চতুর্থ দফা বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হচ্ছে না কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ

December 31, 2023,

আব্দুর রব॥ কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্প কাজে সম্প্রতি কিছুটা গতি বাড়লেও চতুর্থ দফা বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হচ্ছে না রেলপথ পুনঃস্থাপনের কাজ। চলিত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে এই বর্ধিত মেয়াদ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়নি ৩০ শতাংশও। এরই মাঝে পঞ্চম দফা ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিন্দ সারনাল।
জানা গেছে, ব্রিটিশ-ভারত সরকার আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে ১৮৯৬ সালে চালু করে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশনটি। এটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় চালু থাকা এই রেলপথ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় একসময় ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০০৩ সালের ৭ জুলাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার লোকজন। রেলপথটির সংস্কার করে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে বিদ্যমান মিটার গেজ লাইন সংস্কারের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৭ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। পরবর্তী সময়ে এ প্রকল্পে যুক্ত হয় ভারত। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প অনুমোদনের ৬ বছর পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’-এর সঙ্গে সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। সে সময় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭৮ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ভারত এলওসির আওতায় ঋণ দেবে ৫৫৬ কোটি টাকা। বাকি ১২২ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।
এলওসি ঋণের শর্তানুযায়ী, ভারতীয় অর্থায়নের প্রকল্পের দেশটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই সুবাদে কাজ পায় ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’। প্রতিষ্ঠানটিকে অধিগ্রহণ করেছে আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টেক্সমাকো রেল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৮ সালের আগষ্টে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন। দুই বছর মেয়াদে ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও নানা অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ সম্পন্ন করেনি। এরপর চতুর্থ দফা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়েছে। এই বর্ধিত মেয়াদেও প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন সম্ভাবনা নেই। আগেভাগেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি আগামী বছরের (২০২৫) জুন পর্যন্ত পঞ্চম দফা মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্র্নিমাণ প্রকল্পের আওতায় ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৫১ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার রেললাইন হবে। এ সেকশনে গার্ডার ব্রিজ ১৭টি ও কালভার্ট ৪২টি পুনর্র্নিমাণ করা হবে। থাকবে আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা। একই সঙ্গে ৬টি স্টেশন ভবন এবং প্ল্যাটফর্ম পুনর্র্নিমাণ করা হবে।
সরেজমিনে গত এক বছর কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনে কচ্ছপ গতির কাজ চলতে দেখা গেলেও সম্প্রতি কাজের গতি বাড়তে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে ব্রিজ, স্টেশন ভবন ও প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের কাজ চলছে। তদারকি করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। প্রকল্প কাজের গতি বৃদ্ধিতে স্থানীয় জনসাধারনের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। তবে কবে নাগাত এই লাইনে ট্রেন চলাচল করবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোক্তভোগীরা।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক মো. সুলতান আলী বলেন, ‘নতুন করে চতুর্থ দফায় কাজের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমরা কাজটা দ্রুত আদায়ের চেষ্টা করছি। কিন্তু এই মেয়াদেও কাজ সম্পন্নে যতেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরেক দফা মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’ এর প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিন্দ সারনাল জানান, ‘করোনা ভাইরাস সহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক তিনি সাইট তদারকি করছেন। চলিত মেয়াদে সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারলেও আরেক দফা মেয়াদ বাড়াতে হবে। পঞ্চম দফায় ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com