জুলেখা নগর চা বাগান ধংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত একটি মহল : মিথ্যা মামলা, জবর দখল, স্থাপনা ও গাছপালা বিনষ্টের অভিযোগ
![](https://i0.wp.com/www.patakuri.com/wp-content/uploads/2016/08/13921065_1090032184365223_2.gif?fit=800%2C445&ssl=1)
সাইফুল ইসলাম॥ একের পর এক মিথ্যা মামলা, জবর দখল, স্থাপনা ভাংচুর, চা গাছ ও ছায়াবৃক্ষ বিনষ্ট করে একটি উন্নয়নশীল চা বাগানকে ধংস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি মহল। এ অভিযোগ করেছেন শ্রীমঙ্গলের ব্যক্তি মালিকানাধীন এক চা-বাগান কর্তপক্ষ। বিভিন্ন ধরনের ঘটনা সাজিয়ে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে বলেও বাগান কর্তৃপক্ষ জানান।
সম্প্রতি এক খ্রিস্টান ধর্মযাজককে তাঁর বসত ভিঠা থেকে উচ্ছেদ এবং দত্তবস্তি গ্রামের আরও কিছু লোকের আনারস লেবু, অন্যান্য বনজ ও ফলদ গাছ কেটে নেয়ার যে অভিযোগ তার বির”দ্ধে আনা হয়েছে তা মিথ্যা এবং সাজানো বলে উল্লেখ করেছেন উল্লেখিত জুলেখা নগর চা বাগান কর্তপক্ষ।
বাগান কর্তপক্ষের পাল্টা অভিযোগ, কথিত খ্রিষ্টান ধর্মযাজক কিরন রোজারিও খ্রিস্টান মিশনারীতে ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত থাকা কালিন তার বির”দ্ধে আনীত অভিযোগে দোষী প্রমানিত হওয়ায় পদবী কেড়ে নিয়ে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তাদের অভিযোগ, ষড়যন্ত্রকারীরাই কিরন রোজারিওকে টাকার বিনিময়ে ভূয়া ধর্মযাজক সাজিয়ে প্রশাসন ও সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে এবং সরকরি লীজকৃত চা বাগানের জায়গা জবর দখল করে নিতে দীর্ঘদিন ধরে কথিত ক্রিস্টান পল্লী বানানোর পায়তারায় লিপ্ত ছিল।
জুলেখা নগর চা বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, অত্র এলাকায় খ্রিস্টানধর্মালম্বী কোন লোকজনের বসবাস না থাকার পরও শুধূমাত্র বাগান দখলের উদ্দেশ্যেই ভূমিখেকো শিল্প ধংসকারীরা নতুন নাটক সাজিয়ে ছিল।
এ ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
জুলেখা নগর চা বাগানের পরিচালক গুলশান আরা জানান, আশপাশের এলাকার এক শ্রেণির দুষ্কৃতিকারী রাতের আধারে চা বাগানের সেকশনে ঘাস খাওনোর উদ্দেশ্যে গর” ছেড়ে দেয়। এছাড়াও সেকশনের ভিতর ঢুকে চা-গাছের কুঁড়িসহ সবুজ পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যায় এবং ডালপালা ভেঙ্গে চা গাছের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। গর” অবাধে বিচরনের ফলে চা গাছ নষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই চা গাছে দেখা দেয়।
অভিযোগে আরও জানা যায়, গোপনে আতাঁত করে কিছু চা-শ্রমিকের মাধ্যমে বাগানের কীটনাশক, সারসহ মুল্যবান য›ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে যায়। প্রতিনিয়ত গাছ বাঁশসহ মূল্যবান জিনিষপত্র চুরি করছে একশ্রেণির দুস্কৃতিকারীরা। চা মৌসুমে শ্রমিকদের বেশী মজুরীর লোভ দেখিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিতে এক শ্রেণির অসৎ লোকেরা চা উৎপাদন ব্যাহত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় শ্রমিকদের রাতারাতি বিত্তবান হওয়ার লোভ দেখিয়ে অবৈধ পণ্য পাচারের কাজেও নিয়োজিত করার অভিযোগ রয়েছে। এতে এলাকার শ্রমিকদের মাঝে সবসময় আতংক বিরাজ করে বলে জানা যায়।
