গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কর্মীসভা, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতি ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ
গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির কর্মীসভা থেকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির এই সময়ে আবার গ্যাস ও বিদ্যুত্যের মূল্য বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সংগঠনের ১ম জাতীয় সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শহরতলীর কালেঙ্গায় আয়োজিত এই কর্মীসভায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক দেলোয়ারা বেগম। কর্মীসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সুহেল আহমেদ, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলী, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি মৌলভীবাজার জেলা শাখার সদস্য নাইমা বেগম, সূর্যবানু বেগম, আকলিমা আক্তার, চন্দ্রবান বিবি প্রমূখ।
কর্মীসভায় বক্তারা বলেন দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতির এই সময়ে রমজান মাসকে সামনে রেখে চিনি, ছোলা, খেজুরসহ সকল নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন অতিষ্ট। সরকার প্রধান মজুতদার-আড়তদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে না তুলে মজুতদারকে গণধোলাই দেওয়ার কথা বলছেন। এরকম সময়ে নতুন করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা এবং আগামী মাস থেকে বিদ্যুতের মুল্য বৃদ্ধির ঘোষণা সাধারণ জনগণকে দিশেহারা করে তুলেছে। দেশে সকল জিনিসপত্রের মূল্য অব্যাহতভাবে বাড়লেও শ্রমিকের মুজরি বাড়ে না। তার উপর আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী শ্রমিকদের মজুরি পুরুষদের থেকে কম দেওয়া হয়। নারী অধিকার, নারীর ক্ষমতায়, নারী উন্নয়ন নিয়ে নানা রকম গালভরা বুলি শুনালেও দেশের অধিকাংশ নারীরা, বিশেষত শ্রমজীবী নারীগণ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা, মজুরি বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এমন কি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ভিকারুননেসা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী ধর্ষণের ঘটনার কারণে পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। এই ঘটনাগুলো দেশের সামগ্রিক নারীর নিরাপত্তাহীনতার দিকটি অতিক্ষুদ্র চিত্র। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের নেই কোন মজুরি কাঠামো, তেমনি নেই কর্মের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা। সম্প্রতি রাজধানীতে গৃহকর্মী হিসেব নিয়োজিত প্রীতি উরাং নামে একজন চা-শ্রমিক সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যুর মত করুণ ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের নারী সমাজ তথা শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সমস্যা-সংকট, শোষণ-লুন্ঠন, দুঃখ-কষ্ট, নিপীড়ন-নির্যাতনের কারণ হচ্ছে প্রচলিত নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থা। এর জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিকে উচ্ছেদ করা ছাড়া নারী মুক্তি অর্জিত হতে পারে না। এই সত্যকে আড়াল ও অস্বীকার করে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল শাসক-শোষক গোষ্ঠি ও এনজিওরা নারী পুরুষের মধ্যকার বিভক্তি বৃদ্ধি করে চলছে। এর বিরুদ্ধে দাড়িয়ে বাংলাদেশের নারী সমাজের দায়িত্ব নারী মুক্তির লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার, রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সাথে নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। কর্মীসভায় আগামী ০৮ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ১ম জাতীয় সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
কর্মীসভা থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো, সর্বস্তরে সর্বাত্মক রেশনিং চালু, সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থাসমূহের সাথে সম্পাদিত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী সংশোধিত শ্রমআইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, সমকাজে সমমজুরি ও কর্মক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ধর্ষণের সাথে জড়িতদের পাশাপাশি নারীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থদের শাস্তি প্রদান এবং চা-শ্রমিক সন্তান কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি এবং প্রীতি উরাংয়ের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ প্রদান করার দাবি জানানো হয়।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি
মন্তব্য করুন