কুলাউড়ায় ২য় বিবাহ করার এক গৃহবধু ৫ বছর ধরে এক ঘরে

April 26, 2016,

বিকুল চক্রবর্ত্তী॥ নিজের প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর ২য় বিবাহ করার কারনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় টপি দেবনাথ ও তার পরিবারকে ৫ বছর ধরে একঘরে করে রেখেছেন ঐ গ্রামের সমাজপতিরা। সমাজপতিরা তাকে শুধু এক ঘরে করেই ক্ষান্ত হয়নি তার নতুন স্বামীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে করেছেন গ্রাম ছাড়া। এমনকি তাকে ও তার ছোট ছেলেকেও দেয়া হয়না সার্বজনীন পূজা পার্বনে অংশ নিতে। নিরুপায় হয়ে তিনি আইনগত নোটিশ পাঠিয়েছেন গ্রাম্য মুরব্বিদের কাছে।

moulvi-topi-2

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিজলী গ্রামের মুক্তেশ্বর দেবনাথের মেয়ে টপি দেবনাথের বিয়ে হয় জেলার জুড়ি উজেলার দীঘলবাগ গ্রামের সত্যেন্দ্র দেবনাথের সাথে। বিয়ের ৫ বছরের মাথায় এক ছেলে রেখে তার স্বামী মারা যান। শশুর বাড়িতে নানা যন্ত্রনা সহ্য করে কিছু দিন থাকার পর  ছেলের ভবিষতের বিষয়টি চিন্তা করে বিকাশ মিত্র নামে এক ছেলেকে বিয়ে করে  বাবার বাড়িতে উঠেন টপি। কিন্তু বিধিবাম সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকা নিজের কাকাতো ভাই ও গ্রাম্য মুরব্বিদের আপত্তির মুখে পড়েন টপি এবং তার বাবার বাড়ির পরিবার।

moulvibazar.-topi-5

টপির মা প্রনতী রানী দেব নাথ জানান, সমাজকে না জানিয়ে ও বিধবা অবস্থায় বিয়ে করায় তার মেয়ে টপিকে ও তাদের পরিবারকে করা হয় এক ঘরে। নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয় মেয়ের নতুন স্বামীকে। আর তাকে চাপ দেয়া হয় শাখা সিঁদুর ফেলে দিতে।  বন্ধ করে দেয়া হয় সামাজিক আচার অনুষ্ঠান ও পূজাপার্বনে যাতায়াতও। এ বস্থায় তারা অনেকটা মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। অন্যদিকে বিপাকে পড়েছেন টপির এক মাত্র ভাই প্রানেশ দেব নাথ। বোন কে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার জন্য গ্রাম্য মুরব্বিদের রয়েছে চাপ।

 ৫ বছর ধরে গ্রাম্য বখাটেদের টিটকারী সহ্য করে দর্জীর কাজ করে কোন রকমে জীবন যাপন করে  আসছেন টপি। বর্তমানে টপি অনেকটা মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। তার ছেলে সুমিত দেবনাথ বড় হচ্ছে। সে এখন ৬ষ্ট শ্রেণীতে পড়ে। এক ঘরে থাকার কারনে তার ছোট ছেলের সাথেও গ্রামের লোকজন খুব একটা কথা বলেন না। অন্য দিকে এই অবস্থা চলতে থাকলে তার ভাইয়ের জন্য বিয়ের কোন সমন্ধও আসবে না।

moulvibazar.-topi

এ বস্থায় নিরুপায় হয়ে গ্রাম্য মুরব্বি বিশ্বজিৎ দেবনাথ, রঞ্জিত শর্মা, হীরা লালা দেবনাথ  ও কাকাতো ভাই অধির দেবনাথসহ গ্রাম্য মুরব্বিদের বিরোদ্ধে মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে আইনগত নোটিশ পাঠান তিনি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট কিশোরী পদ দেব  শ্যামল জানান, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এ সকল গ্রাম্য মুরব্বিদের কাছে সত্যতা জানতে চাইলে তারা টপি ও তার পরিবারকে দোষারোপ করেন এবং গ্রাম্য শালিশে না যাওয়ায় তাদের সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ করা হয় বলে স্বীকার করেন। তবে মানবাধিকার কমিশন তাদেরকে চাপ দিয়েছেন বিষয়টি দ্রুত সমাধানের। যদি সমাধান না হয় তাহলে মানবাধিকার কমিশন টপির হয়ে গ্রামের এ সকল মুরব্বিদের বিরোদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। এসময় মানবাধিকার কমিশনের জেলা সম্পাদক শাহীন আহমদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক বিকুল চক্রবর্ত্তীসহ প্রায় ১০ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন ।

vileger-lider

এ ব্যাপারে গ্রামের প্রধান মুরব্বি- বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও রঞ্জিত শর্মা জানান, তারা টপিকে এক ঘরে করেন নি। গ্রামের কাউকে না জানিয়ে বিধবাবস্থায় বিবাহ করায় তাকে পঞ্চাতের স্মরনাপন্ন হতে বলা হয়। কিন্তু তারা গ্রাম্য শালিশে না গেলে ষোল পনের এক মুরব্বি প্রাক্তন ইউপি সদস্য বর্তমানে প্রয়াত তিনি নির্দেশ দেন  তাদের ডাকে যেহেতু তারা আসেননি সে কারনে তারা তাদের সমাজের আচার অনুষ্ঠানে ডাকবেন না।

এ অবস্থায় বাবার বাড়ির আশ্রয়ে থাকা টপি নিজের ছেলেকে নিয়ে মুক্তভাবে চলতে সকলের সহায়তা চান।

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com