জুলেখা নগর চা বাগান কর্তৃপক্ষের বির”দ্ধে বার বার মিথ্যা মামলা দায়ের এবং বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ও নাটক সাজিয়ে বার বার তাদেরকে হেয় প্রতিপন্নসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে চা-বাগান শিল্প ধংস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। এছাড়াও শিল্পোদ্যোক্তারা এসব উদ্যোগ থেকে যাতে সরে আসে এ লক্ষ্যে এক শ্রেণির অসৎ লোকেরা তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে কাজ করে যাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।
জুলেখা নগর চা বাগান কর্তৃপক্ষের বির”দ্ধে দায়েরকৃত এধরনের একটি মামলায় অভিযোগের তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১নং আমলী আদালত মৌলভীবাজারের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক স্মারক নং-৩৫১, তারিখঃ ১০/০৯/১৯১৫খ্রি. বাদীর অভিযোগের তদন্তের জন্য আদিষ্ট হয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাাহী অফিসার শহীদুল হক অভিযোগে বর্ণিত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তিনি সরেজমিন তদন্ত, বাদী, বিবাদী, সাক্ষিগণের বক্তব্য ও রেকডৃপত্র যাচাই পূর্বক ৯ মার্চ ২০১৬খ্রি. আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যের আলোকে জানা যায়, বাদীর বক্তব্য ও বাদী পক্ষের সাক্ষীর বক্তেব্যের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
বাদীর অভিযোগে মারধরের ঘটনা উল্লেখ থাকলেও সাক্ষী তা অস্বীকার করেছে। এছাড়াও অভিযোগে বর্ণিত ঘটনার স্থান, সময়সহ বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার শহীদুল হক তদন্ত লিপিতে উল্লেখ করেন।
অভিযোগে উল্লেখিত বিরোধপূর্ণ ভূমিতে বহুকাল আগে থেকেই চা গাছ সৃজন করা রয়েছে বলে তদন্তে উল্লেখ রয়েছে, এখানে বাদী পক্ষের কোন দখল পাওয়া যায়নি এবং বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে কোন ধরনের বিরোধের প্রমানও পাওয়া যায়নি।
সার্বিক মন্তব্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজ্ঞ আদালতকে জানান, আদালতে দায়েরকৃত পিটিশন মামলা নং-২৩/২০১৫(শ্রীমঙ্গল) এর আরজিতে বর্ণিত বিবাদীগণ কর্তৃক বাদীকে মারধর করা, বাদীপক্ষের গাছপালা কাটা ও মালামাল লুটতরাজের অভিযোগের সত্যতা সরেজমিন তদন্তকালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। বাদীপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যের মধ্যে গড়মিল রয়েছে।
মূলত: মামলার সাক্ষীদের সাথে বিবাদীদের দীর্ঘদিন ধরে জুলেখানগর চা-বাগান ও আশপাশের সরকারী মালিকানাধীন ভূমির অবৈধ দখল ও দখল পুনর”দ্ধারের প্রচেষ্ঠা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।
জুলেখা নগর চা বাগানের পরিচালক গুলশান আরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, একের পর এক মিথ্যা মামলা, জবর দখল, স্থাপনা ভাংচুর, চা গাছ ও ছায়াবৃক্ষ বিনষ্ট করে একটি উন্নয়নশীল চা বাগানকে ধংস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি মহল। বিভিন্ন ধরনের ঘটনা সাজিয়ে বার বার তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন ও হয়রানি করাসহ সরকারকের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।
শিল্পোদ্যোক্তা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা এসব উদ্যোগ থেকে যাতে সরে আসে এ লক্ষ্যে একটি অসৎ চক্র তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন জানান।
মন্তব্য করুন