চা শ্রমিকের মধ্যে উত্তেজনা, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে হিসাব না দিলে চাঁদাবাজীর মামলা করা হবে

বিকুল চক্রবর্তী॥ শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশী হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন হলেও বিরোধী পক্ষ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে অবস্থান থেকে সরে আসে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন ও সাধারণ চা শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ না করা, মালিক পক্ষের সাথে দ্বি বার্ষিক চুক্তিতে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন দাবীতে রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে শ্রীমঙ্গল জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামের পাশ থেকে “আমরা সাধারণ সদস্যরা” ভেনারে কয়েকশ চা শ্রমিক মিছিল করে মৌলভীবাজার সড়কস্থ বাংলাদেশ লেবার হাউজের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যায়।
সেখানে তারা ভিতরে প্রবেশ করে স্মারকলিপি দিতে চাইলে বর্তমান চা শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু সদস্য তাদের বাঁধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় উত্তেজনা। তাৎক্ষনিক শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে স্মারক লিপি প্রদানকারীদের পক্ষে সাত ভ্যালির সাতজন নেতাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
পরে তারা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি মাকন লাল কর্মকারের উপস্থিতিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিলিপ নায়েকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এ সময় লেবার হাউজের সামনে উত্তেজিত শ্রমিকরা বর্তমান কমিটির বিভিন্ন দুর্নীতি তুলে ধরে প্রতিবাদ সভাকরে বক্তব্যদেন। তারা বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৮ মাস আগে। তারা অবৈধভাবে সাধারণ শ্রমিকের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে সংগ্রহ করে মাসে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাত করছে।
অন্যদিকে মালিক পক্ষের কাছ থেকে সাধারণ শ্রমিকদের ১৯ মাসের এরিয়ার বিল ও আন্দোলনকালীণ সময়ের বিল আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনকারীদের পক্ষে শ্রমিকনেতা সেলিম হক বলেন, এরা শ্রমিকদের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নিজেদের পেট ভরছেন। সাধারণ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য এদের হঠাতেই তাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। তিনি বলেন, মালিক পক্ষের সার্থে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে যে দ্বি-বার্ষিক চুক্তি হয় তারা সেই চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে সাধারণ শ্রমিক বিগত আগষ্ট মাসে আন্দোলনে নামে।
এতে চা শিল্প ও চা শ্রমিক উভয়েরই ক্ষতি হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা সমাধান হয়। তিনি বলেন এখন পর্যন্ত ১৯ মাসের বকেয়া মজুরী উদ্ধারে তাদের ভূমিকা নেই। এ ছাড়াও প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। যার হিসেব দেয়া হয়না সাধারণ চা শ্রমিকদের। ১৫ জানুয়ারীর ভিতরে এর হিসাব না দিলে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর মামলা করা হবে।
চা শ্রমিক নেতা সীতা রাম অম্লীক বলেন, এরা ক্ষমতা লোভী। শ্রমিকদের রক্তে ঝড়া টাকায় ওরা নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। তিনি বলেন, চা শ্রমিক ইউনিয়নের পরিক্ষিত নেতা। যিনি এরকম একটি জায়গায় লেবার হাউজ করে দিয়েছেন। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের একটি প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছেন। সেই প্রবীণ চা শ্রমিক নেতা রাজেন্দ্র প্রসাদ বুনার্জীকে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে। এরাতো শ্রমিকের টাকা আত্মসাত করবেই।
এখন সাধারণ শ্রমিক স্বোচ্ছার হয়েছে । তাদের আর অবৈধভাবে সাধারণ শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ এবং লেবার হাউজ দখল করে রাখতে দেয়া হবেনা। পরে তারা একই দাবীতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে বিকেলে ৪টায় শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরেরও স্মারকলিপি দেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, আমরা সাধারণ চা শ্রমিকরা” নামে তারা একটি স্মারক লিপি গ্রহন করেছেন। তবে এ স্মারক লিপি প্রদান গণতান্ত্রিক পন্থা পরিপন্থি।
এ সময় চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা জানান, এরা রাজেন্দ্র প্রসাদ বুনাজীর দল। যারা তাদের আগে ৩৪ বছর চা শ্রমিক ইউনিয়নের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের মেয়াদ উর্ত্তিণ হয়েছে ঠিক কিন্তু মেয়াদ উত্তির্ণ হওয়ার পূর্বেই নির্বাচনের জন্য শ্রম অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছেন এবং নতুন নির্বাচন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমুতি রয়েছে।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, নির্বাচনী প্রকৃয়া চলছে অচিরেই সকল পক্ষের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক প্রকৃয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যা প্রকৃয়াধিন।
আন্দোলন কারীদের পক্ষে অপর নেতা গীতা কানু বলেন, তারা রাজেন্দ্র প্রসাদ বুনার্জীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তৎকালীণ বিএনপি সরকারের মদদে জোর করে লেবার হাউজ অবৈধভাবে দখল করে। বর্তমানে নির্বাচনবিহীন অবস্থায়ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সাধারণ চা শ্রমিকের টাকা আত্মসাৎ করছে। এদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজীর মামলা করা হবে।
মন্তব্য করুন