জুড়ীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন বন্যা ও ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কায় কৃষকরা

জুড়ী প্রতিনিধি॥ অনুকুল আবহাওয়া ও পোকা মাকড়ের আক্রমন তেমন না থাকায় মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎসবমূখর পরিবেশে মাঠ থেকে কৃষকরা হাসি মুখে পাকা বোরো ধান বাড়িতে তোলছেন। তবে বন্যা ও ঝড়-বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে যেতে পারে পুরো হাওরের বোরো ধান। এমন উদ্বেগ উৎকন্ঠার সাথে রোযা ও করোনা। এই অবস্থায় কৃষকরা কষ্টের ফসল মাঠে ফেলে রাখতে চান না। হাওরের পাকা ধান গোলায় তোলতে মরিয়া হয়েছেন তাঁরা। এমন প্রতিকুলতাকে মোকাবেলা করেই এশিয়ার বুহত্তম হাওর হাকালুকি পাড়ে চলছে উৎসবমূখর পরিবেশে বোরা ধান কাটা। তবে ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্কটের পাশাপাশি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেশি হওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ৫ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৬ হেক্টর। কৃষকরা ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান বেশি আবাদ করেছেন। উপজেলায় প্রণোদনা পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার কৃষককে হাইব্রিড ধান বীজ দিয়ে সহায়তা করা হয়। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার মেশিন) ফসল কর্তন ও সংগ্রহে কৃষকদের ব্যাপক সুবিধা হয়েছে।
২৭ এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ফসল কর্তন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের সাথে উঠান বৈঠক, মাঠ দিবস, মাঠ স্কুল ও গ্রুপ মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর ফলে গতবারের চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষি অফিস এ বছরের বোরো ধান থেকে ২১ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে।
সরেজমিন উপজেলার বেলাগাঁও, জাঙ্গীরাই, নয়াগ্রাম, শিমুলতলা, খাকটেকা, ভূয়াই, দিগলবাগসহ হাকালুকি হাওরে গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ধান কাটা, ধান মাড়াই, ধান শুকানোসহ বোরো ধান নিয়ে কুষকদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। রমযান মাস হওয়ায় কৃষক নিজে ধান কাটতে পারলে সেই ধান জমি থেকে মাড়াই করার স্থানে আনতে শ্রমিক ব্যবহার করতে হয়। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন নারী ও শিশুরা। পুরুষরা ধান কাটছেন এবং পাশের খালি জায়গায় রাখছেন। একদল পুরুষ ধান মেশিনে মাড়াই করছেন। আর পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এই ধানগুলো খলায় নিয়ে শুকানোর কাজ করছেন। পরে এই ধানগুলো ঠেলা ও ট্যাক্টরযোগে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন একদল কৃষক।
বোরো ধান আবাদকারী কৃষক এরশাদ আলী বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বোরো ধান চাষে আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছি। এছাড়া এবার ধানের দাম ভালো হওয়ায় আমরা খুব খুশি। তবে আগাম বন্যা ও ঝড়-বৃষ্টি সহ চলমান করোনা ভাইরাসে শ্রমিক সংকটে আমরা কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
বোরো ধানের আবাদ সম্পর্কে মাঠে কথা হয় উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মুহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় উপজেলার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আমরা প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বোরো ধান কর্তন সরেজমিন পরিদর্শন করছি। আশা করছি আগামী কিছুদিনের মধ্যে কৃষকরা তাদের সোনার ফসল সম্পূর্ণভাবে ঘরে তুলতে পারবেন। তবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে হাওরের বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে ফসল যেন নষ্ট না হয় সে জন্য বোরো চাষিদের দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য আগাম সতর্কতা জানিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন