিয়া রহমান ইতির পিতার কষ্টসাধ্য বিষয়। এর জন্য ভাই বোনদের কেউ কেউ প্রাইভেট টিউশনী করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন।
সুফিয়া রহমান ইতির ছোট বোন এসএসসি পাশ করার পর টাকার অভাবে যখন কলেজে ভর্তি হতে পারছিল না তখন তিনি স্থানীয় একটি বুটিক শপে চাকরী নেন এবং কিছু টাকা অগ্রীম নিয়ে বোনকে কলেজে ভর্তি করান। এভাবেই শুরু হলো তার পথচলা।
এরপর তিনি চাকরির পাশাপাশি সিলেট হতে বিউটিফিকেশনের উপর ১ বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ নেন। প্রথম দিকে তিনি বাড়িতেই বিউটিফিকেশনের কাজ শুরু করেন।
এরপর পরিচিতি বাড়লে কুলাউড়ায় মিলি প্লাজাতে দোকান ভাড়া নিয়ে বিউটি পর্লারের ব্যবসা শুরু করেন। এটাই ছিল কুলাউড়ার প্রথম কোন বিউটি পার্লার। এরপর তিনি বিউটিফিকেশনের উপর আরো কয়েকটি কোর্স সম্মন্ন করেন।
বর্তমানে তিনি একজন সফল ব্যবসয়ী। তার পার্লারে বেতনভুক্ত কয়েকটি মেয়ে নিয়মিত কাজ করে। তিনি দরিদ্র, বিধবা এবং স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়েদেরকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাকরী দিয়ে একদিকে যেমন সমাজসেবা করছেন, অন্যদিকে মেয়েদেরকে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন।
সুফিয়া রহমান ইতি তার ব্যবসা থেকে আয় করা টাকা দিয়ে দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন এবং নিজের বিয়ের সমস্ত খরচ নিজেই বহণ করেন। তিনি ধীরে ধীরে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালে ঢাকায় নিজের নামে একটি বিউটি পার্লার খুলেন।
এপর তিনি কুলাউড়ার দক্ষিণবাজার রোডে আরো একটি বিউটি পার্লার করেছেন। এভাবে তিনি অনেক অসহায় মেয়েকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছেন। তিনি তার উপার্জিত টাকা দিয়ে নিজের নামে কিছু জমি ক্রয় করেছেন।
সুফিয়া রহমান ইতি একজন বহুমুখি প্রতিভার দৃষ্টান্ত। তিনি ক্রিড়া এবং সংস্কৃতি অঙ্গনেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ১০০ মিটার, ২০০ মিটার দৌঁড়ে মৌলভীবাজার জেলায় চাম্পিয়ন হন।
তিনি নাচেও পারদর্শি, একজন সফল গার্লস গাইড। তিনি বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির একজন গর্বীত সদস্য।
তিনি কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নারী উদ্যোক্তা সাংগঠনিক সম্পাদক। নারীর ক্ষমতায়নে তার ভূমিকা অসামান্য। কুলাউড়ার মত একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী হয়েও সমাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা প্রসংশা যোগ্য। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসাবে তিনি সমাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সফল জননী নারী চম্পা বেগমের : কুলাউড়া উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম চম্পা বেগমের। অল্প বয়সে বিয়ে হয় একজন রিক্সা চালকের সাথে। বিয়ের পর কিছুদিন ভালই চলছিল। এরপর একে একে তার ৮ সন্তানের জন্ম হয়। সংসারে অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী।
স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন। কিভাবে তিনি তার সন্তানদের মানুষ করবেন? চিন্তায় ব্যাকুল থাকতেন। তিনি যখন যা পেরেছেন সেই কাজ করেছেন। কারো কথায় কান দেন নাই।
তিনি বিভিন্ন উপায়ে আয় রোজগার করে পরিবারের খাবার জুগিয়েছেন সাথে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াও চালিয়ে যান। তিনি কষ্ট হলেও তার ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন।
চম্পা বেগমের প্রথম সন্তান মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে এক্সিম ব্যাংকে অফিসার পদে কর্মরত। দ্বিতীয় সন্তান এইচএসসি পাশের পর ব্যবসা করছেন। তৃতীয় সন্তান বিএ কমপ্লিট করে প্রবাসে। ৩য় ও ৪র্থ ছেলে এইচএসসি অধ্যয়নরত।
চম্পা বেগম তার বড় এবং মেঝ মেয়েকে এসএসসি পাসের পর বিয়ে দিয়েছেন। ৩য় মেয়ে মাস্টার্সে পড়ছে। সমাজের লোকজন এখন চম্পা বেগমকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। একসময় যারা তাকে অবহেলা করেছিল, আজ তারাই চম্পা বেগমের থেকে পিছিয়ে।
সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন রেখা রানী দাস : একজন সমাজ সেবক হিসাবে রেখা রানী দাস এলাকার যে কোন সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক বিরোধী আন্দোলন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি সোচ্চার ভূমিকা রাখেন।
সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের সাথে এলাকার স্বল্প শিক্ষিত ও নিরক্ষর মহিলাদের সম্পৃক্ত করার কাজটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন। মানুষের প্রতি তার দরদ এবং ভালোবাসার স্বীকৃতি স্বরুপ এলাকাবাসী তাকে ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ইউপি সদস্য নির্বাচিত করেন।
ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সমাজসেবার মত বিষয়টি তার কাছে আরো সহজ হয়ে যায়। তিনি আরো বেশী করে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
তিনি এলাকার রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ ও উন্নয়নে জোড়ালো ভূমিকা রাখেন। করোনা কালীন সময়ে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন মাস্ক, স্যানিটাইজার।
গত বন্যার সময় মানুষের বাড়ী বাড়ী যেয়ে তাদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। আর এই ভাবেই তিনি সমাজসেবায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।
ইউটিউবে দেখুন পাতাকুঁড়ির ভিডিও গ্যালারি
মৌলভীবাজারে প্রেস কাউন্সিল সেমিনার ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজার পৌরসভার উদ্যোগে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে ভাড়াউড়া চা বাগানে মে দিবস পালিত
মন্তব্য করুন